কামাল আতাতুর্ক মিসেল\ জনশক্তি রফতানিতে এবারো সারা দেশে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে কুমিল্লা জেলা। ২০২৪ সালে কুমিল্লা জেলা থেকে সর্বাধিক সংখ্যক ৯১ হাজার ৩৭৯ জনের আন্তর্জাতিক অভিবাসন হয়েছে। যা মোট অভিবাসনের প্রায় ১০ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে কুমিল্লার অবস্থান রাজধানী ঢাকার পরেই। কুমিল্লায় বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে ১ হাজার ৩শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছরের তুলনায় যা ২৬ শতাংশ বেশি। তবে একক জেলার অধিবাসী হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েও কুমিল্লাকেই শীর্ষে রাখছেন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাহেনুর ইসলাম।
রাহেনুর ইসলাম জানান, ঢাকায় যে পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে সেখানে অন্যান্য জেলার অধিবাসীদেরও অবদান রয়েছে। সেই যুক্তিতে একক অধিবাসীর জেলা হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েও কুমিল্লা শীর্ষস্থানে রয়েছে। প্রবাসীদের জন্য দ্রæত করোনা টিকার সংস্থান এবং সরকারের ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টার কারণে করোনাকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেও কুমিল্লা জেলার মানুষকে সহজে বিদেশে পাঠানো এবং কর্মসংস্থানে যোগ দিতে সহায়তা করতে পেরেছে কুমিল্লা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়।
রিক্রটিং এজন্সিগুলো বলছে, মহামারির কারণে ২ বছর বিদেশে যেতে না পারা অনেক শ্রমিকই ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে গেছেন, এ সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে থাকায় তাদের চাকরির বাজারও উন্মুক্ত হয়। পাশাপাশি সব ধরনের সৌদি প্রতিষ্ঠানে অভিবাসী বাংলাদেশীদের জন্য নির্ধারিত কোটা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার ঘটনাও অবদান রেখেছে রেকর্ড এই প্রবৃদ্ধিতে।
মধ্যপ্রাচ্যের তরুণ উদ্যোক্তা ফরহাদ আলম জনশক্তি রফতানি ও রেমিট্যান্স অর্জনে দেশের শীর্ষ জেলা কুমিল্লায় ২০২৪ সালে ১১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা দেশে পাঠিয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। গত বছর জেলার সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে প্রথম হয়েছিলেন তারই চাচা ইয়াছিন আরাফাত। তাদের ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি বেকারত্ব দূর করেছে আরো অনেকের। ফরহাদ আলম বলেন, সবাইকে ইনকাম ট্যাক্সের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তাহলে সে আর অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা আনবে না। কুমিল্লাকে সমৃদ্ধির অনন্য উচ্চতায় এগিয়ে নিচ্ছেন প্রবাসীরা।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ জানান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো মহামারির সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। যে কারণে বিভিন্ন দেশে কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। কর্মীরা যেতে পারছেন। রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশের উচিত হবে এই মার্কেট ধরে রাখা। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হলে জনশক্তি রফতানি আরও বাড়বে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কুমিল্লা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক রাহেনুর ইসলাম বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করছে। সবার কাছে আমরা সেবা পৌঁছে দিতে রেফারের সিস্টেম চালু করতে চাই। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার বলেন, যারা প্রবাসে যাচ্ছে তারা যেন প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বাইরে যায় তাহলে আমরা বর্তমানে যে রেমিট্যান্স পাচ্ছি তার থেকে বেশি অর্জন করতে পারবো। তবে, রয়েছে বিভিন্ন এজেন্সির ফ্রি ভিসার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হওয়ার গল্পও। অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা রামরুর তথ্য বলছে বিদেশে কাজ না পাওয়াদের ৫০ শতাংশই ফ্রি ভিসায় গিয়েছেন।
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের জেলা সমন্বয়কারী শান্তা সূত্রধর বলেন, অভিবাসনের যে ব্যয় বাড়ছে তা আসলে সিন্ডিকেটের কারণে বাড়ছে। এখানে কাজ করার একটা সুযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী জানান, বাংলাদেশ যতগুলো দেশে জনশক্তি রফতানি করে তারমধ্যে অন্যতম বড় শ্রমবাজার ছিল মালয়েশিয়া। যা গত ৩ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ। খোলার কথা বলেও ৪ মাস পেরিয়ে গেছে। আমরা কর্মী পাঠাতে প্রস্তুত, এখন ওপেন হওয়ার অপেক্ষায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com