শুক্রবার, ৪ঠা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আওয়ামী লীগ আমলের বিতর্কিত ৩ নির্বাচন তদন্তে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত

আওয়ামী লীগ আমলের বিতর্কিত ৩ নির্বাচন  তদন্তে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত
Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত হওয়া ৩টি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রশাসনের ভূমিকাকে ঘিরে ওঠা অভিযোগ তদন্তে এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বতী সরকার। গত বৃহস্পতিবার (২৬শে জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

            মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ৩টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে বহু বিতর্ক, সমালোচনার অভিযোগ উঠেছে। এই তিন নির্বাচনে নানা কৌশলে জনগণের ভোটাধিকার ভূলুণ্ঠিত করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে পুনরায় নির্বাচিত করার অভিযোগ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিগত ৩টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত এবং ভবিষ্যতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের উদ্দেশ্যে সুপারিশ প্রণয়নে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।

            হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে এ কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- শামীম আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব (গ্রেড-১), কাজী মাহফুজুল হক (সুপণ), সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ব্যারিস্টার তাজরিয়ান আকরাম হোসাইন, অ্যাডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা ও ড. মো. আব্দুল আলীম, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ।

            ১) ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনসমূহ বিষয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষক, দেশি ও বিদেশি তদারকি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিবেদন এবং গণমাধ্যমে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ বিশ্লেষণ।

            ২) এসব নির্বাচনের বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগ এবং সার্বিকভাবে এগুলোর নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ ও বিশ্লে­ষণ।

            ৩) এসব নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধ করতে ও জনগণের ভোটাধিকার প্রদানে বাধাগ্রস্ত করতে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল ও সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা বিশ্লেষণ।

            ৪) নির্বাচনসমূহে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন, এর সচিবালয় ও প্রশাসনের ভূমিকা বিশ্লেষণ।

            ৫) নির্বাচন কার্যক্রমে আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা বিশ্লেষণ।

            ৬) তৎকালীন নির্বাচন কমিশনসমূহের বিরুদ্ধে উত্থাপিত আর্থিক অনিয়মের অভিযোগসমূহ যাচাই ও অনুসন্ধান।

            ৭) বিশ্লেষণের ভিত্তিতে উল্লে­খিত নির্বাচনসমূহে অনিয়মের দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং

            ৮) ভবিষ্যতের সব নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে সংশ্লিষ্ট আইন, বিধিবিধান, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনিক আয়োজনের কাঙ্খিত ভূমিকা, পরিবর্তন ও রূপরেখা বিষয়ে সুপারিশ প্রদান।

            কমিটিকে আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। একই ঘোষিত কমিটিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সাচিবিক সহায়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কমিটি প্রয়োজনে যেকোনো দপ্তরের দলিল দস্তাবেজ তলব করতে ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। একই সঙ্গে প্রয়োজনে কমিটি সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

            উল্লেখ্য, গত ১৬ই জুন বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারেরা ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ-সংক্রান্ত আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন তিনি।

Share This

COMMENTS