শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমি ব্যবহারে প্রত্যেক উপজেলায় মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) করার জন্য বার বার তাগিদ দিয়েছেন। সর্বশেষ গত ২৭শে নভেম্বর (সোমবার) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকেও তিনি এ নির্দেশনা প্রদান করেন। সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়েও এসব কথা তুলে ধরেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে নির্দেশনা এসেছে, ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেক উপজেলায় যেন মাস্টারপ্ল্যান থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে যেন এটি সম্পন্ন হয়। যত্রতত্র যেন ঘরবাড়ি বা শিল্প-কারখানা স্থাপন কিংবা অন্য কোনোভাবে যেন কৃষি জমি ব্যবহার না হয়, সে দিকে উঁনি নজর রাখতে বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, এটি হয়ে গেলে ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশে একটা শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
এর আগে গত অক্টোবর মাসে বাসস পরিবেশিত আরেকটি খবরে বলা হয়েছে যে, দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার জন্য আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ফসল ফলাব নিজের খাবার নিজেরা খাব, কেনাকাটা বা অন্য খরচ না হয় আমরা একটু কমই করব।’
প্রধানমন্ত্রী কৃষি জমি সংক্রান্তে গত ১৫ বছরে দেশবাসীর কাছে একই আহ্বান জানিয়ে আসছেন হর-হামেশাই। ২০২২ সালের ১১ই এপ্রিলে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। এর ধাক্কাটা আমাদেরও লাগবে। আমার অফিসে যারা কাজ করেন তাদের পক্ষ থেকে এবং যারা বেসরকারি খাতে আছেন তাদের সবাইকে বলব- আমাদের দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।’
বৈশ্বিক খাদ্য সংকট থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখতে আবাদযোগ্য প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলাতে দেশবাসীর প্রতি আবারও জোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিজ কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালেও এমন কথা ফের বলেছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীতে খারাপ দিন আসবে। খাবারের অভাবটা ব্যাপকভাবে দেখা দেবে, খাদ্য ঘাটতি হবে। সে জন্য আমি সব সময় বলে আসছি যে, যার যতটুকু জমি, দরকার হলে ছাদ বাগান থেকে শুরু করে নিজের খাদ্যটা নিজে উৎপাদন করবেন। অর্থাৎ খাদ্যে যেন আমরা সবসময় স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারি। খাদ্যাভাবের ওই ধাক্কাটা যেন আমাদের দেশে না আসে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘যার পুকুর আছে তিনি মাছ চাষ করুন। ধান, তরিতরকারি, নিদেনপক্ষে একটা কাঁচামরিচ গাছ হলেও লাগান। সবাইকে কিছু না কিছু করতেই হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কথাও উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘করোনা, তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ; এই দুটো মিলে তৃতীয় হয়তো আরেকটি ধাক্কাও আসতে পারে। যে কারণে আমাদের নিজেদের ব্যবস্থাটা নিজেদেরকেই করতে হবে।’
তাছাড়া, বৈশ্বিক নানামাত্রিক পরিস্থিতিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে, ঠিক ওই সময়টায় দেশে পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ ঘটানোর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে সতর্ক করেছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামী ফেব্রæয়ারি-মার্চের দিকে দেশে পরিকল্পিতভাবে দুর্ভিক্ষ ঘটানোর চেষ্টা করা হতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রীর এ কথার পক্ষে সায় দেননি দেশের অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটানো সম্ভব নয়।
গত ৮ই ডিসেম্বর (শুক্রবার) গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বিএনপি) এতদিন বলেছে নির্বাচন হতে দেবে না। এখন যখন মনে করছে নির্বাচন হয়ে যাবে; তাহলে কী করা যাবে? আগামী ফেব্রæয়ারি-মার্চ মাসের দিকে বাংলাদেশে এমন অবস্থা করবে, দুর্ভিক্ষ ঘটাবে। এটা হচ্ছে তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা। এর সঙ্গে বিদেশি প্ররোচনাও আছে। যেভাবেই হোক দুর্ভিক্ষ ঘটাতে হবে।’
অবশ্য, তার আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডবিøউএফপি) সতর্ক করে বলেছিল, ২০২৩ সালে বিশ্বের ৪৫টি দেশে তীব্র খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এরপর থেকে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এ বিষয়ে সতর্ক করে আসছিলেন। তিনি কোনো ভূমি খালি না রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, বাড়ির আঙিনায় কিংবা বাইরে- যেখানেই খালি জায়গা আছে, সেখানেই চাষাবাদ করুন।
