ষ্টাফ রিপোর্টার॥ পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের নান্দনিক নকশায় নির্মিত কুমিল্লার ৩টি রেলওয়ে স্টেশনে থামছে না ট্রেন, নেই লোকবল। আর তাই রেল কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নান্দনিক ৩টি স্টেশনের সৌন্দর্য মøান হচ্ছে ও চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। অপরদিকে স্টেশন ৩টি টিকটক ভিডিওর শুটিংস্থল এবং স্থানীয় কৃষি পরিবারগুলোর জন্য ধান মাড়াই ও শুকানোর জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনমনে প্রশ্ন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার ময়নামতি এবং লালমাই উপজেলার লালমাই ও আলীশহর এলাকার ৩টি রেলওয়ে স্টেশনে যেহেতু ট্রেন থামে না, তাহলে বিপুল অর্থ ব্যয় করে নান্দনিক নকশায় ওই ৩টি স্টেশন কার স্বার্থে নির্মাণ করা হয়েছে? বিপুল অর্থ অপচয় করে এমন প্রকল্প মেনে নেয়া যায় না।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের অনুমোদন হয়। এ প্রকল্পের আওতায় কম্পিউটারাইজড সিগন্যাল ব্যবস্থাসহ ১১টি নতুন রেলস্টেশন ও ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওই ৩টি স্টেশন রয়েছে। চীনা রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন, বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার যৌথভাবে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময়ে পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন কুমিল্লা-৯ আসনের এমপি আ.হ.ম মুস্তফা কামাল এবং রেলপথমন্ত্রী ছিলেন কুমিল্লা-১১ আসনের এমপি মো. মুজিবুল হক। তখন আ.হ.ম মুস্তফা কামালের সুপারিশে তার নির্বাচনী এলাকার ময়নামতি, লালমাই ও আলীশহরে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকায় নতুন ৩টি স্টেশন নির্মাণ করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের এ ৩টি স্টেশনের ওপর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩২টি ট্রেন চলাচল করলেও থামে না কোনো ট্রেন।
সরেজমিনে রেলওয়ে স্টেশন ৩টি ঘুরে দেখা গেছে, নান্দনিক নকশায় নির্মিত এসব স্টেশনে রয়েছে সুবিশাল প্ল্যাটফর্ম, যাত্রীদের বসার বেঞ্চ, অপেক্ষাগার, নারী-পুরুষদের পৃথক শৌচাগার, স্টেশন ম্যানেজারের অফিস, টিকেট বিক্রির কক্ষ, সার্ভার কক্ষ, বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, পানির ট্যাঙ্কসহ সকল সুযোগ-সুবিধা এবং স্টেশন পারাপারে দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রিজ। আধুনিক মানের এসব স্টেশনে যাত্রীদের সেবায় সকল আয়োজন থাকলেও ভোগ করার কোন সুযোগ নেই। কেননা, ওই তিনিটি স্টেশনে থামে না ট্রেন, আর তাই অপেক্ষা করে না কোন যাত্রী।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এতো সুন্দর তিনটি স্টেশন, অথচ যাত্রীদের কোন কাজে আসছে না। অনেকটা পরিত্যক্তই বলা চলে। স্টেশন তিনটিতে টিকটক ভিডিও তৈরি করার জন্য ছেলে-মেয়েরা প্রতিনিয়তই আসা যাওয়া করে। আর প্ল্যাটফর্ম জুড়ে স্থানীয় কৃষকরা ধান শুকানো ও মাড়াইয়ের কাজ করে। এসব কারনে স্টেশন তিনটির সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
রেলওয়ের নিজস্ব লোকবল না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের লোকজন স্টেশন পাহারা দেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি আশরাফ আলী জানান, ময়নামতি স্টেশনে রেলওয়ের কোন কর্মচারী নেই, তাই তারা রাতে-দিনে ডিউটি করেন। তবুও যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে যাচ্ছে। আলীশহর স্টেশনে রয়েছেন ম্যাক্সের কর্মচারি প্রদীপ দাস। তিনি জানান, এখানে রেলওয়ের নিযুক্ত কেউ নেই। তাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশে পাহারা দিচ্ছেন। লালমাই স্টেশনের মাস্টার কাজী আবদুল মান্নান জানান, এ স্টেশনে এখন শুধু লোকাল ট্রেন নাসিরাবাদ যাত্রা বিরতি দেয়। জনবল সংকটে এখানে টিকেট বিক্রি হয় না।
রেলওয়ে কুমিল্লার সিনিয়র উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিগন্যাল) আহমদ আলী বলেন, ওই তিনটি স্টেশন নিয়ে প্রতিদিন টেনশনে থাকতে হচ্ছে। গত এক বছরে এসব স্টেশন থেকে বেশ কিছু পয়েন্ট মেশিন, জংশন বক্স ও ক্যাবল চুরি হয়ে গেছে। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দেয়া হলেও মালামাল উদ্ধার হয়নি। জনবল না থাকায় মূল্যবান অনেক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে রেলপথ ও আধুনিক স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। জনবল নিয়োগ দেয়ার পর ময়নামতি, লালমাই ও আলীশহর স্টেশনে কোনো ট্রেন থামানো যায় কি-না আমরা তা সমীক্ষা করে দেখবো।
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com