নিজস্ব প্রতিনিধি\ কুমিল্লার লালমাই উপজেলার দুর্লভপুরে আবু বকর সিদ্দিক (২৭) নামের এক সিঙ্গাপুর প্রবাসীর বিয়ের দিন ছিল গত শনিবার। কিন্তু একদিন আগে শুক্রবার (৮ই মার্চ) দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। পরিবারের দাবি ওই প্রবাসী বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুক্রবার ভোর পৌনে ৬টার মধ্যে যেকোনো সময় বাড়ির আঙিনায় একটি নির্মাণাধীন পিলারের রডের সঙ্গে নিজের পরনের কাপড়ের বেল্টে গলা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
পুলিশ ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লালমাই উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের আবদুর রশিদের দ্বিতীয় ছেলে আবু বকর ছিদ্দিক সিঙ্গাপুরে থাকতেন। বিয়ের জন্য পরিবার থেকে পাত্রী পছন্দ করায় গত জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি দেশে আসেন। দেশে আসার পর পরিবারের পছন্দের সেই পাত্রীকে নিজেও আনুষ্ঠানিকভাবে দেখে পছন্দ করেন। পাত্রী কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্সে পড়ছেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রবাসীর বাবা আবদুর রশিদ ও বড় ভাই ওমর ফারুক পাশের গ্রামের পাত্রীর বাড়িতে গিয়ে শনিবার বিয়ের দিন ঠিক করেন এবং ৩ লাখ টাকা কাবিন নির্ধারণ করেন।
নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হওয়া সেই কলেজ ছাত্রী বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ঘুমানোর আগে তিনি আমার সঙ্গে ৩৭ মিনিট হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেছেন। অনুমান ১১টায় কল বিচ্ছিন্নের আগে ধর্মীয় নিয়ম মেনে হাসি-খুশিভাবেই তিনি আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমার কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না তিনি আত্মহত্যা করেছেন। গত কয়েকদিনে মনে হয়েছে তিনি একজন ভদ্র ও নামাজি মানুষ ছিলেন।
আমি কাউকে অভিযোগ করছি না, মৃত্যুর কারণ নিশ্চয় প্রশাসন তদন্ত করে বের করবেন। তাছাড়া আল্লাহ সবকিছু দেখেছেন।
দুর্লভপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, প্রবাসী আবু বকর সিদ্দিক একজন ভদ্র ছেলে। সে আত্মহত্যা করতে পারে না। এটা হত্যা কিনা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। একদিন পরে যে বাড়িতে বিয়ে সেই বাড়িতে বিয়ের কোনো প্রস্তুতিও ছিল না। এটাও মৃত্যু রহস্যের একটি অংশ। তাছাড়া পিলারে ঝুলে আত্মহত্যা করলে পিলারের ঘষায় নিহতের শরীরে ক্ষত তৈরি হওয়ার কথা, সেটাও নেই। নিহতের পরিবারের সদস্যদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে মৃত্যুর রহস্য বের হতে পারে।
নিহত আবু বকর সিদ্দিকের মা কান্নাজনিত কণ্ঠে বিয়ের মালামাল ভর্তি লাগেজ জড়িয়ে ধরে বলেন, রাত ১২টায় হাসি-খুশিভাবে আমাদের বিদায় দিয়েছে ছেলে। বলেছে আমি ঘুমাব মা। আপনারা ওই ঘরে যান। সকালে উঠতে হবে। এরপর আমরা অন্য ঘরে গিয়ে ঘুমাই। সকালে উঠে দেখি ছেলের লাশ।
লালমাই থানার উপ-পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা প্রবাসীর বাড়ির আঙিনা থেকে শোয়ানো অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করি। নিহতের শরীরের কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে গলায় একটি দাগ রয়েছে। নিহতের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন একটি নির্মাণাধীন পিলারের রডের সঙ্গে প্রবাসী নিজের পরনের বেল্ট পেঁচিয়ে ঝুলেছিল। ভোরে তারা দেখার পর বেল্ট কেটে লাশ নামিয়ে আনে।
লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, প্রবাসীর বাড়ির আঙিনা থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের বাবা আবদুর রশিদ বাদি হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করেছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com