অবশ্য, কোনো দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় খাদ্য ঘাটতির কারণে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পর্যাপ্ত খাদ্যের মজুদ রয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ১০ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ রয়েছে ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯২ মেট্রিকটন। এর মধ্যে চাল রয়েছে ১২ লাখ ১৮ হাজার ২০১ মেট্রিকটন, গম ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮১ মেট্রিকটন এবং ধান ১ হাজার ২১৮ মেট্রিকটন। সামনে বোরো মৌসুম। তখন মজুদ আরও বাড়বে।
এছাড়া, ২০২২ সালের ৮ই নভেম্বর (মঙ্গলবার) তারিখে দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনাবাদি জমি খুঁজে বের করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকেও নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সহায়তা নিয়ে অনাবাদি জমি খুঁজে বের করে আবাদযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। ওইদিন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা প্রদান করেন।
এর আগে, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্ব খাদ্য দিবসেও দেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা কৃষি জমি সংরক্ষনের কথা বলেছিলেন। আবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শিল্প মেলা-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও তিনি এসব কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যেখানে সেখানে শিল্প কারখানা স্থাপন করে কিছুতেই কৃষি জমি নষ্ট করা যাবে না।’
অথচ, সরকারের এতসব আদেশ-নির্দেশ অমান্য করে এক শ্রেনীর মানুষজন কর্তৃক তাদের খেয়াল খুশী মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্রে কৃষি জমির উপর নতুন নতুন বাড়ি-ঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের যেন হিড়িক চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে আশঙ্কাজনক হারে ফসল উৎপাদনের মতো আবাদী জমি হ্রাস পাচ্ছে। এহেন প্রতিযোগীতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি একটা বিরাট হুমকি স্বরূপ মনে করছেন দেশের বিশেষজ্ঞরা।
যেমন নিজের চোখের দেখা মতে, কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলায় ১৫/২০ বছর পূর্বেও ধানের মাঠের সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম চিত্র ছিল। নবাব ফয়জুন্নেছার স্মৃতি বিজড়িত আর ডাকাতিয়া নদী বিধৌত এই লাকসাম ও বর্তমান মনোহরগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন গাঁও-গেরামে আগে ফসল কাটার ধুম পড়ে যেতো। কিন্তু হায়! কালের আবর্তে আজ সবই স্বপ্নে রূপ নিয়ে চলেছে। এখন আর চোখে পড়েনা ফসলের সেই বিশাল মাঠ। জমি চাষে এখন হালের বলদের বদলে চলছে মাত্র স্বল্প সংখ্যক কলের নাঙ্গল শুধু! বর্তমানে গ্রামের কৃষকদের সেই সাত সকালে নাঙ্গল-জোয়াল কাঁধে নিয়ে মাঠে যেতে হয়না। আর কৃষানীকেও ভোরে উঠে পান্তা ভাত দিতে হয়না হাল চাষী কৃষককে। আগের গোবর সারের পরিবর্তে এখন যৎ সামান্য কৃষি জমিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে কেবল কৃত্রিম সার। যেখানে কোনো কোনো জমিতে বছরে উৎপাদিত হতো ৩/৪টি ফসল- সেই জমিতে এখন গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রকমের ঘর-দরজা এবং বিশাল অট্টালিকাও। মাঠের পর মাঠে এখন স্থাপন করা হয়ে যাচ্ছে বসতি। এতে করে অস্বাভাবিক মাত্রায় কমে যাচ্ছে আবাদী জমি।
কুমিল্লা জেলাধীন ১৩৫.৬১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের লাকসাম উপজেলায় ১০/১২ বছর আগেও আবাদী জমির পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ১০ হেক্টর। তম্মধ্যে, ১ ফসলী জমির পরিমাণ ছিল ৮৫৯ হেক্টর, ২ ফসলী জমির পরিমাণ ৩,৯০৯ হেক্টর, ৩ ফসলী জমির পরিমাণ ৬,০৮২ হেক্টর এবং ৪ ফসলী জমির পরিমাণ ১৬০ হেক্টর। এর মধ্যে উঁচু জমি ৭২৫ হেক্টর, মাঝারি উঁচু জমি ৯,১৬৫ হেক্টর এবং নিচু জমি ছিল ১,১২০ হেক্টর। তখন বোরো আবাদ হয়েছিল প্রায় ১০,০০০ হেক্টর জমিতে। রোপা আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো প্রায় ৭,৫০০ হেক্টর। সে সময় বছরে গমের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হেক্টর, অর্জিত হয়ে থাকতো ১৫ হেক্টর, সাদা আলু ও মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকত প্রায় ৯০/৯৫ হেক্টর জমিতে।
