শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লার ব্রা²নপাড়ায় গ্রাহকদের অর্ধ  কোটি টাকা নিয়ে ভুয়া এনজিও উধাও

কুমিল্লার ব্রা²নপাড়ায় গ্রাহকদের অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে ভুয়া এনজিও উধাও

            নিজস্ব প্রতিনিধি\ কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি নামের একটি এনজিও ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে। অর্ধশত গ্রাহক ঋণের টাকা নিতে এসে অফিসে তালাবদ্ধ দেখেন। পরে গ্রাহকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানায় অভিযোগ দাখিল করেন।

            স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া সদর এলাকায় আবুল কাশেম মুহুরির বাড়িতে ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি নামের একটি এনজিও অফিস ভাড়া নিয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গরিব ও অসহায় মানুষকে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সঞ্চয় আদায় করে। ১৫ই জানুয়ারি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অর্ধ শতাধিক গ্রাহক ঋণ নেয়ার জন্য এসে অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দাখিল করেন।

            অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিরা ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি নামের একটি এনজিওর পরিচয় দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নেয়। ঋণ প্রদানের ফাঁদে ফেলে এসব গ্রাহকের কাছ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হারে এককালীন সঞ্চয় গ্রহণ করে তারা। ওইদিন সকালে ঋণ বিতরণের তারিখ ধার্য করা হয়। ঋণের টাকা নিতে এসে দেখেন অফিস তালাবদ্ধ। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা জানান, তারা ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ সঞ্চয়ের নামে হাতিয়ে নেয় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা। এ সংবাদ শুনে ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টির অফিসের সামনে জড়ো হন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

            সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, উপজেলার সদর এলাকার ব্র্যাক অফিসের দক্ষিণ পাশে আবুল কাসেম মুহুরির বাড়িতে গত ৫ই জানুয়ারি অপরিচিত এক ব্যক্তি অফিস করার নামে বাড়ির একটি অংশ ভাড়া নেয়। এর পর সেখানে ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি নামে এনজিও রাতের আঁধারে একটি ভুয়া অফিস খুলে বসে প্রতারক চক্রটি।

            এ সময় অফিস ম্যানেজার করার জন্য নিয়োগ দেন আশিকুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে। কয়েক দিন অফিস চলার পর প্রতারকের কার্যকলাপে সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। এই সুযোগে কয়েক দিনের মাথায় পূর্ণমতি এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান, নাল্লা এলাকার মিজানুর রহমান, নাগাইশ এলাকার মোহাম্মদ ফেরদৌস, ইয়াসিন মিয়া, শাহ আলম, তোফাজ্জল হোসেন, কাইয়ুম, মুমিন মিয়া, আলম হোসেন, মহিবুল হাসান, কায়ছার মিয়া, ডগ্রাপাড়া এলাকার মিজানুর রহমান, লাভলী আক্তার, পপি আক্তারসহ প্রায় ১৭০ থেকে ২৮০ জন ব্যক্তি বিভিন্ন অঙ্কের টাকা জমা দিয়েছে বলে অভিযোগ জানায়।

            ভুক্তভোগী একজন বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমি প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমি এর বিচার চাই। আরেক ভুক্তভোগী বলেন, প্রতারকরা গত চার দিন আগে আমাদের গ্রামে এসে স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ ও পণ্য দেয়ার নামে কয়েকজনের কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা নেয়। এখন শুনি এটি ভুয়া এনজিও। আমরা এই প্রতারকদেরকে খুঁজে বের করে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

            শাহ আলম বলেন, আমরা সহজ সরল মনে ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি নামে একটি এনজিও থেকে ঋণ পাওয়ার আশায় কয়েক হাজার টাকা সঞ্চয় দেই। সেই এনজিও থেকে আমাদের কয়েক লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা হয় কিন্তু এখন দেখি সব ভুয়া।

            বাড়ির মালিক আবুল কাশেম মুহুরির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছুই জানি না। তার ছেলে সৈকত হোসেন বলেন, অপরিচিত এক ব্যক্তি হঠাৎ করে এসে বলেন তার কয়েকটি রুম লাগবে অফিস করার জন্য। তারা ১৫ই জানুয়ারি চুক্তি করার কথা ছিল।

            এ বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স ম আজহারুল ইসলাম জানান, একটি ভুয়া এনজিও গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া তিনি আরো বলেন, উপজেলার সবার প্রতি আহ্বান জানাই যে, কোনো এনজিওতে টাকা লেনদেন করলে অবশ্যই নির্বাহী অফিসারের কোনো প্রত্যয়নপত্র আছে কি না ভালোভাবে যাচাই করবেন। উপজেলাবাসীকে আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

Share This