মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিশেল॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পারাপারে ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহারে আগ্রহ নেই পথচারিদের। প্রতিনিয়ত ব্যস্ততম মহাসড়ক দিয়ে পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে, ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তার আইল্যান্ড টপকে, সুযোগ বুঝে দ্রুতগতির যানবাহনের সামনে দিয়েই দৌড়ে পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা। অনেকেই আবার হাতের ইশারায় চলমান গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন হাজারো গাড়ী প্রায় একশ’ কিলোমিটার বেগে চলাচল করে। আর এরই মধ্যে চলন্ত গাড়ি থামিয়ে দলবেঁধে অথবা ফাঁক-ফোকর বুঝে সড়কের মাঝপথ দিয়ে মহাসড়ক পার হচ্ছেন পথচারীরা। এরই মধ্যে কোন রকমে পিছিয়ে নেই বাস চালকরাও রীতিমত দেখা যায় নির্দিষ্ট স্থানে বাস না থামিয়ে মহাসড়কের যেখানে সেখানে মহাসড়কে উপরে মাঝপথে বাস থামিয়ে যাত্রীদের ওঠানামা করানো হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা বিশ্বরোডসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে বহু ফুটওভার ব্রিজ। এসব ব্রিজ ব্যবহার না করে আইল্যান্ড দিয়ে যাত্রী পারাপারের ঘটনা প্রায়শই চোখে পড়ে।
কুমিল্লার গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিকটতম এক আত্মীয়কে দেখতে আসেন কামরুন নাহার নামে এক মহিলা। তিনি রোগী দেখে বাড়িতে ফেরার পথেই একটি ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও সেটি ব্যবহার না করে নিচ দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হন। এতো কষ্ট করে আসার কী দরকার ছিল? ফুটওভার ব্রিজ কেন ব্যবহার করলেন না? জানতে চাইলে মধ্যবয়সী এই নারী বললেন, আমার পায়ের গোড়ালিতে ব্যাথা। এভাবে চলতে গেলে তো ঝুঁকি থাকে। সেটা দেখতেও তো ভালো লাগে না- এমন মন্তব্যের জবাবে কামরুন নাহার বলেন, শুনেছি রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকায় ফুট ওভার ব্রিজেই নাকি চলন্ত সিড়ি রয়েছে। এখানেও সেটা হলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হয়।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অনেক জায়গায় ওভারব্রিজ দূরে থাকায় পথচারীরা নিচ দিয়ে পার হয়। মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম, পদুয়ার বাজার বিশ^রোড, কুমিল্লা ক্যন্টানমেন্ট, চান্দিনা, মাধাইয়া, ইলিয়টগঞ্জ, গৌরীপুর দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষ ফুটওভারব্রিজ দিয়ে পারাপার না হয়ে ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে পার হচ্ছে। কয়েকজন পথচারী বলেন, ব্রিজে উঠতে মন চায় না। নিচ দিয়াই ভালো। এক মিনিটেই পার হওয়া যায়। দ্রুত নিচ দিয়ে যাতায়াত করা যায়। ব্রিজ দিয়ে যেতে সময় অনেক লাগবে তাই নিচ দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে কেন নিচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন অপর এক যাত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নিচ দিয়ে আসলাম এইটা দেখলেন, কিন্তু বাস চালক আমাদের মহাসড়কে মাঝেখানে নামিয়ে দিল তা দেখলেন না। আমাকে যদি সঠিক জায়গায় নামানো হত তাহলে আমি ব্রিজ দিয়েই আসতাম। এছাড়াও পথচারীদের অভিযোগ, দিনের বেলায় প্রচন্ড রোদের তাপের কারনে অনেকে এইসব ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে না। আবার ফুটওভার ব্রিজে লাইটের কোন ব্যবস্থা না থাকায়। এইসব ফুটওভার ব্রিজগুলো রাতের বেলা ভবঘুরে, মাদকাসক্ত দখলে থাকে। এছাড়া রাতে ছিনতাইকারীদের ভয়ে অনেকে ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে চান না বলে অনেকেই জানান। মাধাইয়া মুক্তিযোদ্ধা কলেজের ছাত্রী কাজী ফাতেমা আক্তার বলেন, পড়াশোনার করার কারনে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হয়ে আমাকে কলেজে যেতে হয়। ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হয় আমাকে। কিন্তু চান্দিনা মহাসড়কের ওপর যে ফুটওভার ব্রিজটি রয়েছে সেটাতে প্রায়ই সময় কিছু বখাটে ছেলে আড্ডা মারতে দেখা যায়।
ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পার হচ্ছেন গোলাম কিবরিয়া। কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিচ দিয়ে পার হচ্ছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময়ের স্বল্পতার কারণে নিচ দিয়ে আসা। সময়ের মূল্য বেশি নাকি জীবনের মূল্য বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবনের মূল্য বেশি জেনে শুনে এমনটি করেছি আর করবো না।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুটওভার ব্রিজের যে উচ্চতা থাকা প্রয়োজন মহাসড়কের ফুটওভার ব্রিজগুলোর উচ্চতা তার চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে বিভিন্ন এলাকার ফুটওভার ব্রিজগুলো পথচারীরা ব্যবহারে উৎসাহ পান না।
এবিষয়ে কুমিল্লা হাইওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরহাদ জানান, দুঃখজনক হলেও সত্য জনগণ যে পরিমাণ ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করার কথা, সে পরিমাণ ব্যবহার করছেন না। ফুট ওভারব্রিজের নিচে দাড়িয়ে জোরপূর্বক যাত্রীদের ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে বাধ্য করা প্রতিদিনের কাজ। তারপরও জনগনকে সচেতন করতে চেষ্টা করছেন বলে জানান অতিরিক্ত এই পুলিশ সুপার।
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com