এছাড়া, অনেক জমিতে ভূট্টা, সরিষা, মসুর ডাল, মাসকলাই, মুগ ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ ও আখের আবাদও করা হতো। অথচ, বর্তমানে গোটা লাকসাম উপজেলায় আবাদী জমি যে রকম অস্বাভাবিক হারে কমছে- তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নি:সন্দেহে হুমকির মুখে পড়বে বলে অভিজ্ঞমহল ধারনা ব্যক্ত করেছেন। আবাদী জমি হ্রাস পাওয়ার একই অবস্থা দাঁড়িয়েছে পার্শ্ববর্তী বরুড়া, চৌদ্দগ্রাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট উপজেলা, নোয়াখালী জেলার সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, চাটখিল, বেগমগঞ্জ এবং চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি ও হাজিগঞ্জ উপজেলাতেও। এতে করে আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমি। যার যেমন খেয়াল-খুশী মতো ফসলের মাঠে গড়ে তুলছেন নতুন বসতি, ইটভাটা, পুকুর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আইন-কানুনের কোনো রকম তোয়াক্কা না করেই প্রশাসনের কোনো অনুমোদন না নিয়েই মানুষজন আ’জীবনের ফসলি জমির উপর বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে যাচ্ছেন অকাতরে। ব্যবহার করছেন ২/৩টা ফসলি জমিকেই। আইন-কানুনের কোনো তোয়াক্কা না করে এভাবে যার যার খেয়াল-খুশী মতোই ফসলের মাঠের মাঝখানেও অসংখ্য বাড়ি ঘর নির্মাণের যেন একটা হিড়িক পড়েছে। উপরে দেখা যাবে- আবাদযোগ্য কৃষি জমির উপর বসতি স্থাপনের নমুনা স্বরূপ গত সেপ্টেম্বর মাসের এমন কিছু চিত্র মনোহরগঞ্জ, সোনাইমুড়ি, চাটখিল ও শাহরাস্তি উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠ থেকে ক্যামেরা বন্দী করা হয়েছে। এতে করে এখন আর রামদেবপুর, মনিপুর, মোহাম্মদপুর বা আলিনকিপুর ইত্যাদি গ্রাম- কোন্’টা কোন্ গ্রাম; সেটা চেনা-জানার আর কোনো সহজ উপায় নেই। খরখরিয়া, গাজিয়াপাড়া আর বেতিয়াপাড়া; কোন্’টা কোন্ গ্রাম- চেনাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কারণ আগে গ্রামের আশে পাশে ফসলের জমির মাঠ ছিল। এখন সে রকম খোলা-মেলা পাঁথর-ক্ষেত নেই। নতুন নতুন বাড়ি-ঘরে একাকার হয়ে গেছে।
আর কৃষি জমির উপর এহেন অরাজকতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে হোল্ডিং নাম্বার ছাড়া কার গ্রাম কোন্ টা কিংবা মরহুম আনু মিয়া চেয়ারম্যানের বাড়ি কোন্’টা- তা আর চেনা জানারও কোনো উপায় থাকবেনা। কেয়ারী ভূঁইয়া বাড়ি বা খোনার বাড়ি ইত্যাদি- কোনো চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
অথচ, গত ১০/১৫ বছর যাবত কৃষি জমি সুরক্ষা আইনের কথা বলাবলি হতে থাকলেও তার কোনো রকম প্রয়োগ শুরু করা হয়নি কোথাও আজও। ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে বে-হিসেবে কৃষি জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। এভাবে প্রতি বছর কমে যাচ্ছে আবাদি জমি, কমে যাচ্ছে খাদ্যশস্যের উৎপাদনের মাত্রাও।
সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের (এসআরডিআই) সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের কৃষি জমি বিলুপ্তির প্রবণতা’ শীর্যক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সাল পরবর্তী ১২ বছরে দেশে প্রতি বছর ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে গেছে। শুধু অবকাঠামো নির্মাণ কাজেই প্রতি বছর অন্তত: তিন হাজার হেক্টর জমি বিলীন হচ্ছে।
কিন্ত, জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০ এবং কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন ২০১০ অনুসারে “কৃষি জমিকে কৃষি কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কোনো কৃষি জমি ভরাট করে বাড়িঘর, শিল্প-কারখানা, ইটভাটা বা অন্য কোনো অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।” অথচ, আইনটি শুধু নামেমাত্রই আছে; এর যথাযথ কোনো প্রয়োগে নেই।
বিভিন্ন এলাকায় বে-হিসেবে আবাদী জমি হ্রাস পাচ্ছে মর্মে শাহরাস্তি উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিজ্ঞ কৃষক নেতা জানান, দেশের কৃষি জমি বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে প্রধানত কয়েকটি কারণে। আর তা হলো- কৃষকের দূরদর্শিতার অভাব, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ, ভূমিখেকো ও অসাধু ইটভাটা মালিকদের আগ্রাসন। তিনি বলেন, কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন অনুযায়ী কৃষি জমি নষ্ট করে বাড়িঘর, শিল্প-কারখানা, ইটভাটা এবং অন্যান্য অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।
এ আইন অমান্য করলে কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে যাদের ৩ থেকে ৫ শতক কৃষি জমি আছে, তারা অপরিহার্য ক্ষেত্রে বসতবাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে আইনের বিধান অনুযায়ী ভূমি জোনিং মানচিত্র অনুযায়ী তা করতে পারবেন। কিন্ত মফস্বল এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দারা সরকারের এসব ভূমি ব্যবহার আইন-কানুনের কোনো তোয়াক্কা করছেন না। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগণও এ জন্য কোনো এ্যাকশন নিচ্ছেন না। ফলে মানুষজন অকাতরে তাদের খেয়াল-খুশী মতই কৃষি জমির উপর বাড়িঘর স্থাপন করে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, মনোহরগঞ্জ উপজেলার আনু মিয়া নিজের কেনা ফসলি জমিতে মাটি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন ১০ বছরের বেশি সময় আগে। বিনা অনুমতিতেই জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলেছেন তাঁর মতো আরো বহু মানুষ। এভাবে আইন ভঙ্গ করে বিনা বাধায় প্রতি বছরই শত শত একর ফসলি জমির উপর ঘর-দরজা স্থাপন করা হচ্ছে গোটা দেশের মতো কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জেও। অথচ, সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তাদের এহেন উদাসীনতার কারণে জমির ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন না করায় বিপুল রাজস্বও হারাচ্ছেন সরকার। তদুপরি নির্বিচারে কৃষিজমি ভরাটের কারণে অনেক জায়গায় বর্ষা ও সেচের পানি চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে।
প্রকৃতপক্ষে, দেশে ভুমি ব্যবহার ও ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইন প্রয়োগে বিধিমালা প্রসঙ্গে ভূমিসচিব মো. খলিলুর রহমান আবারও বলেছেন ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’ দেশের জনগণের সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়নের আইন। এই আইন-সংশ্লিষ্ট বিধিমালা এমনভাবে প্রণয়ন করা হচ্ছে, যাতে সংশ্লিষ্ট আইনটি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়।
গত ১৩ই ডিসেম্বর (বুধবার) সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিধিমালা, ২০২৩’ খসড়া চূড়ান্ত করতে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে উল্লেখিত কথাগুলো বলেন ভূমি সচিব খলিলুর রহমান। এ সময় ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকীসহ কর্মশালায় ভূমি মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাভুক্ত দপ্তর ও সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
ভূমিসচিব এ সময় আরও বলেন, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিধিমালা দ্রæত প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যেন সাধারণ মানুষ ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’-এর সুফল গ্রহণ করে ভূমিবিষয়ক ভোগান্তি থেকে দ্রæত পরিত্রাণ পেতে পারেন।
বলা বাহুল্য, দেশের কৃষি জমি সুরক্ষায় ২০০৯ সালে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে মর্মে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন’-এর খসড়া প্রণয়ন শেষে সেটি মতামতের জন্য ২০১৬ সালে ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করে ভূমি মন্ত্রণালয়। অথচ, বছরের পর বছরেও সেই খসড়া এখনো আলোর মুখ দেখেনি। একই লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে একটি বেসরকারি বিল আনা হলেও সেটিও সংসদীয় কমিটিতে পড়ে আছে।
মূলত: সরকারি তথ্য অনুযায়ী ১৯৮০ সালের দিকে দেশের মোট জমির মধ্যে কৃষি জমি ছিল ৬৫ শতাংশেরও বেশী। কিন্ত প্রায় ৪ দশকের ব্যবধানে ২০১৯ সালে এসে তা ৫৯ শতাংশেরও নীচে নেমে এসেছে। বর্তমানে দেশে চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি একর। তদুপরি, এর এক-চতুর্থাংশই এখন হুমকির মুখে বলে একাধিক বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় বার বার উঠে এসেছে ইতিমধ্যেই।
এখনে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, দেশে প্রতি বছরে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বৃদ্ধির কারণে দিনে ৫৫০ একরেরও বেশি কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এতে বছরে দেশের প্রায় ৮২ হাজার হেক্টর জমি কমছে, যা মোট জমির এক শতাংশ। এ ছাড়া বছরে নদীগর্ভেও বিলীন হচ্ছে গড়ে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমি। তদুপরি নির্মাণকাজের কারণেও বছরে বিলীন হচ্ছে তিন হাজার হেক্টর জমি প্রায়। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যমতে, বিগত ৩৮/৩৯ বছরে দেশের প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে শুধু নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ হয়েছে।
এহেন পরিপ্রেক্ষিতেই সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কৃষি জমির যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্ত এ সংক্রান্তে সর্বশেষ ২০২২ সালের নভেম্বরে খসড়াটি যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হলেও তাতে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তই আজও আলোর মূখ দেখেনি।
