ষ্টাফ রিপোর্টার\ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ১৬ বছর পর আবারও বৃত্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে খসড়া নীতিমালা তৈরি করে তা জমা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। নীতিমালায় বৃত্তির অর্থের পরিমাণ বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এক দফা বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিগগির এ নীতিমালা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
একসময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি শেষ করার পর বৃত্তি পরীক্ষার প্রচলন ছিল। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে মেধাতালিকায় জায়গা পাওয়াদের দেয়া হতো মাসিক হারের বৃত্তির টাকা। তবে ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসিই) চালুর পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় ওই পরীক্ষা।
এঘটনার পর শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা তো বটেই; শিক্ষকরাও ক্ষোভ জানিয়ে আসছিলেন। সেসময় বৃত্তি পরীক্ষা বহালের দাবিতে মাঠেও নেমেছিলেন অভিভাবকরা। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তা আমলে নেয়নি। ফলে বৃত্তি পরীক্ষার বিষয়টি ভুলতে বসেছিলেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বৃত্তি পরীক্ষা আগের নিয়মে ফেরানোর নির্দেশনা দিয়ে অধিদপ্তরে চিঠি দেয়। পরে অধিদপ্তর আগের নিয়মের সঙ্গে কিছু বিষয় যুগোপযোগী করে খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে। তা এখন চূড়ান্তভাবে প্রজ্ঞাপন জারির অপেক্ষায়।
দীর্ঘদিন পর বৃত্তি পরীক্ষা চালুর খবরে খুশি অভিভাবকরা। তারা বলছেন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা না থাকায় সন্তানদের পড়ার টেবিলে বসানোর অভ্যাস করতে পারছেন না তারা। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। ফলে শিশু শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা সম্পর্কে কোনো ধারণা না নিয়েই বেড়ে উঠছে।
তবে বৃত্তি পরীক্ষায় বৈষম্য তৈরি হয় বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, এতে বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীকে আগে থেকে বিশেষ পরিচর্যা করা হয়। তারাই বৃত্তি পরীক্ষা দেয়। বিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো দেখানোর জন্য শিক্ষকরা বৃত্তি পরীক্ষা দেয়া গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর দিকে বেশি মনোযোগ দেন।
তাছাড়া মফস্বলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধনী বা সচ্ছল পরিবারের সদস্যদের এ ধরনের পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হয়। দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের নিরুৎসাহিত করা হয়। সেজন্য তারা বৃত্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন।
চলতি বছর থেকেই বৃত্তি পরীক্ষা চালু করা হবে। পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষে ডিসেম্বরের মধ্যেই এ পরীক্ষা আয়োজনে সব পদক্ষেপ নেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। সেটিও কিছুটা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে অধিদপ্তর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘এ বছর থেকেই বৃত্তি পরীক্ষা হবে, এটা নিশ্চিত। শিগগির বৃত্তি পরীক্ষার নিয়ম-কানুন কী হবে, তার নীতিমালা চূড়ান্ত করে প্রকাশ করবে মন্ত্রণালয়।’
প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ২ ধরনের বৃত্তি দেয়া হয়। একটি হলো- ট্যালেন্টপুল, আরেকটি সাধারণ বৃত্তি। ২০০৯ সালে সবশেষ চালু থাকা সময়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া একজন শিক্ষার্থী মাসিক ৩০০ টাকা হারে বৃত্তির অর্থ পেতো। আর সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্তরা পেতো ২২৫ টাকা।
বৃত্তি নীতিমালা যুগোপযোগী করায় এবার টাকার পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমান বাজারমূল্য ও শিক্ষা উপকরণের দাম বিবেচনায় দুই ধরনের বৃত্তির অর্থ দ্বিগুণ করার সুপারিশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের বৃত্তি শাখার তথ্যমতে, খসড়া নীতিমালায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তির পরিমাণ ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা এবং সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্তদের ২২৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৫০ টাকা করার সুপারিশ করেছে অধিদপ্তর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে দেশে প্রায় ১ কোটি শিক্ষার্থী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। সেই হিসাবে ১ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিলেও তা ১ লাখ হওয়া উচিত। সেজন্য আমরা আরও বেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিতে সুপারিশ করেছি। সবশেষ সাড়ে ৮২ হাজার শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল। আগামীতে সেটি ১ লাখ বা তারও বেশি হতে পারে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com