ষ্টাফ রিপোর্টার॥ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই সংস্কার ও বিচার কার্য সম্পন্ন করে ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘পলাতক স্বৈরাচারের শাসনামলে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছিলো। বিগত তিনটি নির্বাচনের নামেই জাতির সঙ্গে শেখ হাসিনা প্রহসন করেছিলেন।’ শুক্রবার (১৮ই এপ্রিল) সকালে কুমিল্লা জেলার ঐতিহ্যবাহী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা জামায়াতের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিশাল কর্মী সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব দাবী রেখেছিলেন।

জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ডেটলাইনের মধ্যে সব সংস্কার এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের বিচার দৃশ্যমান করে নির্বাচন হতে হবে। আর সেই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী অংশ নিবেন। মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা আল্লাহর রহমত ও বরকতের বাংলাদেশ চাই। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা স্থানান্তরের একটি ডেটলাইন দিয়েছেন। এর মধ্যেই সব সংস্কার শেষে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করে নির্বাচন দিতে হবে। আমরা সেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। নির্বাচন নিয়ে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে অনেকে ভুল বোঝার চেষ্টা করছেন বলে জামায়াতের আমির বিষয়টি ফের খোলাসা করে বলেছেন- আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা জামায়াত আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের শেষে জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার ৪টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এর মধ্যে কুমিল্লা-৮ আসনে শফিকুল আলম (হেলাল), কুমিল্লা-৯ আসনে এ কে এম সৈয়দ সরওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, কুমিল্লা-১০ আসনে ইয়াছিন আরাফাত এবং কুমিল্লা-১১ আসনে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নাম ঘোষণা করা হয়। মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের জুন এবং ২০২৫-এর ডিসেম্বর দু’টি ডেটলাইন দিয়েছেন। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, যে ডেটলাইন দেওয়া হয়েছে- এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করলে আমাদের আপত্তি নেই। তবে ১৪, ১৮ ও ২৪-এর মতো নির্বাচন হলে এ দেশের মানুষ আর কখনোই এমন নির্বাচন হতে দেবে না। নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার জন্য পুলিশে সংস্কার, সংবিধানের সংস্কার, প্রশাসনের সংস্কারসহ সব সংস্কার ন্যূনতমভাবে হলেও শেষ করতে হবে। হাসিনা ও তাঁর সহযোগীরা- যাঁরা দেশকে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের বিচার হতে হবে। বিচার দৃশ্যমান করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে এবং আমরা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো।’ নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরে মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন যে, “নতুন বাংলাদেশ হবে পূর্ণ স্বাধীন, জনগণের অধিকার থাকবে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, ইনসাফপূর্ণ অর্থনীতি হবে, এ দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হবে না। গত ১৬ বছর আমাদের ভোটাধিকার ছিল না, গণতন্ত্র ছিল না, আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকার। সেই ১৭ বছর একটি কালো অধ্যায় পার করেছি আমরা।

তাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে জণগণকে তাঁদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।’ উক্ত কর্মী সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম। বিশেষ অতিথি ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবদুর রব, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আমির মু. শাহজাহান, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা সেক্রেটারি এ কে এম সৈয়দ সরোয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরা সদস্য মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি আবদুল মমিন, মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, লাকসাম উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির জহিরুল ইসলাম এবং কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১–এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মুহাম্মদ বদিউল আলম (সুজন) প্রমুখ। লাকসাম পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর আমির মু. জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে আয়োজিত এই বিশাল অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, লাকসাম পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মু.শহিদ উল্যাহ ও উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মু. জোবায়ের ফয়সাল। উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জন্য প্রবেশ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এই লাকসামের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক দল সাংবাদিকদের এইভাবে সম্মান জানিয়েছেন তাদের প্রোগ্রাম কাভারেজ করার জন্য। তবে এখানে কয়েকজন পেশাদার সাংবাদিক না হলেও তথাকথিত কয়েকজনও এমন সাংবাদিক কার্ড পেয়ে গেছেন বলে সোস্যাল মিডিয়ায় দেখা গেছে।