ষ্টাফ রিপোর্টার\ বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশীয় আমেরিকানরা কেন ভোট দেন? কিংবা কোন কোন বিষয় তাদেরকে ভোট না দেওয়ার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করে? নিউইয়ক সিটিতে তাদের আবাসস্থল, মসজিদ-মন্দির, স্টোর এবং কুইন্সের চা এবং দোসা খাবারের দোকানে এসব নিয়ে কথা বলে জানা গেছে তাদের চিন্তা-ভাবনার কথা। সমস্ত দণি এশীয় পাড়ার জননী বলা হয় জ্যাকসন হাইটসকে। বিভিন্ন সংস্কৃতির দারুণ মেলবন্ধন ঘটেছে এখানে। এশিয়ার তাদের নিজ নিজ দেশের মধ্যে হয়তো খুব সদ্ভাব নেই। কিন্তু এখানকার রাস্তায় আপনি দেখবেন দারুণ সম্প্রীতি। একটি দোকানেই ভারতীয়, পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি মুদি সামগ্রীর সাইনবোড খুঁজে পাবেন। এখানে একটি রেস্তোরা তঁই মিলবে বাংলাদেশি, চাইনিজ এবং থাই খাবার। আরেকটি বিলাসী খাবারের দোকানের সাইনবো খা যায় সেখানে নেপালি, বাংলা এবং ইন্দো-চীনা খাবারের সম্মিলন ঘটেছে।
উডসাইড এভিনিউতে অতিত সত্যনারায়ণ হিন্দু মন্দিরে যে সমস্ত উপাসক সমবেত হন তারা ভারত, নেপাল, ভুটান এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জর বিভিন্ন শহর ও সম্প্রদায়ের। তারা একই দেবতার পূজা করেন এবং ধর্মীয় ভজন গাইতে মন্দিরের কার্পেট বিছানো মেঝেতে সমবেত হন। তারা একই রকমের অনেক খাবারও ভাগ করে নেন। মশলাদার সমুচা এবং মিষ্টি গুলাব জামুন এ সমস্ত সম্প্রদায়ের কাছে অতি প্রিয়। তবে রাজনীতি এবং আসন্ন নির্বাচনের কথা উঠলে তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ভিন্ন মত ও অনুভূতি রয়েছে। রাজনীতিকে প্রায়শই একটি নোংরা খেলা হিসাবে বিবেচনা করা হয় তাদের পৈত্রিক দেশগুলোতে। ফলে অনেকে রাজনীতির প্রতি উদাসীন। তারা বিশ্বাস করেন, নির্বাচনের তাদের অংশগ্রহণ ফলাফলের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। অবশ্য যারা এখানে দীর্ঘকাল বসবাস করেছেন, তারা জানেন তাদের সংখ্যায় শক্তি রয়েছে এবং তাদের ভোট পার্থক্য নির্ধারণ করতে পারে।
মীনা কাশ্যপ ভারত থেকে এসেছেন। তিনি দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়টিকে কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি বলেন, আমি যখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়েছি, তখন থেকেই সবসময় ভোট দিয়েছি। আমার কাজের অবসরে আমি প্রায়ই নির্বাচন কমিশনের পে কাজ করি। নির্বাচনের সময় আমরা ভোটারদের বলি কোথায় ভোট দিতে যেতে হবে এবং কীভাবে নিজেদের নিবন্ধন করতে হবে। তিনি বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়া আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনি যখন স্থানীয়ভাবে সঠিক লোকদের নির্বাচিত করতে পারেন তখন আপনি নিশ্চিত হন যে উপরে যা কিছুই ঘটুক না কেন আপনার সবকিছু দেখার জন্য সঠিক ব্যক্িিত আছেন। তিনিই আপনার জনপ্রতিনিধি, আপনার মুখপাত্র।
কাশ্যপ পছন্দ করেন মশলাদার চাট এবং আলু টিক্কির প্লেট। লাচ্চিও তার প্রিয়। এখানকার শাড়ির দোকান, বিউটি পার্লার, বুটিক এবং মিঠাই তার বিচরণ। সর্বত্রই এখানকার লোকেরা ভদ্র এবং বন্ধুত্বপূর্ণ বলে জানা কাশ্যপ। তবে তারা তাদের ভোট দেওয়ার ধরণ সম্পর্কে খুব বেশি প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক। একটি বিউটি পার্লারে অনেকের সঙ্গে খোশগল্প করার পরও তারা সংবাদপত্রের জন্য তাদের নাম এবং ছবি প্রকাশ করা নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল। এর একটি কারণ হল তাদের মধ্যে অনেকেই নবাগত, ভোটার নয় তারা। অনেক অভিবাসী বছরের পর বছর ধরে এখানে আছেন অবৈধভাবে। কিন্তু এখনো তাদের কাগজপত্র যোগাড় হয়নি। তবে ভবিষ্যতে তাদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।
একজন তরুণ নেপালি বলেন, তিনি ভোট দিতে পছন্দ করেন। কিন্তু এখনো তার কাগজপত্র জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফাস্টফুডের দোকানে কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিকও একই মন্তব্য করেন। প্রকৃতপক্ষে, আমেরিকান নাগরিকত্ব লাভের স্বপ্নই অনেককে এই দেশে নিয়ে এসেছে। তবে অনেকে এখনও অস্থির সময় পার করছেন। তারা বৈধতা পাননি। একবার নাগরিকত্ব পেলে তারা সাধারণত: কিছু ভাল বেতনের চাকরি পেতে সক্ষম হবেন। জ্যাকসন হাইটস্-এর ৭৪তম স্ট্রিটের একটি পুরনো জনপ্রিয় শাড়ির দোকানে দেখা যায় পুরো শান্ত পরিবেশ। এর মালিক একজন ভারতীয় আমেরিকান। এই দোকানি বলেন, তিনি সবসময় ভোট দেন। কিন্তু তিনি নিউ জার্সির বাসিন্দা। তার ম্যানেজার জানান, সময় সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি সবসময় ভোট দিতে পারেন না। তবে তার মেয়েরা সবসময় ভোট দেন।
এখানে কর্মরত বাংলাদেশি অনেক মহিলা কর্মীরা তাদের ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলতে সবচেয়ে বেশি উৎসাহী ছিলেন। তাদের একজন সামিহা চৌধুরী। তিনি কাষ্টমারদের শাড়ি এবং কোর্তার পিস দেখিয়ে থাকেন। তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে এ দোকানে কাজ করছেন। সামিহা বলেন, তিনি গত ২৮ বছর ধরে ভোট দিয়েছেন। তার পুরো পরিবার বাংলাদেশে ভোট দিতেন এবং এখানেও সেই ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন তারা। কেয়া খাদিজাও এসেছেন বাংলাদেশ থেকে। এখানে মাত্র এক বছর হয়েছে তার। তার কাগজপত্র প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। তিনি এখানে তার স্বামী এবং সন্তানদের সঙ্গে আছেন। তিনি জানান, তারা সবসময় বাংলাদেশে ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি সম্প্রদায় ভোটদানে খুবই সক্রিয় এবং আমিও ভোট দেব। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি এবং বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে ভালো নেতৃত্ব দরকার।’ দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায় অভিন্ন জাতি নয়। তাদের মধ্যে বেশ বৈচিত্র। অনেকেই এখানে জন্মগ্রহণ করেছেন, এখানে শিতি হয়েছেন বা বছরের পর বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন। তাদের জন্য ভোট দেওয়া সাধারণ ব্যাপার। অনেকে এখনও স্ট্রাগলাস কাবের’ সদস্য।
এ ছাড়া, প্রবীণ প্রবাসীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী ভোটদানকারী সম্প্রদায় তৈরি করার জন্য এই কণ্ঠহীন লোকদের সুযোগ এবং তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে- যাতে তারা ভাল নাগরিক হতে পারেন। সাউথ এশিয়ান কাউন্সিল ফর সোশ্যাল সার্ভিসের (এসএসিএসএস) প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক সুধা আচার্য জানান, তার সংগঠনের ল্য হল দক্ষিণ এশীয়দের মতায়ন করা এবং কুইন্সের নাগরিক জীবনে একীভূত করা। তিনি বলেন, ‘আমাদের নাগরিক আছে, আমাদের গ্রিনকার্ডধারী আছে এবং আমাদের কাছে এমন লোকও আছে যাদের কোনো কাগজপত্র নেই। সংস্থাটির খাদ্য ব্যাংক, আইনি ক্লিনিক, নাগরিক ব্যস্ততা, স্বাস্থ্য ক্লিনিক, কর্মশক্তি উন্নয়ন এবং ভাষা সেখার সুবিধা দিয়ে থাকেন। সুধা আচার্য বলেন, আমরা তাদের স্বাস্থ্য বীমা এবং ফুড স্ট্যাম্পের মতো সুবিধার সাথে সংযুক্ত করি এবং তাদের জন্য পরিষেবার ব্যবস্থা করি। আমরা তাদের নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতন করি এবং বোঝাই যে কীভাবে তারা পুরো রাজনৈতিক কাঠামোর অংশ। আমরা তাদের ভোট দিতে উৎসাহিত করি। নির্বাচনের সময় সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকরা দণি এশীয় সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার লোকের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করেন। সুধা আচার্য বলেন, ‘আমি মনে করি সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল এবং ভাষাভিত্তিক এই জনসংখ্যার জন্য নেতাদের সমর্থন থাকা উচিত। যারা এই বৈচিত্র্যকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে, আমি এমন প্রার্থীকেই সমর্থন করব। জিওটিভি বাগেট আউট দ্য ভোট প্রচেষ্টার সাথে জড়িত একটি সংস্থা হল অধিকার। জ্যাকসন হাইটসে অবস্থিত এটি একটি মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচার সংস্থা। সুত্র: খবর রিপোর্ট
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com