আবুল কাশেম গাফুরী\ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের সাতবাড়ীয়া এলাকায় ডাকাতিয়া নদী খননের নামে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে চলছে বালু বিক্রির মহোৎসব। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় উপজেলা যুবলীগ নেতা সেলিম শিপনের নেতৃত্বে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নদীর বালু উত্তোলন করে আশপাশের মানুষের কৃষিজমি ও পুকুর ভরাট করার এক মহোৎসব চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি টাকার বালু বিক্রি করেছে বলে এলাকাবাসী জানান। দেদারসে বালু উত্তোলনের ফলে যে কোন সময় নদীর পাশের প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষদের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে খননকৃত এলাকায় পাকাসড়ক ও বাড়িঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। তাই সরকারি নিয়মনীতি মেনে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদীর খননের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার শত শত মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
জানা গেছে, কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ২০২৩-২০২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৩টি প্যাকেজে ২ জন ঠিকাদার ১০ কিলোমিটার পুরাতন ডাকাতিয়া নদী খননের কার্যাদেশ পান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৭৪ টাকা। কাজ ৩টি গত বছরের ১৪ই জুন থেকে শুরু হয়ে চলতি বছরের ১৫ই জুন শেষ হওয়ার কথা ছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবুল কালাম আজাদের অধীনে রয়েছে ৭ কিলোমিটার এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমসিটি জেবি পেয়েছে ৩ কিলোমিটার।
সরেজমিনে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর পুর্বে ডাকাতিয়া নদী খনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নিয়ম অনুযায়ী ভেকু মেশিন দিয়ে নদীর দু’পাড় বাঁধার কথা থাকলেও সঠিকভাবে বাঁধা হয়নি। প্রায় ১০ কিলোমিটারের মধ্যে পাড়বিহীন রয়েছে ৬ কিলোমিটার। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে ওই সময় পাড় না বেধে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি বিক্রি করেছেন তারা। সরকারি বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি। এবার বড় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে আবারও খনন কাজ শুরু করে। মেশিনটি দিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলণ করা হলে নদীর পাড়ের প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষদের ঘর বাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এত বাধার পরও তারা প্রায় কোটি টাকার বালু বিক্রি করেছে। বালু বিক্রির মূলহোতা যুবলীগ নেতা সেলিম শিপন। স্থানীয় চেয়ারম্যান শেখ কবির টুটুল ও বিএনপি নেতা আইয়ূব বাঙ্গালী ও আবদুল কাইয়ূমকে ম্যানেজ করে বালু বিক্রি করে যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ডাকাতিয়া নদী বছরে কয়বার খনন হয়? মাটি ও বালু দিয়ে তারা পাড় না বেধে বিক্রির সাহস পায় কোথা থেকে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ডাকাতিয়া নদীর বালু লুট হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানায়, প্রতিবাদ করায় তাদেরকে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে যুবলীগ নেতা সেলিম শিপনের লোকজন। আমাদের সহজ কথা নদীর দু’পাশ বাঁধার পর যদি বালু বেশি উত্তোলণ করা প্রয়োজন তাহলে একটি উম্মুক্ত স্থানে বালু উত্তোলণ করে পরে বালুগুলো নিলামে বিক্রি করবে প্রশাসন। তখন ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। আমরা জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের নিকট সরকারি নিয়মনীতি মেনে নদী খননের দাবি জানাচ্ছি।
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা সেলিম শিপন তাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ সরওয়ার বলেন, মাটি বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই। যদি কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মাটি প্রয়োজন হয় ইউএনওর নিকট আবেদন করে মাটি নিতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল আমীন সরকার বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com