সোমবার, ৩১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আমেরিকার স্বপ্ন “গ্রীন কার্ড”   নির্দিষ্ট কিছু আবেদন  প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত

আমেরিকার স্বপ্ন “গ্রীন কার্ড” নির্দিষ্ট কিছু আবেদন প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত

৫৩ Views

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত অভিবাসি ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অভিবাসন আইন দিনের পর দিন কঠোর করে চলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এরইমধ্যে কঠোর যাচাই-বাঁচাইয়ের জন্য সাময়িকভাবে “গ্রীন কার্ড” আবেদন স্থগিত করেছেন দেশটি। বৃহস্পতিবার (২৭শে মার্চ) সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদন জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ছাত্র এবং অন্যান্য বিদেশী নাগরিকদের আটক এবং নির্বাসন নিয়ে উদ্বেগ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।  যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের অধীনস্থ ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস (ইউএসসিআইসি) জানিয়েছেন, তারা অতিরিক্ত নিরাপত্তা যাচাইয়ের জন্য নির্দিষ্ট কিছু আবেদন প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করছেন।

বিশেষত: যারা আশ্রয়প্রার্থী বা শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন এবং এক বছর পর স্থায়ী বাসিন্দার জন্য আবেদন করেছেন; তাদের আবেদনগুলিতে অতিরিক্ত যাচাই-বাছাই হবে। এ সংক্রান্তে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নতুন ভেটিং প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই কঠোর নিরাপত্তা যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আগত শরণার্থীদের জন্য আরেকটি দফা জটিলতা তৈরি করবে। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের হাজারো পরিবারকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, যারা তাদের আত্মীয়স্বজনদের গ্রিন কার্ড প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এ ব‍্যাপারে অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, এই ধরণের বাধা যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন সিস্টেমে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করতে পারে এবং ইউএসসিআইসি-এর আয়তেও প্রভাব ফেলতে পারে, যেহেতু এটি একটি ফি-ভিত্তিক সংস্থা। এছাড়া, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তা যাচাইয়ের খরচ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। নতুন সিদ্ধান্তে সেই ব্যয় আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এই প্রক্রিয়ার দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। অবশ্য, বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য পরামর্শ হলো- যেকোনো ধরনের ফর্ম পূরণে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন; বিশেষত পূর্বের প্রশাসনের সময়ে ছোট ভুলের জন্যও বহু আবেদন ফেরত দেওয়ার নজির রয়েছে।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনেরে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ছাত্র এবং অভিবাসীরা নির্বাসনের মুখোমুখি হচ্ছেন অব‍্যাহতভাবে। এই নীতিগত পরিবর্তনের পাশাপাশি, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে সম্প্রতি একাধিক ছাত্রকে আটক করা হয়েছে এবং তারা নির্বাসনের সম্মুখীন হতে চলেছেন। এরই মধ্যে একাধিক শিক্ষার্থীকে আটকের পর ভিসা বাতিল করা হয়েছে।   উল্লেখ্য, মাহমুদ খলিল, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় 
গ্রিন কার্ডধারী এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক স্নাতক ছাত্র মাহমুদ খলিল ইতোমধ্যে ট্রাম্পের অভিবাসন আইন প্রয়োগকারী পদক্ষেপের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার উপস্থিতি বৈদেশিক নীতির স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর বলে দাবি করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফলে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নির্বাসন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিতর্কিত রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বৃহত্তর দমন-পীড়নের সঙ্গে তার মামলাটি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এছাড়া, তুনসিও চুং, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় 
দক্ষিণ কোরিয়ার ২১ বছর বয়সী বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা ইউনসিও চুং প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির অধীনে নির্বাসনের মুখোমুখি হচ্ছেন। সে ৭ বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন। প্রশাসন দাবি, তার উপস্থিতি মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিকে দুর্বল করে, যেমন খলিলের ক্ষেত্রে। গত ২৪শে মার্চ চুং প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, বার্নার্ড কলেজে একটি বিক্ষোভের সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গত ১৩ই মার্চ আইসিই কর্মকর্তারা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তার বাসভবনেও তল্লাশি চালিয়েছেন। আইসিই তাকে আটক করার চেষ্টা করলেও চুং মুক্ত রয়েছেন। তার আইনজীবীরা তার অবস্থান গোপন রেখেছেন। মোমোদু তাল, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়
গাম্বিয়া এবং যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিকত্বধারী মোমোদু তাল কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভে জড়িত থাকার কারণে সম্ভাব্য নির্বাসনের মুখোমুখি হচ্ছেন।

তার আইনজীবীর পক্ষ থেকে আদালতে দায়ের করা তথ্য অনুসারে, আইসিই তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে। ২০২৩ সালে অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে তাল এবং অন্যান্য কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালযয়ের ইথাকা ক্যাম্পাসে একটি ক্যারিয়ার মেলায় বাধা দেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে বসন্তকালীন সেমিস্টারের জন্য ব্যক্তিগত ক্লাসে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখেছিল। কিন্তু বহিস্কার করেনি। রুমেসা ওজতুর্ক, টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি ফিলিস্তিনিদের সমর্থন জানানোর জন্য বোস্টনের কাছে টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ে তুর্কি ডক্টরেট ছাত্রী রুমেসা ওজতুর্কের ভিসা বাতিল করে তাকে আটক করা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে বাকস্বাধীনতার উপর আক্রমণ হিসেবে নিন্দা করা হয়েছে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছে, কিছু বিক্ষোভ ইহুদি-বিরোধী এবং মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। গ্রেপ্তারের একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ম্যাসাচুসেটসের সোমারভিলে ৩০ বছর বয়সী তুর্কি নাগরিককে তার বাড়ির কাছে মুখোশধারী এবং সাদা পোশাকধারী এজেন্টরা আটক করে। অথচ ওই সময় ইফতারের জন্য যচ্ছিলেন তিনি। উল্লেখ্য, গ্রীন কার্ড হলো: যা আনুষ্ঠানিকভাবে স্থায়ী বাসিন্দা কার্ড হিসাবে পরিচিত। এটি পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথি।

ওদিকে, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারীদের দমনে ট্রাম্প প্রশাসন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার মধ্যে ভিসা বাতিলের বিষয়টিও রয়েছে। শুক্রবার (২৮শে মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারীদের দমনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আমেরিকা কমপক্ষে ৩০০ বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। Courtesy: daily ittefaq

Share This