বৃহস্পতিবার, ১৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সভায় প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ

<span class="entry-title-primary">আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সভায় প্রধান উপদেষ্টা</span> <span class="entry-subtitle">ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ</span>
২৪ Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ ডিসেম্বরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর সব প্রস্তুতি শেষ হলে রমজানের আগেই (ফেব্রæয়ারির প্রথমার্ধে) ১৩তম জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। গত বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতিসংক্রান্ত সভায় তিনি এ নির্দেশনা দিয়েছেন। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

            শফিকুল আলম বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে করতে চায় সরকার। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব ধরনের প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ হলে আগামী রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। প্রস্তুতি শেষ না হলে এপ্রিলেও হতে পারে। একই সঙ্গে প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্র যেন সিসিটিভির আওতায় থাকে তা নিশ্চিত করতে বলেছেন। সভায় জানানো হয়, এবারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শফিকুল আলম বলেন, প্রস্তুতির মধ্যে অনেক বিষয় আছে। যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে (পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড) ১৭ হাজার নতুন সদস্য নেয়া হচ্ছে। তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ যেন এই সময়ের মধ্যে শেষ হয়, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও নির্বাচন সামনে রেখে অনেক পাঁয়তারা হয়, যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে নির্বাচন সামনে রেখে আগামী মাসগুলোয় কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে থাকবে। তিনি জানান, নির্বাচনের সময় ১৮-৩২ বছর বয়সি ভোটারদের আলাদা বুথ রাখা যায় কিনা, সে বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও গত ৩টি নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের বাদ দিয়ে নির্বাচনি কর্মকর্তা নিয়োগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

            শফিকুল আলম বলেন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের অনেক সময় এই ভোট বিষয়ে প্রশিক্ষণের অভাব থাকে। তাদের কীভাবে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভোটের জন্য প্রস্তুত করা যায়, সে বিষয়ে নির্দেশনা এসেছে। আগে নির্বাচনের সময় ৪ দিন পুলিশ বা সিকিউরিটি ফোর্স মোতায়েন থাকত। এবার বলা হয়েছে, এটা কীভাবে ৭ দিন করা যায়, যাতে ভোটের আগে যে কোনো ধরনের ভায়োলেন্স প্রতিহত করা যায় এবং ভোটের পরেও যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনের আগে ডিসি, এসপি, ওসি, ইউএনওদের রদবদল করার কথা বলা হয়েছে। রিহার্সেল কীভাবে করা হবে, এটা একটা র‌্যান্ডমওয়েতে কাজ করবে। শফিকুল আলম বলেন, আনুমানিক ৪৭ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৬ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট করা যায়, সেই নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন। পুলিশের বডি ক্যামেরা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সিসিটিভি মনিটরিং যেন ঠিকমতো হয়, তার প্রশিক্ষণ, এ নিয়ে কাজ করতে বলেছেন।

            আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবারের নির্বাচনে ২ লাখের বেশি পর্যবেক্ষক থাকবেন। কিন্তু আগের নির্বাচনগুলোতে দলীয় কর্মীদের পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এ বছর সে রকম যাতে না ঘটে সেটি নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়াও নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আগের নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, দলীয় কর্মীদের সাংবাদিক পরিচয়ে কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এবার সে সুযোগ থাকবে না। প্রকৃত গণমাধ্যমকর্মীরা যাতে কাজ করতে পারেন সেটি নিশ্চিত করা হবে। একইভাবে গণমাধ্যমকর্মীরা কী করতে পারবেন সে ব্যাপারে ধারণা থাকতে হবে। অন্যদিকে নির্বাচন কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কী আচরণ করবেন সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

            আওয়ামী সরকারের পতনের পর ৮ই আগস্ট দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতী সরকার। এরপর থেকেই সংসদ নির্বাচন যত দ্রæত সম্ভব আয়োজনের তাগিদ দিয়ে আসছে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল। ১৩ই জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা আসে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রæয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। এরপর ২৬শে জুন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারপর থেকেই দেশের রাজনীতির মাঠে কিছুটা নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু করেছে।

Share This