শাহাদাত হোসেন\ কুমিল্লার লাকসাম-মনোহরগঞ্জ সড়কটির বেহাল দশায় জনগনকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় দুই বছর ধরে কোন সংস্কার না করায় সড়কটিতে অসংখ্য খানা-খন্দক সৃষ্টি হয়েছে। কুমিল্লা জেলা শহর থেকে লাকসাম হয়ে মনোহরগঞ্জ উপজেলা সদরে যাতায়াতের এটি একমাত্র মাধ্যম। গত বছরের আগস্টের বন্যায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নেয়। বণ্যা পরবর্র্তী সড়কটিতে কোন সংস্কার না করায় বর্তমানে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির মনোহরগঞ্জ বাজার থেকে আশিরপাড় বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশের নির্মাণকাজ গত বছরের জুনে শুরু করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী এ বছরের জুনের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা। কিন্তু কাজ শুরুর পরই আগস্টের বন্যার পর সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরে কাজে আরো কিছু অংশ যুক্ত করা হয়। সেটি চূড়ান্তভাবে এলজিইডি প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদন হয়ে না আসায় বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে।
কুমিল্লা জেলার সর্ব দক্ষিন প্রান্থের এ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের জনগনের জেলা শহরসহ রাজধানী ঢাকা ও চট্রগ্রামে যাতায়াতের অন্যতম প্রধান এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে থাকে। উপরন্তু আবাসিক সমস্যার কারনে উপজেলায় কর্মরত অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়া করে থাকেন। কিন্তু সড়কের করুন দশায় তাঁরাও ত্যক্ত, বিরক্ত, অতিষ্ট।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির মনোহরগঞ্জ অংশের পাঁচ কিলোমিটার অংশের পুরোটাই ভাঙাচোরা। বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে সড়কটি পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। সড়কের হাটিরপাড়, রশিদপুর, খানাতুয়া, মেরুয়া ও আশিরপাড় অংশে অসংখ্য বড় বড় গর্ত।
এখানে প্রায়ই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। গত কয়েক মাসে সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্ট গর্তে উল্টে পড়েছে অন্তত ১০টি গাড়ি। গত সপ্তাহে মালবাহী একটি ট্রাক উল্টে পাশ্ববর্তী পুকুরে পড়ে যায়। এ সড়কে যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, যাত্রী ও পথচারীরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে যায়। তখন গাড়ী চালকরা পড়েন মহাবিপাকে।
স্থানীয়রা জানায়, গত বছর কাজ করার জন্য পুরো সড়কটির পিচঢালাই উপড়ে ফেলায় এমন গর্ত সৃষ্টি হয়ে সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী। তবে কেবল মনোহরগঞ্জ উপজেলার অংশই নয়; লাকসাম উপজেলার গাজিরপাড়, মিজিয়াপাড়া, গোবিন্দপুরসহ অধিকাংশ জায়গায় বন্যার ক্ষত এখনো দৃশ্যমান। মনোহরগঞ্জ উপজেলা সদরে চলাচলের প্রধান সড়ক হওয়ায় বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী সড়কটি দিয়ে মানুষকে বাধ্য হয়েই চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
মনোহরগঞ্জ উপজেলার পোমগাঁও গ্রামের লাকসাম কলেজে অনার্স পড়–য়া শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা খুশবু, শিমুল, রিমা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। এরই মধ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের সড়ক মেরামতের নামে বিপদে ফেলে রাখা হয়েছে। আমরা কলেজে যাওয়ার জন্য এক ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হতে হয়। আবার রাস্তা নষ্ট থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়। নিয়মিত কলেজে যাওয়া-আসা করে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ি। কাজ শুরুর পর সড়কটির দুই পাশে গর্ত করে দুই ফুট বাড়ানো হয়। এ ছাড়া আর তেমন কোনো কাজই করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
রশিদপুর গ্রামের বাসিন্দা মহিন উদ্দিন বলেন, গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরের বন্যায় সড়কটি পানির নিচে ডুবে গেলে বন্ধ হয়ে যায় যাত্রী পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম সিএনজিচালিত অটোরিকশা। তখন বিকল্প হিসেবে প্রায় দেড়মাসব্যাপী বন্যায় এ সড়কে যাত্রী পরিবহনে চলাচল করে পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক্টর। এতে সড়কটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্মাণকাজের শুরু থেকেই ধীরগতি হওয়ায় সড়কটি দিয়ে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।
মনোহরগঞ্জের আশিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মনোহরগঞ্জ থেকে লাকসাম চলাচল করছি দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে। দুর্ভোগের অপর নাম সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই সড়কটি বর্তমানে চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক বেলাল হোসেন বলেন, পুরো সড়কটি ছোট-বড় অসংখ্য গর্তে ভরা। একটু বৃষ্টি হলেই গর্তগুলো পানিতে ভরে যায় এবং পরে কাদায় একাকার হয়ে যায়। এসব কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে সড়টিতে। আমরা চাই দ্রæত সড়কটি মেরামত করা হোক।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), মনোহরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, সড়কটির দু’পাশে এক ফুট করে দুই ফুট বাড়ানো হয়েছে। ১৬ ফুট প্রস্থের সড়কটি গতবছর বন্যায় কার্পেটিং উঠে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে কাজটিতে বন্যার পর আরো কিছু অংশ যুক্ত করা হয়। আশা করছি খুব অল্প সময়ে কাজটি শুরু করা যাবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক:
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া
সহযোগী সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ
অফিস: সম্পাদক কর্তৃক আজমিরী প্রেস, নিউমার্কেট চান্দিনা প্লাজা, কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত ও ১৩০৭, ব্যাংক রোড, লাকসাম, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত। ফোন: ০২৩৩৪৪০৭৩৮১, মোবাইল: ০১৭১৫-৬৮১১৪৮, সম্পাদক, সরাসরি: ০১৭১২-২১৬২০২, Email: laksambarta@live.com, s.bhouian@live.com