একই দিনে এক পরিবারের সাত সদস্যের জন্য খোঁড়া হয়েছে সাতটি কবর। জানাজা শেষে সবাইকে নিজ নিজ কবরে শুইয়ে দেওয়া হবে—এই প্রস্তুতি চলছে এখন। হৃদয়বিদারক এই ঘটনায় বাকরুদ্ধ পরিবারটি আর স্তব্ধ পুরো এলাকা।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) গভীর রাতে ওমান থেকে ফিরে আসেন লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম চওপল্লী গ্রামের বাহার উদ্দিন। তাকে আনতে গিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছিল তার পরিবার। কিন্তু বাড়ি ফেরার পথে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তার পরিবারের সাতজন সদস্য।
বুধবার (৬ আগস্ট) ভোরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাড়ির রাস্তার মাথায় হায়েস মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খালে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই সাতজন মারা যান।
বাহার উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, “চালকের ঘুমের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। গাড়িটি ধীরে চালানোর অনুরোধ করলেও চালক তা মানেননি। আমি বলেছিলাম ভোরে রওনা দিতে, কিন্তু চালক কথা শোনেননি।”
নিহত সাতজন হলেন:
-
বাহার উদ্দিনের মা মোরশিদা (৫৫)
-
স্ত্রী কবিতা (২৪)
-
মেয়ে মিম (২)
-
নানি ফয়জুন্নেছা (৮০)
-
ভাবি লাবনী (৩৩)
-
ভাতিজি রেশমী (৮)
-
ভাতিজি লামিয়া (৯)
নানী ফয়জুন্নেছার দাফন হবে তার নিজ গ্রামের বাড়িতে, আর বাকি ছয়জনের কবর খোঁড়া হয়েছে পশ্চিম চওপল্লী গ্রামে।
দুর্ঘটনার পর স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস মরদেহগুলো উদ্ধার করে। গাড়িটি খালের পানিতে সম্পূর্ণভাবে ডুবে গিয়েছিল বলে জানান উদ্ধারকারীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, বাহার উদ্দিন, তার শ্বশুর ও আরও দুইজন দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছেন। তাদের মধ্যে বাহার বাড়ি ফিরেছেন, বাকিরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বাহার উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “তিন বছর পর দেশে ফিরলাম। সবাই আমাকে নিতে এসেছিল। এখন কেউ নেই। আমি একা হয়ে গেলাম।”
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি মো. লিটন দেওয়ান জানান, রেকার দিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং আর কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনায় পুরো পশ্চিম চওপল্লী গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এক পরিবারের সাতজনের মৃত্যুতে মাতম আর কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস।