আমনের ভরা মৌসুমে বাড়ছে চালের দাম


ষ্টাফ রিপোর্টার॥ নিত্যপণ্যের বাজারে চালের দাম বাড়লেও কমেছে আলু পেঁয়াজ ও ডিমের দাম। দু’সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে দাম বেড়েছে ৩-৫ টাকা পর্যন্ত। দেশের প্রধান খাদ্যশস্য চালের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে মিলমালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।
এদিকে, সরবরাহ বাড়ায় শীতকালীন শাক-সবজির দাম কমেছে। আটা, ডাল, চিনি ও মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দেশী মাছের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি। দাম কমানোর পরও সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি বাজারে। ফলে বাড়তি দাম দিয়েই সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে।
গত সোমবার বিভিন্ন বাজার থেকে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দেশে এখন আমনের ভরা মৌসুম চলছে। এর মধ্যেই পাইকারিতে চালের দাম বেড়েছে। গত ২ সপ্তাহে বস্তা প্রতি ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তাতে খুচরা পর্যায়ে সরু চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা এবং মোটা ও মাঝারি চালের দাম ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে।
খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়তি। এর প্রভাবেই খুচরা ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে। চালকল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বাড়ায় তাঁরা চালের দাম বাড়িয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, আমনের ভরা মৌসুমে ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন। এতে করে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন।
জানা যায়, গত ২ সপ্তাহে পাইকারি বাজারে বস্তপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। তাতে খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা। তবে কোথাও কোথাও বস্তা প্রতি দাম ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সরু চালের দাম। খুচরা পর্যায়ে কোম্পানি ও মানভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৭৫-৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা সপ্তাহ দুই আগে ছিল ৭২-৮০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা দাম বেড়েছে। সরু চালের পাশাপাশি মাঝারি ও মোটা চালের দামও প্রতি কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। যেমন মাঝারি মানের ব্রি-২৮ চালের কেজি এখন ৬০ টাকা, যা দুই সপ্তাহ আগে ৫৮ টাকা ছিল। মানভেদে মোটা স্বর্ণা চাল বর্তমানে ৫২-৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ৫০-৫৫ টাকা ছিল। এ ছাড়া সুগন্ধি তথা বাসমতী চালের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা করে বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বিক্রির বড় মোকাম তথা চালকল পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। চালের উৎপাদন হিসেবে খ্যাত দিনাজপুরের বাহাদুর বাজার, কুষ্টিয়ার খাজানগর এবং নওগাঁয় মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা চালের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালকল মালিকরা বলছেন, ধানের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চালের দাম বাড়াতে হয়েছে।
ভোজ্যতেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। প্রতি লিটারে ৮ টাকা দাম কমানোর পরও নিত্যপণ্যের বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, অর্ডার এবং অগ্রিম টাকা দিয়েও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য না কিনলে তেল দেয় না কোম্পানিগুলো। গ্রাহক পর্যায় থেকেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, দশ দোকান ঘুরলে এক দোকানে তেল পাই। কেউ কেউ দাম রাখে বেশি। আবার কেউ অন্যান্য পণ্য না কিনলে বিক্রি করছে না। আমদানিকারকদের দাবি মেনে নিয়ে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
কমেছে আলু পেঁয়াজ ও ডিমের দাম। বাজারে পেঁয়াজ, আলু, ডিম ও মুরগির দাম কমতে শুরু করেছে। এছাড়া সরবরাহ বাড়ায় কমেছে সবজির দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি পেঁয়াজে ২০ টাকা ও আলুতে ১০ টাকা দাম কমেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশি পুরোনো, স্থানীয় মুড়িকাটা এবং আমদানি করায় এই তিন ধরনের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিকেজি পুরোনো দেশি পেঁয়াজ ৯০-১১০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম আরও কমে প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাতাসহ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে।