অ্যানথ্রাক্স একটি ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পশু ও মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বেড়েছে।
অ্যানথ্রাক্স Bacillus anthracis নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়। এই জীবাণু ‘স্পোর’ আকারে দীর্ঘদিন মাটিতে, পশুর চামড়া বা মৃতদেহে টিকে থাকতে পারে। সংক্রমিত পশুর সংস্পর্শে আসলে বা অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা মাংস খেলে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, অ্যানথ্রাক্স তিনভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে—
ত্বকের মাধ্যমে (Cutaneous Anthrax): আক্রান্ত পশুর চামড়া বা পশুপণ্য স্পর্শ করলে জীবাণু ত্বকে প্রবেশ করে। ফলে ফোস্কা, কালো দাগ ও ব্যথা হয়।
শ্বাসনালী দিয়ে (Inhalation Anthrax): বাতাসে থাকা জীবাণু ফুসফুসে ঢুকলে এটি ঘটে। এটি সবচেয়ে মারাত্মক রূপ।
খাবারের মাধ্যমে (Gastrointestinal Anthrax): অপর্যাপ্তভাবে সিদ্ধ মাংস খেলে জীবাণু অন্ত্রে প্রবেশ করে এবং রক্তক্ষরণসহ ডায়রিয়া, বমি হয়।
অ্যানথ্রাক্স ছড়ায় মূলত সংক্রমিত পশুর রক্ত, মাংস, চামড়া বা হাড়ের সংস্পর্শে।
মৃত পশু সঠিকভাবে পোড়ানো বা পুঁতে না রাখলে, জীবাণু মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং দীর্ঘদিন সক্রিয় থাকে। এছাড়া অপরিশোধিত চামড়াজাত পণ্য থেকেও জীবাণু ছড়াতে পারে।
মানুষের ক্ষেত্রে অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ—
ত্বকে কালো দাগ, ফোস্কা বা ঘা
জ্বর, মাথাব্যথা, দুর্বলতা
শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা (ফুসফুসে সংক্রমণে)
বমি ও ডায়রিয়া (খাদ্যজনিত সংক্রমণে)
পশুর ক্ষেত্রে দেখা যায়—
হঠাৎ মৃত্যু
নাক-মুখ দিয়ে রক্তপাত
জ্বর, শ্বাসকষ্ট, চলাচলে অনীহা
দুধ উৎপাদন কমে যাওয়া
স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে, সচেতনতা ও টিকাদানই অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি।
গবাদিপশুকে নিয়মিত অ্যানথ্রাক্স টিকা দেওয়া।
মৃত পশু পোড়ানো বা গভীরে পুঁতে ফেলা।
অপরিশোধিত চামড়াজাত পণ্য ব্যবহার না করা।
মাংস ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া।
সংক্রমিত পশুর সংস্পর্শে এলে হাত ও কাপড় ভালোভাবে ধোয়া।
সন্দেহ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
অ্যানথ্রাক্সের প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে দেরিতে শনাক্ত হলে এটি জীবনঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
অ্যানথ্রাক্স এমন এক রোগ যা মানুষ ও পশু উভয়ের জন্য বিপজ্জনক। তবে সচেতনতা, টিকা কার্যক্রম ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, “অ্যানথ্রাক্স রোধে সবচেয়ে বড় ওষুধ হলো—সচেতনতা।”
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com