মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। সোমবার সকালেও এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত ছিল। দিনের শুরুতেই তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৪ ডলার পর্যন্ত বেড়ে যায়।
রয়টার্স জানিয়েছে, আজ ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১.১২ ডলার বা ১.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫.৩৫ ডলারে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের মূল্য ১.১০ ডলার বা ১.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪.৮০ ডলারে। উল্লেখযোগ্যভাবে, শনিবারও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ৩ শতাংশ বেড়েছিল।
ইসরায়েল কর্তৃক ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় বিমান হামলার পর শুক্রবার হঠাৎ করেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম ১৩ শতাংশ পর্যন্ত লাফিয়ে বেড়ে যায়। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
২০২২ সালের মার্চের পর এটি ছিল এক দিনে তেলের দামের সবচেয়ে বড় উত্থান। শুধু গত সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের মূল্য প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। একে অপরের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার এই সংঘাতের মধ্যে আপাতত কোনো শান্তিপূর্ণ সমাধানের ইঙ্গিত নেই।
এমন পরিস্থিতিতে ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির এক জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা। গোল্ডম্যান স্যাকস-এর মতে, বিশ্বে সরবরাহকৃত তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই গুরুত্বপূর্ণ প্রণালিপথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। যদি এটি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তবে, অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরানের পক্ষে এই প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ করা বাস্তবে কঠিন। বাহরাইনে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর সেখানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। RBC Capital Markets-এর বিশ্লেষক হেলিমা ক্রফট মনে করেন, ইরান হয়তো সরাসরি প্রণালি বন্ধ না করে ট্যাংকারে হামলা কিংবা মাইন পেতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বৈশ্বিক বাণিজ্য রুটে বিশাল ব্যাঘাত ঘটবে। এতে আমদানি ও রপ্তানির সময় এবং ব্যয় দুই-ই বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের মতো রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য এটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে রপ্তানিচুক্তি বাতিল হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে।
এই সংঘাত এমন সময় শুরু হয়েছে, যখন বৈশ্বিক অর্থনীতি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি সংক্রান্ত হুমকির কারণে বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমছে, ভোক্তা ব্যয় ও ব্যবসায়িক খরচ বাড়ছে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়ছে।