এছাড়া, ফসলি জমি রক্ষায় ১৫ বছর আগে ২০০৯ সালে কৃষিজমি সুরক্ষা আইন করার উদ্যোগ গ্রহণ কালে প্রথমে এর নাম ছিল ‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন-২০১০’। পরে নাম বদলে ‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন-২০১৫’ এবং ‘কৃষিজমি সুরক্ষা আইন-২০২১’ নামেও নামকরণ করা হয়। সর্বশেষ নামকরণ করা হয়েছে ‘ভূমির মালিকানা ও ব্যবহার আইন-২০২৩’ নামে।
তবে আইনের খসড়ায় বলা হয়েছিল যে, অপরিকল্পিত উন্নয়ন রোধ করে ভূমির শ্রেণি বা প্রকৃতি ধরে রেখে পরিবেশ ও খাদ্যশস্য উৎপাদন অব্যাহত রাখা, কৃষি জমি ও কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগিক সুবিধার সুরক্ষা ও ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করাই এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য। আইনটি পাস হলে কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের আওতায় সরকার দেশের সব জমির শ্রেণী নির্ধারণ করে দেবে। অর্থাৎ কোন এলাকার জমি কোন কাজে ব্যবহূত হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, আবাসন, নদী, সেচ, নিষ্কাশন, পুকুর, জলমহাল, মৎস্য এলাকা, বনাঞ্চল, সড়ক ও জনপথ এবং রেলপথ, হাটবাজার, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা, চা, উপকূলীয় অঞ্চল, পর্যটন এলাকায় ইত্যাদি- এ আইনের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বেসরকারি সদস্যদের বিল ও বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন তখন গনমাধ্যমে জানিয়েছিলেন যে, আবাদি জমি অন্য কাজে ব্যবহার বন্ধ করতে দেশে বলতে গেলে কার্যকর কোনো আইন নেই। এ জন্য ফসলি জমি রক্ষা করা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এহেন পরিস্থিতির কারণেই সেই ২০১১ সালে কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহারে একটি নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। এতে আবাদি কৃষিজমি বিনষ্ট করলে আইনে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এই আইন অমান্য করলে অনুর্ধ্ব দুই বছর জেল এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হবে বলে উল্লেখ ছিল। কৃষিজমি সুরক্ষার পাশাপাশি ভূমির যথেচ্ছা ব্যবহার রোধে এ আইন বলে জানিয়েছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় ভূমি জোনিং করে কৃষিজমির মানচিত্র তৈরির কথাও বলা হয়েছিল। অকৃষি জমিতে আবাসন-স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমির উর্ধ্বমুখী ব্যবহারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উপরে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন, ২০১৫’ নামে আইনটির খসড়া প্রণয়ন করেছিল ভূমি মন্ত্রণালয়। খসড়ার উপর মতামত নিয়ে তা অনুমোদনের জন্য দ্রæতই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুমোদনের জন্যও পাঠানো হয়েছিল। সেই আইনের খসড়ায় আরো বলা হয়েছিল, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে আবাসন, শিল্প-কারখানা বা রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য প্রতিনিয়তই ভূমির প্রকৃতি ও শ্রেণিগত ব্যবহারের পরিবর্তন ঘটছে। এর ফলে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমি, বনভূমি, টিলা, পাহাড় ও জলাশয় বা জলমহাল বিনষ্ট হয়ে খাদ্যশস্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ছে। ঘটছে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়ও। সেহেতু, নানা অপরিকল্পিত উন্নয়ন রোধ করে ভূমির শ্রেণি বা প্রকৃতি ধরে রেখে পরিবেশ ও খাদ্যশস্য উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং কৃষিজমি ও কৃষিপ্রযুক্তির প্রায়োগিক সুবিধার সুরক্ষাসহ ভূমির পরিকল্পিত এবং সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাই এমন আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল।
উল্লেখ থাকে যে, ২০১৬ সালের কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের (খসড়া আইন)-৪ ধারায়ও বলা হয়েছিল যে, কৃষিজমি ভরাট করতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এই আইনের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে ফসলি জমি ভরাট করা হচ্ছে। বিভিন্ন গ্রামে ফসলি জমিতে বাঁধ, ড্রেজার দিয়ে মাটি ভরাট করে বসতভিটা নির্মাণ করা হচ্ছে। বছরের পর বছর এই অবস্থা চলে এলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তারা তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
এছাড়া, কৃষিজমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও অনুমতি নেয়ার বিধান রয়েছে। অথচ সেই বিধানও মানছেন না কেউ। নিজেদের ইচ্ছা মতো কৃষিজমিতে বাঁধ দিয়ে বালু ফেলে বা আরেকটা জমি পুকুর করে মাটি কেটে এনে আবাদী জমি ভরাট করা বাড়ি ঘর করা হচ্ছে অকাতরে। এতে করে অল্প দিনের মধ্যেই কতেক এলাকায় এক সময়ের কৃষি জমির কোন স্মৃতি-চিহ্নই হয়ত আর থাকবে না! কৃষি জমি সুরক্ষা আইন কার্যকর না থাকায় এভাবেই বেহাত হচ্ছে ভূমি। সারাদেশের চিত্র ঠিক একই। যার যেমন ইচ্ছামতোই জমির ব্যবহার বাড়ছে।
