নিজস্ব প্রতিনিধি\ কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কাঁকড়ি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। নদীর পাশে অবস্থিত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে মাটি লুট করায় নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে এসব দেখেও নিরব ভুমিকা পালন করছে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত রোববার নদী থেকে বালু ও মাটি উত্তোলনে বাধা দেয়ায় হামলায় এক শিক্ষার্থীসহ ৩ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাইফুর রহমান পিন্টু বাদি হয়ে হামলাকারী ৬ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চল হতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কাঁকড়ি নদী। কিছুদুর প্রবাহিত হয়ে ডাকাতিয়া নদীতে মিলিত হয়েছে নদীটি। এই নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব নেই। উপজেলার উজিরপুর ও কাশিনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে কাঁকড়ি নদীর চর এলাকা থেকে প্রভাবশালী চক্রটি দিনের বেলায় অবাধে বালু ও মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, নিয়মিত ‘মাসোহারা’ পেয়ে প্রশাসন এসব দেখেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অবস্থা এমন যে, নদী রক্ষা বাধের নিকটস্থ মাটি কেটেও বিক্রি করে দিয়েছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। দীর্ঘদিন কাঁকড়ি নদীর মাটি কাটা বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট আবারও মাটি কাটা শুরু করে।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, নদীর উজিরপুর ইউনিয়নের পূর্ব কাশিপুরে রোববার মাটি কাটতে বাঁধা ও ভিডিও ধারণ করায় মাটি খেকোদের হামলায় আহত হয়েছেন এক কলেজ শিক্ষার্থীসহ ৩ জন। গত কয়েকদিন ধরে পূর্ব কাশিপুর গ্রামের মোছলেম মিয়ার ছেলে শাওন, মফিজুর রহমানের ছেলে জোনায়েত, বায়োজিদ, নোমান, মানিক মিয়ার ছেলে আকাশ ও খাসিগ্রামের সাইফুল ইসলাম বিক্রির উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে কাঁকড়ি নদী থেকে বালু ও মাটি কাটা শুরু করে। নদীর দু’পাড়ের ভাঙন আশঙ্কায় এলাকার শিক্ষার্থীরা তাদেরকে মাটি কাটতে নিষেধ করে। রোববার সকাল অনুমান ৯টায় তারা মাটি কাটতে শুরু করলে পিন্টু মাটি কাটার ভিডিও ধারণ করে উপজেলার সরকারি কর্মকর্তাদের প্রেরণ করে। কিছুক্ষণ পর ইউনিয়ন সহকারি ভুমি সহকারী কর্মকর্তা এমদাদুল হক মজুমদার ঘটনাস্থলে গেলে মাটি ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে মাটি খেকোরা পিন্টুর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা করে। এতে কলেজ শিক্ষার্থী পিন্টু, তার বাবা হারুন মিয়া ও মা আলেয়া বেগম আহত হন। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন আহতদের উদ্ধার শেষে কুমিল্লায় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত জোনায়েত সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাটি কাটার সাথে আমার পরিবারের কোন সম্পর্ক নেই। যাদের জমি তারাই মাটি কাটছে’। উজিরপুর ইউনিয়ন ভুমি সহকারি কর্মকর্তা এমদাদুল হক মজুমদার বলেন, ‘কাঁকড়ি নদীতে মাটি কাটার খবর পেয়ে রোববার সকালে কাশিপুর গিয়েছি। সেখানে যাওয়ার পূর্বে মাটি কাটার লোকজন চলে যায়। সেখানে ছোট ছোট কয়েকটি মাটির স্তুপ দেখেছি। স্থানীয় একজনকে মাটি কাটতে বাঁধা দিতে বলে এসেছিলাম। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে অবগত করেছি’।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এটিএম আক্তার উজ জামান বলেন, ‘কাঁকড়ি নদীতে বালু উত্তোলন নিয়ে হামলার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com