এম.এ মান্নান\ লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ ২ উপজেলার সীমান্তবর্তী লাকসামের উত্তরদা ইউনিয়নের নাড়িদিয়া এলাকায় সেতুর নিচে ইটের দেয়াল ও লোহার খাঁচা তৈরী করে ঘাগরিয়া সংযোগ খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়ার এক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে স্থানীয় রূপালি মৎস্য চাষ কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি মৎস্য প্রকল্পকে দায়ী করা হয়। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি। ফলে লাকসাম উপজেলার গোবিন্দপুর, উওরদা ইউনিয়নের মেল্লা, নাড়িদিয়া, আঙ্গারিয়া ও দোখাইয়া গ্রামের ৫শ’ পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়ছে। ব্যাহত হচ্ছে নৌ-চলাচল। বাঁধা দিতে গেলেই দেয়া হচ্ছে নানা হুমকি, করা হচ্ছে মারধর।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় মেল্লা, নাড়িদিয়া, আঙ্গারিয়া ও দোখাইয়া গ্রামের পানিতে ডুবে যাওয়া সড়ক ও বসতবাড়ির পানি এখনো শুকায়নি। প্রায় ২ মাস পেরিয়ে গেলেও পানি নামেনি পুরোপুরি। ওইসব এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল-বিল ও কালভার্টের মুখ বন্ধ করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে প্রায় ১শ’ ৫ কানি (১২ হাজার ৬০০ শতাংশ) জমিতে মাছ চাষ করছে রূপালি মৎস্য চাষ কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি মৎস্য প্রকল্প।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাড়িদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দোখাইয়া আশিরপাড় বাজার পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কের গোবিন্দপুর ইউনিয়নের মেল্লা-নাড়িদীয়া সংযোগ ঘাগরিয়া খালের উপর নির্মিত ব্রিজটির দক্ষিণ পাশে মনোহরগঞ্জ উপজেলার উওর পাশে লাকসাম উপজেলার গ্রামগুলো অবস্থিত। সেই ব্রিজের নিচে চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) কুমিল্লা ও শিক্ষা স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যক্রম (শিসউক) সহযোগিতায় রূপালি মৎস্য চাষ কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ নামে মৎস্য প্রকল্পটি ওই ব্রিজের নিচ থেকে ইটের দেয়াল তুলে ও লোহার খাঁচাসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে ১শ’ ৫ কানি (১২ হাজার ৬০০ শতাংশ) জমিতে মাছের চাষ শুরু করেন। সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যা পানিতে ডুবে গেছে মেল্লা, নাড়িদিয়া, আঙ্গারিয়া ও দোখাইয়া গ্রামের শত-শত বসতবাড়ি ও বিভিন্ন গ্রামীন সড়ক। ব্রিজের নিচে বাঁধ দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রায় পাঁচশ পরিবারের লোকজন। ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। গত ৯ই অক্টোবর বুধবার ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দারা পানিপ্রবাহ বন্ধ হওয়া ব্রিজটির মুখ খুলে দেয়। এতে মৎস্য প্রকল্পের লোকজন এসে তাদেরকে বাঁধা দিলে দু’পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে ২ জন ভুক্তভোগী আহত হন। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পেয়ে নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই সিদ্দিকীর। এ বিষয়ে তিনি তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ইয়াকুব আলী, সিরাজ মিয়া, ফারুক, দুলাল, হাবিবুর রহমান, সোলাইমান, বজু মিয়া, নাজমুল, আজিম, জাবেদ, নুরু মিয়া, আবু সায়েদসহ অন্যান্য কৃষকরা জানান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও স্থানীয় প্রভাবশালী তাদের সহযোগীরা ব্রিজের মুখ বন্ধ করে জোরপূর্বক অবৈধভাবে মাছ চাষ করছেন। পানি নিষ্কাশন বন্ধ করায় পানিবন্দি হয়েছেন শতশত পরিবারের লোকজন। এছাড়াও প্রকল্পের মধ্যে নৌকা চলাচল করতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে মাছ ধরা ও শাপলা তুলার কাজ। কেউ কিছু বললে তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষকদের মারধর করেছে দখলকারীরা।
ঘাগরিয়া খালের সংযোগ ব্রিজের মুখ আটকে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও শতশত কৃষকের ক্ষতি করতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রূপালি মৎস্য চাষ কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ প্রকল্পের পরিচালক আবদুল মান্নান বলেন, এলাকার সবার মতামতে ব্রিজের মুখে লোহার খাঁচা তৈরি করা হয়েছে যাতে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়। এতে দোষের কিছু আছে বলে মনে হয় না। কিছু লোক এর বিরোধিতা করছে। তবে বেশিরভাগ কৃষকই মাছ চাষের জন্য এ মৎস্য প্রকল্প করা হয়েছে।
প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক লিটন বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকার কিছু লোকজন একত্রিত হয়ে প্রকল্পটি শুরু করেন। গত ৫ই আগষ্ট হাসিনা সরকার পতনের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরাও আতœগোপনে থাকায় প্রকল্পটি চরম সংকটে পড়ে। পরে স্থানীয় লোকজন আমাকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে এ পদটি দেয়া হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com