অথচ, গত ১৫ বছরে কৃষিজমি সুরক্ষার এই আইনটির খসড়া নিয়ে পর্যালোচনা করে আরো তিনবার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। অবশেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আইনটি সংযোজন ও বিয়োজন করে নতুন নামে ‘ভূমির মালিকানা ও ব্যবহার আইন-২০২৩’ অনুমোদনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই বিলটি এখনো পর্যন্ত সংসদে পাস না হওয়ার কারণেই পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে গড়াচ্ছে। তবে একই বিষয়ে সংসদে একটি বেসরকারি বিল এসেছে। কৃষি জমি সুরক্ষায় আইন পাস ও কার্যকর হওয়া অত্যন্ত জরুরি বলেও তাতে উল্লেখ করা হয়েছিল।
প্রকাশ থাকে যে, বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিককালের এক প্রতিবেদনে আবারও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ২ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার একর বা ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ নানা কারণে প্রতিবছর প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে। প্রতিদিনই কমছে প্রায় ২১৯ হেক্টর আবাদি জমি। অপরদিকে, পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং কৃষি বিভাগের মতে, বছরে কৃষিজমি কমছে ৬৮ হাজার ৭০০ হেক্টর অর্থাৎ দিনে কৃষিজমি কমছে ১৮৮ হেক্টর।
সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের কৃষিজমি বিলুপ্তির প্রবণতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনেও একই তথ্য রয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে মোট আবাদি জমি রয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে তিন ফসলি জমি ১৮ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর।
আসলে সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, আধুনিকতার কারণে দিন দিন বদলে যাচ্ছে দেশের মানুষ। নগরায়ন ও শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশসহ বিভিন্ন কারণে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে অকাতরে একক পরিবার হচ্ছে। ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আন্তরিকতা, মমতা, স্নেহ ও ভালোবাসা কমে আসছে। এসব কারণে শহর তো দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামেও অনেক কম সংখ্যক যৌথ পরিবারই টিকে আছে। সন্তানরা বৈবাহিক সম্পর্কে জড়ানোর অল্পকিছু দিনের মধ্যেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বামী-স্ত্রীর একক পরিবার গড়ে তুলছেন। ফলে যান্ত্রিক হয়ে গেছে পরিবার ও আত্মীয়তার বন্ধনও। এতে করেই অন্যত্রে গিয়ে নিত্য-নতুন বাড়ি-ঘর তৈরীর মাত্রা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাই যেদিন- ভাগ সেদিন; প্রায় সর্বত্রই এমনটাই চলছে।
এমন প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম সম্প্রতি একটি দৈনিকে বলেছেন যে, প্রবীণরা স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের সাথেই থাকতে চান। কিন্তু তথাপিও কারো না কারো দ্বারা যৌথ পরিবারে ভাঁঙ্গন এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়েই দাড়িয়েছে। যার কারণেই দিনের পর দিন নিত্য-নতুন অতিরিক্ত বাড়িঘর নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে আধুনিক নগরায়ন ও শিল্পায়ন, কর্মসংস্থানসহ নানান কারণে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে। অথচ, সময়ের সাথে সাথে সামাজিক অবস্থা এবং পারিবারিক কাঠামোতে যে পরিবর্তন এসেছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে প্রবীণদের জন্য যথেষ্ট সেবা ব্যবস্থাটাও আজও গড়ে ওঠেনি অধিকাংশ সমাজেই। এই পরিস্থিতিতে অনেক প্রবীণ অরক্ষিত হয়ে পড়ছেন। যার কারণে নিরাপদ স্থান হিসেবেই তারা কেউ কেউ বৃদ্ধাশ্রমকেও বেছে নিচ্ছেন।
অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘দেশে একান্নবর্তী বা যৌথ পরিবারের ভাঙ্গন, নিজের স্বার্থকে অন্যের ওপর প্রাধান্য দেয়ার কারণে দিন দিন পারস্পরিক সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব এবং প্রাণের ও আত্মার বন্ধন বা টান ক্রমশ কমে যাচ্ছে বা আলগা হয়ে পড়ছে। আমরা আমাদের মনের পশুত্বকে দমন করতে পারছি না। পারছিনা ঈর্ষা হিংসা বিদ্বেষ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে। ধর্মীয় বিধিবিধান অনুযায়ী অনেকেই তাঁর ন্যায্য হিস্যাও পাচ্ছেনা বা দিচ্ছেনা। জায়গা জমির মূল্য বৃদ্ধি, ভূমি দস্যুদের অপতৎপরতা, সমাজে বাহুবলের কদর্য প্রদর্শন, অসৎ পথে আয়কারীদের দম্ভ, প্রভাব প্রতিপত্তির দাপট সর্বোপরি নৈতিক, মানবিক, ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব- ইত্যাদি কারণেও সমাজে পারিবারিক অশান্তি এবং অস্থিরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পারিবারিক বিচ্ছিন্নতার মাত্রা দিন দিন আরো বেড়েই যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, প্রকৃতপক্ষে একটা চারাগাছকে আমরা সযতেœ পরিচর্যা করি শুধু বড় হলে এটার প্রকৃত ব্যবহার, ছায়া এবং ফল পাবার আশায়। তেমনি সম্পর্কগুলোকেও যতœ নিতে হয় পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার জন্য। পরিবারের সবাই সমান মানসিকতার হয় না, কেউ কেউ ভিন্ন পরিবারের ভিন্ন পরিবেশ থেকে আগত বলেই ভিন্ন মানসিকতারও হয়ে থাকেন। কেউ কেউ নিজের উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য ভিলেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নানা কূটচালের আশ্রয় নিয়ে পারিবারিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতেও তৎপর থাকে। কিন্ত তাকে অন্য সদস্যদের প্রশ্রয় না দিয়ে কৌশলে সব অপতৎপরতা থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করাই একান্ত উচিত। নতুবা সোনার সংসার আর মায়ার সংসারের ভাঙ্গন নিশ্চিত। পরিবারের সকলের মধ্যে যদি সম্প্রীতি থাকে, একতা থাকে তাহলে অনেক বড় বড় সমস্যাও মোকাবিলা করা সম্ভব।
আসলে বহু আগে থেকে আমাদের সমাজের একান্নবর্তী পরিবার ভেঙ্গে গেছে। যার কুফল এখন আমরা পাচ্ছি। আমাদের সন্তানরা একা একা বড় হচ্ছে উদারতার শিক্ষা না পেয়ে স্বার্থপরতা শিখছে। যার ফলে বৃদ্ধ বাবা মাকে হয় ওল্ড হোমে রাখছে; নতুবা উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে বাবা মাকে নিঃস্ব করে দিয়েই। অথচ, একটা সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন, পারিবারিক শিক্ষা -সহযোগিতার সহমর্মিতার ও মনুষত্বের শিক্ষা। সবচেয়ে জরুরী হলো ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা। ধর্মীয় শিক্ষাই পারে খারাপ কাজ থেকে মানবজাতিকে বিরত রাখতে। মূলত: পারিবারিক ভাঙ্গন কিছুটা রোধ করতে পারে বড়দের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের মাধ্যমেও। আপনি আপনার মেয়েকে যেভাবে সাংসারিক জীবনে দেখতে চান- সেভাবে যদি ছেলের বৌকেও দেখেন, তবে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আপনি চান আপনার মেয়ে সুখে থাকুক, জামাই মেয়েকে ভালোবাসুক! সেরকম চাইতে অসুবিধা কোথায় যে, ছেলে ও ছেলের বৌকে ভালোবাসুক। বেনিফিট কিন্তু আপনারাই পাবেন। কেবল স্বার্থপরতা নয়; সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে নিজেকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করাই, বিবেক ও আবেগের সমন্বয় করে জীবন চালিত করি দেখবো, ‘পারিবারিক বন্ধন দূর করে ক্রন্দন আসুন, মানবতা ফেরী করি, মানবতায় জীবন গড়ি।’
এছাড়া, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো পরিবার। পারিবারিক জীবন থেকেই গড়ে উঠে ইসলামী পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা। তাই ইসলাম পরিবারের সংশোধন ও শৃঙ্খলাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। একটি শিশুই একটি জাতির ভবিষ্যৎ। আজকের শিশুই আগামী দিনের কর্ণধার। তার তা‘লীম-তরবিয়তের ওপরই নির্ভর করবে আমাদের আগামী দিনের পরিবার বা সমাজ ব্যবস্থা কেমন হবে।
আসলে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, ইদানীং সমাজে দেখা দিয়েছে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। মানুষের মনে ভর করেছে লোভ লালসা, হিংসা বিদ্বেষ, অশুভ, অসম এবং অনাকাঙ্খিত প্রতিযোগিতা। দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিন সম্পত্তির কারণে পুত্রের হাতে মাতা পিতা, ভাইয়ের হাতে ভাই বোন, চাচার হাতে ভাতিজা, ভাতিজার হাতে চাচা, ফুফু খুন হচ্ছে, জখম হচ্ছে, মামলা-মোকদ্দমা সহ কত ধরণের লড়াই হচ্ছে তার অনেক খবর পত্রিকার পাতা উল্টালেই বা ইলেট্রনিক মিডিয়ার কারণে আমাদের নজরে আসছে। কিন্তু কত নির্যাতনের ঘটনা যে আমাদের চোখের আড়ালে রয়ে যাচ্ছে তার হিসেব কে রাখে! বাস্তবিক পক্ষে, সমাজ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো পরিবার। আর এ পারিবারিক জীবন থেকেই গড়ে উঠে একটা চমৎকার পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা।
বাস্তবিক পক্ষে, পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ এখনো কৃষি নির্ভর। এখনও আমাদের জাতীয় আয়ের এক বিশাল অংশ এবং প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির এক উল্লেখযোগ্য খাত কৃষি। দেশের অর্থনীতি এখনো নির্ধারিত হয়ে থাকে কৃষির উৎপাদনের হ্রাস-বৃদ্ধির উপরই। এর মধ্যে বর্তমানে সারাদেশে আবাদযোগ্য জমির হলো বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট এর সর্বশেষ তথ্য মতে ৮৫.৭৭ লক্ষ হেক্টর। কিন্ত এই জমির উপর যে হারে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি, শিল্পকারখানা, রাস্তাঘাট, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণসহ নানা কাজে ব্যবহার করা হয়ে আসেছে- এটি চলতে থাকলে ভূমি মন্ত্রনালয়ের আভাস অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মাথাপিছু চাষযোগ্য জমি ১৪ শতাংশ থেকে কমে ৬.২০ শতাংশে পৌঁছতে পারে।
