মো. আকতারুজ্জামান\ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) টেলিফোন এক্সচেঞ্জটি এখন গ্রাহক সেবার নামে ভোগান্তির কারখানায় পরিনত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে ৫০০ গ্রাহককে সেবা দেয়ার সক্ষমতা নিয়ে চৌদ্দগ্রাম টেলিফোন এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০২ সাল পর্যন্ত এটি ছিল উপজেলার টেলিযোগাযোগ সেবার একমাত্র মাধ্যম। তখন শত শত গ্রাহক সেবা নিলেও এখন তা অতীত। বর্তমানে দোতলা এক্সচেঞ্জ ভবন এলাকাটি ঝোপ-জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। নেই পর্যাপ্ত জনবলও।
সম্প্রতি চৌদ্দগ্রাম পৌর শহরের ট্রেনিং সেন্টার এলাকায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, দু’টি স্টিলের খুঁটিতে বিটিসিএলের একটি সাইনবোর্ড ঝুলছে। লোহার গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, দ্বি-তল ভবনটির নিচে এক কিশোর বসে আছে। পরিচয় জানতে চাইলে সে জানায়, এখানে কর্মরত ক্লিনার খোরশেদ আলম তার নানা হয়। খোরশেদ ও লাইনম্যান রফিকুল ইসলাম বাইরে গেছেন। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা ফিরে এসে কথা বলেন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।
লাইনম্যান রফিকুল বলেন, ‘আমরা দু’জন ছাড়াও এই এক্সচেঞ্জে এখন আরেক ক্লিনার হীরন মিয়া ও নৈশপ্রহরী মো. রেজাউল করিম কর্মরত আছি।’ তারা জানান, এই এক্সচেঞ্জ থেকে বর্তমানে টেলিফোনের ৮২টি সংযোগ চালু আছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এসব সংযোগের বিপরীতে এক্সচেঞ্জের নিজস্ব সংযোগ ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পৌরসভার সংযোগটি সচল করেছে। বাকিগুলোর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। গ্রাহকদের অভিযোগ, তাঁরা ৮-১০ বছর ধরে ল্যান্ডফোন ব্যবহার না করলেও প্রতি মাসে বিল আসছে।
চৌদ্দগ্রাম বাজারের ফোন-ফ্যাক্স ব্যবসায়ী মামুন পাটোয়ারী ২০১০ সালে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গুটিয়ে ফেললেও তার নামে এখনো বিল আসে। মামুন বলেন, বাজারে বিটিসিএলের বর্তমানে কোনো সংযোগ নেই। তারপরও কেন বিল আসছে, তা তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে বিটিসিএল কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারছে না।
সরকারি দপ্তরগুলোর অচল সংযোগেও প্রতি মাসে বিল আসছে। চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহাম্মদ জানান, তিনি চলতি বছরের ১২ই জানুয়ারি এই থানায় যোগদান করেন। তার এখানে বিটিসিএলের একটি ল্যান্ডফোন থাকলেও কখনো সংযোগ পাওয়া যায়নি। অথচ তারা এই বিচ্ছিন্ন ফোনের বিল পরিশোধ করে আসছেন।
এদিকে তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে বেসরকারি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে রমরমা ব্যবসা করছে, সেখানে চৌদ্দগ্রামে বিটিসিএলের মাত্র পাঁচটি সংযোগ রয়েছে। সেই গ্রাহকদেরও পড়তে হচ্ছে নানা ভোগান্তিতে। প্রায় সময় সার্ভার ডাউন থাকায় কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে নেয়া এই সংযোগগুলো ঠিকমতো কাজ না করায় সেখানে সেবা নিতে যাওয়া ব্যক্তিরা চরম বেকায়দায় পড়ছেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মিনহাজুল আবেদীন বলেন, ‘সরকারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে যে আমাদের বিটিসিএলের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তা ব্যবহার করছি। কিন্তু প্রায় সময় তাদের সার্ভার ডাউন থাকে। এতে করে কাজ করতে পারি না। ইন্টারনেটসেবা ব্যাহত হওয়ার ফলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানে দৈনন্দিন কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রশিদ আহাম্মেদ চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিটিসিএলের ইন্টারনেটসেবা নেয়া আছে। কিন্তু সার্ভার জটিলতার কারণে ১১ মাস ধরে আমরা সেবাটি ব্যবহার করতে পারছি না। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।’
সূত্র জনায়, এই এক্সচেঞ্জে ১২ জনের মধ্যে বর্তমানে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন চারজন। জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার কামরুজ্জামান আছেন অতিরিক্ত দায়িত্বে। তিনি বলেন, ‘আমি বর্তমানে বরুড়ায় নিয়োজিত আছি। চৌদ্দগ্রাম ছাড়াও ৯টি উপজেলায় আমি অতিরিক্ত জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’ তিনি দাবি করেন, মাঝেমধ্যে তিনি চৌদ্দগ্রামে আসেন। এ ছাড়া অপারেটরসহ বাকি সাতটি পদ শূন্য।
এদিকে, ২০২২ সালে এক্সচেঞ্জ থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ ও ব্যাটারি চুরি হয়। এ ঘটনায় তখন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়। তবে এখনো মালপত্র উদ্ধার ও অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হয়নি।
এসব বিষয়ে বিটিসিএল কুমিল্লার উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আতাউর রহমান পাটোয়ারী সোহাগ বলেন, ২০০০ সালে এক্সচেঞ্জটি ডিজিটালে রূপান্তর হয়। তখন থেকে ১২৮টি সংযোগ চালু রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে এখানকার লাইনম্যান ৮২টি সংযোগ থাকার কথা জানালে তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে, ঠিক কতটি লাইন চালু আছে।
গ্রাহকদের ভুতুড়ে বিল সম্পর্কে এই কর্মকর্তা বলেন, বিল ঢাকা থেকে তৈরি হয়। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে। যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনায় জিডি হলেও এখনো বিষয়টি সমাধান কেন হয়নি-জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি পুলিশ প্রশাসন বলতে পারবে।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি হিলাল বলেন, ‘২০২২ সালে বিটিসিএলের চৌদ্দগ্রাম এক্সচেঞ্জে চুরি নিয়ে কোনো সাধারণ ডায়েরি হয়েছিল কি না, তা খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।’
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com