ষ্টাফ রিপোর্টার\ সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফা দাবিতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ৩ দিন একই স্থানে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ, জেলার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
গত সোমবার (৮ই জুলাই) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সারাদেশে ‘বাংলা বøকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এই অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, দীর্ঘক্ষণ অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয়দিকে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন চালক ও যাত্রীরা। সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় মহাসড়কের ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী লেনের উভয়দিকে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের জট লাগতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাবুল আহমেদ নামের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী সাদা কাপড় গায়ে জড়িয়ে মহাসড়কের মাঝে দাঁড়িয়ে গাছসদৃশ একটি স্টিলের পাইপে ঝুলে প্রতীকী আত্মহত্যা করছেন। তার গায়ে থাকা সাদা কাপড়ে লেখা ‘মেধা থাকার পরও কোটা পদ্ধতি আমাকে বাঁচতে দেয়নি। তোর ছেলেকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে মা।’
বাবুল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কোটা পদ্ধতির বাতিল চাই। সেজন্য আজকের এ প্রতিবাদ। প্রতীকী অর্থে আমি আজ এ বেশে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। কোটা পদ্ধতির কারণে অনেক মেধাবী ঝরে যাচ্ছে। এ কোটা মেধাবীদের কাছে এক ধরনের হত্যার শামিল। আমার জায়গা থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
আন্দোলনে থাকা আরেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, সারা বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয় করে তৃতীয় দিনের মতো আমাদের কুমিল্লার কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল ও কোটা পদ্ধতি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে। সোমবার রাত ৮টায় কর্মসূচি শেষ হবে।
এর আগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে ট্রাকে করে কোটবাড়ি হয়ে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ¯েøাগান দেন ‘আমার সোনার বাংলায়, কোটা প্রথার ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে, লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, লড়াই করো একসাথে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ ইত্যাদি। ¯েøাগানে ¯েøাগানে আন্দোলনকে মাতিয়ে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ করে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতে দেখা যায়।
আন্দোলনরত অবস্থায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রুবেল মিয়া বলেন, ‘যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া অবধি আমরা আমাদের আন্দোলন থেকে পিছপা হবো না। এই কোটা অবশ্যই বাতিল করতে হবে।’
নোয়াখালী থেকে আসা ঢাকাগামী একুশে পরিবহনের বাস চালক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘এভাবে প্রতিদিন আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। রবিবারও তিন ঘণ্টা আটকে ছিলাম যানজটে। আজকেও একই অবস্থা। বাধ্য হয়ে অনেক গাড়ি কুমিল্লা শহরের ভেতর দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করে যানজট আরও বাড়াচ্ছে। চালকদের পাশাপাশি যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা বেশি সমস্যায় পড়েছেন।’
কুমিল্লার ময়নামতি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার বলেন, ‘রোববারের মতো আজ সোমবারও বিকেল থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। অবরোধ শুরুর পরপরই শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য চেষ্টা করে হাইওয়ে পুলিশ। আমাদের পাশাপাশি জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনও কাজ করছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছাড়ছেন না। তারা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে। দীর্ঘ সময় অবরোধের কারণে মহাসড়কের দু’দিকেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহাসড়কে কাজ করছি আমরা।’
এর আগেও ৪ঠা জুলাই একই স্থানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে চারদফা দাবি জানিয়ে অবরোধ তুলে নেন তারা। শুক্রবার কোনো কর্মসূচি না থাকলেও শনিবার রাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। সবশেষ রোববার মহাসড়কের একই স্থান প্রায় চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com