এমতাবস্থায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের জোনিং প্রকল্প অনুযায়ী আবাদি জমির অপরিকল্পিত ব্যবহার বন্ধ করতে জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি প্রকাশ করলেও এটা কেউ মানছেন না। একই উদ্দেশ্যে সরকার কৃষিজমি সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, মৌজা ও প্লটভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজও করছে। আর এই মৌজা ও প্লটভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কোনো ব্যক্তি আর খেয়াল-খুশী মতো আবাদি জমির ওপর ঘরবাড়ি, শিল্পকারখানাসহ অন্য স্থাপনা নির্মাণ করতে চাইলে তখন সরকারের মাঠ প্রশাসন তাতে বাধা দিতে পারবেন। এর মধ্যে সারাদেশে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪১২টি মৌজা ডিজিটাইজড করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় জমির শ্রেণী চিহ্নিত করে আলাদা আলাদা জোন নির্ধারণ করা হবে।
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বর্তমানে একটি বিরাট সমস্যা, আর এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে দেশের কৃষি ক্ষেত্রে। এতে করে প্রতিবছরই অন্তত: এক শতাংশ হারে কমছে দেশের কৃষি জমি। যে যেখানে একটু খালি পাচ্ছেন- সে সেখানেই তার খেয়াল-খুশী অনুযায়ী যেকোন ১টা দোকান খুলে হলেও যে কোনো ব্যবসা শুরু করে দিচ্ছেন। এমনিভাবে বর্তমানকার পরিস্থিতিতে এ রকম একটি যুগোপযোগী “কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন”-এর বাস্তবায়ন চূড়ান্ত হওয়া একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে এলাকার অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেন কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন মানার বাধ্যবাধকতা নিয়ে কারো কোনো দ্বিমতের অবকাশ নেই।
এখানে উল্লেখ্য যে, ২০১৫ সনে কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে বিধান প্রণয়নকল্পে আইনের খসড়ায় বলা হয়েছিল যে, “যেহেতু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে পরিকল্পিত আবাসন, বাড়িঘর তৈয়ারী হইয়া বা উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার হইয়া তথা শিল্প-কারখানা বা রাস্তাঘাট নির্মাণ করিয়া প্রতিনিয়তই ভূমির প্রকৃতি ও শ্রেণিগত ব্যবহারের পরিবর্তন হইতেছে, ফলে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষি জমি, বনভূমি, টিলা, পাহাড় ও জলাশয়/ জলমহাল বিনষ্ট হইয়া খাদ্য শস্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়িতেছে ও পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটিতেছে, সেইহেতু অপরিকল্পিত বাড়িঘর, শিল্প-কারখানা বা রাস্তাঘাট তৈয়ারী রোধ করিয়া ভূমির শ্রেণি বা প্রকৃতি ধরিয়া রাখিয়া পরিবেশ ও খাদ্য শস্য উৎপাদন অব্যাহত রাখিবার উদ্দেশ্যে এবং কৃষি জমি ও কৃষি প্রযুক্তির প্রায়োগিক সুবিধার সুরক্ষাসহ ভূমির পরিকল্পিত এবং সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করিবার নিমিত্ত একক কর্তৃপক্ষ নির্ধারণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। এ খসড়ায় ( ১) বলা হয়েছে- এই আইন ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন ২০১৫’ নামে অভিহিত হইবে। ( ২) ৩টি পার্বত্য জেলা ব্যতীত সমগ্র বাংলাদেশে এই আইন অবিলম্বে কার্যকর হইবে।’
অথচ, এ আইন এবং এ সম্পর্কিত সরকারের আরো নানা আইন-কানুনের উদ্যোগ-উদ্দীপনা দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় এক শ্রেনীর মানুষজনের অপতৎপরতায় শুধু লাকসাম আর মনোহরগঞ্জ উপজেলায় নয়; পুরো কুমিল্লা ও পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলাসহ সারা বাংলাদেশেই কৃষি জমির প্রায় একই অনিশ্চত হাল।
এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, রাষ্ট্রের সমন্বিত কোনো বাস্তব পরিকল্পনা এবং প্রস্তাবিত আইন কার্যকর না হলে দিনের পর দিন আরো অপরিকল্পিতভাবে চলে যাবে গ্রামের কৃষি জমি দ্রæত অকৃষি খাতেই। যেখানে সেখানে হয়ে যাবে বাড়ি-ঘর। শিল্প-প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, দোকান-পাট ও বিভিন্ন রকমের স্থাপনা। হয়ে যাবে অপরিকল্পিত নগরায়ন। তাই গোটা দেশব্যাপী এহেন অপতৎপরতা বন্ধ করা এখন একটি বিরাট সময়ের দাবিও বটে।
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com