বাংলাদেশিদের জন্য জাপানে কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দেশটির জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এ পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিচ্ছে জাপান। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর থেকে জাপানে কর্মী পাঠানোর সুযোগ তৈরি হলেও এখনো সে সম্ভাবনা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে জাপানে প্রায় ২৬ হাজার বাংলাদেশি কর্মী আছেন। তুলনামূলকভাবে নেপাল ইতোমধ্যে আড়াই লাখ কর্মী পাঠিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নেপালের সাফল্যের মূল কারণ হলো ভাষা শেখার প্রতি আগ্রহ এবং প্রস্তুতি। জাপানে কাজ করতে হলে জাপানি ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বর্তমানে দেশে জাপানি ভাষা শেখানোর একাধিক কোর্স চালু আছে। বাংলাদেশ কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-এর অধীনে ৩২টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ভাষা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রিন ইউনিভার্সিটি ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রশিক্ষণকেন্দ্রেও ভাষা শেখানো হচ্ছে।
জাপানে কর্মীদের জন্য বেতন-ভাতা আকর্ষণীয়। দেশটির শ্রম আইন অনুযায়ী, ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টাপ্রতি প্রায় ৭০০ টাকা। ফলে মাসে গড়ে এক লাখ ৩৫ হাজার থেকে এক লাখ ৫৭ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। সব বেতন সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। এ কারণে সেখানে দালালি বা অনিয়মের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জাপানে অন্তত ১৪টি খাতে বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে নার্সিং কেয়ার বা কেয়ার গিভার, নির্মাণ, কৃষি, ইলেকট্রনিকস, অটোমোবাইল, রেস্টুরেন্ট, শিল্প প্যাকেজিং ও জাহাজ নির্মাণ খাতে কর্মীর চাহিদা বেশি। বর্তমানে কেবল কেয়ার গিভার খাতেই প্রায় ৬০ হাজার কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে।
সরকার জাপানে কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালে দুই হাজার, ২০২৭ সালে ছয় হাজার, ২০২৮ সালে বারো হাজার, ২০২৯ সালে ত্রিশ হাজার এবং ২০৩০ সালে ৫০ হাজার কর্মী পাঠানোর সুযোগ তৈরি হবে। এজন্য ‘জাপান সেল’ নামে একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করা হয়েছে।
জাপানের জন্মহার গত ১২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭০ সালের মধ্যে দেশটির জনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে ৮ কোটি ৭০ লাখে। তখন প্রতি ১০ জনে ৪ জনের বয়স হবে ৬৫ বছর বা তার বেশি। ফলে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ঘাটতি পূরণে বিদেশি কর্মীদের ওপর নির্ভরশীলতা আরও বাড়বে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাংলাদেশিরা যদি আন্তরিকভাবে জাপানি ভাষা শেখে এবং প্রশিক্ষিত হয়, তবে অদূর ভবিষ্যতে জাপানের শ্রমবাজারে বড় অবস্থান তৈরি করতে পারবে। এর মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com