ষ্টাফ রিপোর্টার\ কুমিল্লায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশের ওপর হামলা, থানায় অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র লুটপাটের ঘটনায় বাহিনীর সদস্যরা হতভম্ব হয়ে যান। এরপর থেকে পুলিশকে অনেকটা নিষ্ক্রিয়তায় দেখা যায়। এতে পোয়াবারো হয় জেলার মাদক সিন্ডিকেটের জন্য। এদিকে সীমান্তের অর্ধশতাধিক পয়েন্ট দিয়ে দেদারসে মাদক এলেও তা উদ্ধার করছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অনায়াসেই এসব মাদক রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লার পাঁচটি উপজেলার সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। এসব সীমান্তে কয়েক হাজার মাদক ব্যবসায়ী এবং চোরাকারবারি কাজ করছে। জেলার এসব সীমান্ত দিয়ে রাতের অন্ধকারে ভারত থেকে মাদক আসা অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিজিবির টহল ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিনই জেলায় মাদক প্রবেশ করছে। কিন্তু সম্প্রতি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় মাদক ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে গেছে। এর আগে প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কোটি কোটি টাকার মাদক ধরা পড়লেও গত দেড় মাসে তা অনেকটা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। একটা সময় পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের নজরদারি করলেও এখন তাদের সোর্সরা উলটো পুলিশকে নজরদারি করে ফ্রিস্টাইলে মাদক কুমিল্লা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করছে। এদিকে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে সীমান্ত এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সীমান্তের চৌদ্দগ্রাম, সদর দক্ষিণ, আদর্শ সদর, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অর্ধশতাধিক চোরাইপথে ভারত থেকে মাদক আসছে। স্থানীয়দের দাবি, জেলার আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, বড়জ্বালা, গোলাবাড়ী, আশাবাড়ী, বুড়িচং উপজেলার শঙ্কুচাইল, খারেরা, চড়ানল; ব্রাহ্মণপাড়ার শশীদল ও তেতাভূমি সীমান্ত দিয়ে বেশি মাদক ও চোরাই পণ্য আসছে। সীমান্তের আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তÍপুর এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগে র্যাব, ডিবি এবং পুলিশের ভয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা কিছুটা আতঙ্কে ছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে এখন এ এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রতিরাতেই সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল, ইয়াবা, স্কার্প, টেপেন্ডলসহ নানা ধরনের মাদক আসছে। কোনো কোনো সময় দিনের বেলায়ও ফ্রিস্টাইলে মাদক আসছে। গোলাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, আগে তো সীমান্ত এলাকায় মাদক উদ্ধারে বিজিবির পাশাপাশি ডিবি, র্যাব, পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত টহল এবং গোয়েন্দা তৎপরতা চালাতেন। এখন বিজিবিকে দেখা গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যদের দেখা যাচ্ছে না। ফলে এখন দেদার মাদক আসছে এবং তা অনায়াসেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাদক ব্যবসায়ী বলেন, পুলিশ এখন আর মাদক ধরে না। তাই অনেক নতুন ব্যবসায়ী সৃষ্টি হয়েছে। ওই মাদক ব্যবসায়ীর দাবি, পুলিশ সক্রিয় থাকলে মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা কমে যায়। কুমিল্লা ডিবির ওসি সাজ্জাদ করিম খান বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। এখন থেকে সব ধরনের তৎপরতা জোরদার করা হবে। ইতিঃপূর্বে কিছু মাদক উদ্ধার করে একাধিক মামলা করা হয়েছে। মাদক, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং অপরাধ দমনে কুমিল্লা ডিবি সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। ৬০ বিজিবির ব্যাটালিয়ন কমান্ডার জাবের বিন জব্বার বলেন, কুমিল্লা সীমান্তে মাদক এবং চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি সদস্যরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। ইতোমধ্যে চোরাচালান প্রতিরোধ এবং অপরাধীদের গমনাগমন রোধে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com