বুধবার, ২০শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লা শহরে চলাচলকারীরা ভয়াবহ যানজটের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ!

কুমিল্লা শহরে চলাচলকারীরা ভয়াবহ যানজটের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ!
Views

          

  তানভীর দিপু\ বাংলাদেশের একটি প্রসিদ্ধ জেলা কুমিল্লা নগরীতে যানজট দিনের পর দিন আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। নিত্য নৈমিত্তিকভাবে ভয়াবহ ট্র্যাফিক জ্যামে পড়ে চলাচলকারীরা নিদারুণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। এহেন মারাত্মক যানজট নিরসন নিয়ে কর্তৃপক্ষ সর্বদাই’ প্রহসন’ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে নগরবাসীরা প্রায়ই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

            মূলত: বিগত দীর্ঘ এক দশক ধরেও জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসক যে-ই থাকুক না কেন- কেউ’ই এহেন সমস্যার সমাধান করতে পারেননি! তদপুরি, যানজট নিরসনে বিভিন্ন সময় নানান সভা, সেমিনার, সড়ক বিভাজন, উচ্ছেদ ও শৃঙ্খলা অভিযানের নামে নানান কর্মযজ্ঞ চালানো হলেও তা বারবারই ব্যর্থ হয়েছে। এসব কার্যক্রম নাগরিকদের মনে সাময়িক স্বস্তি দিলেও বাস্তবে তা প্রহসনেই রূপ নিয়েছে। নগরীর অটোরিকশা ইজিবাইক নিয়ন্ত্রন যেমন সম্ভব হয় নি- বরং দিনের পর দিন এই সংখ্যা আরো বেড়েই চলেছে। এ প্রসঙ্গে নাগরিকদের দাবী, প্রশাসন যেহেতু কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না- তাই কুমিল্লার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দগণ ভুক্তভোগী মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আবশ্যক রয়েছে।

            সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে মোট ১১০ কিলোমিটার পাকা সড়ক এবং ৫ কিলোমিটারের মত কাঁচা সড়ক রয়েছে। নানান অনিয়মের কারণে এসব সড়কের অর্ধেকেরও বেশি এলাকায় যানজট নিত্য দিনের ভোগান্তি। ছুটির দিনেও যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অবৈধ পার্কিং, অবৈধ দোকানপাট ও হকার, মাত্রারিক্ত ইজিবাইক ও অটোরিকশার বিশৃঙ্খলা, সড়ক নির্মান ও মেরামত, অপর্যাপ্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও পুলিশের জনবলের অভাব এবং সচেষ্টার অভাবেই এই যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না সাধারণ নাগরিকরা। দিনের পর দিন এবং বছরের পর বছর ধরে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে চেয়ে মানুষ এখন অতিষ্ঠ এবং অধৈর্য্য হয়ে উঠছেন।

            এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে যে, কুমিল্লা নগরীতে ধারন ক্ষমতার অন্তত ৫ গুণ বেশি যানবাহন চলাচল করে। এর বেশির ভাগই বৈদ্যুতিক অটোরিকশা ও ইজিবাইক। যেসব যানবাহনের কোনো লাইসেন্স নেই। সিটি কর্পোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশের তথ্য মতে, কুমিল্লা নগরীতে ৩০ হাজারেরও বেশি অটোরিকশা ইজিবাইক চলাচল করে থাকে- যা অবৈধভাবেই চলাচল করছে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। আর এই অনিয়ন্ত্রিত অটোরিকশা ইজিবাইকই যানজটের অন্যতম আরেকটি প্রধান কারণ।                 এ প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি কুমিল্লা মহানগরীর যুগ্ম সমন্বয়ক ইঞ্জি. মুহাম্মদ রাশেদুল হাসান ‘যানজট নিরসনে অভিযানের নামে প্রহসন চলে’ মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কুমিল্লা শহরে মেয়র আসে, মেয়র যায়, প্রশাসক আসে- প্রশাসক যায়, কিন্তু এই শহরের ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। এমন যানজটের শিকার হয়ে প্রায় প্রতিদিনই ঘন্টার পর ঘন্টা অপচয় হয় কয়েক লাখ নাগরিকের। আসলে মনে হচ্ছে যেনো- একটা ধাঁধাঁর মধ্যে রয়েছে নগরীরর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে নানা রকম সলিউশন দেয়া হলেও ডিসি, সিটি প্রশাসক, ট্রাফিক পুলিশ- এ ব্যাপারে কারো যেনো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। মাঝে মাঝে অভিযানের নামে চলে শুধু প্রহসনই!

            এ ব্যাপারে গেলো কয়েকদিনে কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে যে, অবর্ননীয় ভয়াবহ যানজটের নানা চিত্র। বিশেষ করে নগরের কান্দিরপাড় থেকে পুলিশ লাইন্স সড়ক, টমছমব্রিজ সড়ক ও রাণীর বাজার সড়কে দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকছে। এছাড়াও নগরীর রাজগঞ্জ, চকবাজার, মোগলটুলি, ফৌজদারী মোড়, পুলিশ লাইন্স, বাদুরতলা, সালাউদ্দিন মোড়, টমছমব্রিজ, শাসনগাছা, বাদশা মিয়ার বাজার, রেইসকোর্স, রানীর বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে মারাত্মকভাবেই। এসব এলাকায় সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা/ ১০টা পর্যন্তও তীব্র যানজট সৃষ্টি হতে থাকছে থেমে থেমেই।

            খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেলো কয়েকমাসে কুমিল্লা শহরে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং ইজিবাইকের সংখ্যা অন্তত ৫ গুণ বেড়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নগরজুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো এবং পরিবহণের কারণেই বিভিন্ন এলাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও নগরীর বেশ কয়েকটি স্থানে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। এসব এলাকায়ও যানজট নিত্য চিত্র। সড়ক দখল করে গাড়ি পার্কিং, যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী রেখে সড়ক দখল, ফুটপাত দখল করে হকারদের বাণিজ্যের কারণে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকার একরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

            শহরের নুরপুর এলাকার বাসিন্দা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘রবি থেকে সোমবার সকাল সন্ধ্যা চকবাজার থেকে কান্দিরপাড় যেতে ১৫ মিনিটের স্থলে ৪৫ মিনিট সময় লেগে যায়। চকবাজার বেবী স্ট্যান্ড, বাসস্ট্যান্ড, এরপর রাজগঞ্জ বাজার এবং মনোহরপুর মাতৃভান্ডারের সামনে থেকে লিবার্টি মোড় পর্যন্ত যানজট থাকছে নিত্যনৈমিত্তিকভাবেই। রাস্তার দুই পাশে যে হকার বসে তারাইতো যানবাহন চলাচলের দুই লেনের জায়গা দখল করে রাখে, ফুটপাতেও হকার থাকার কারনে মানুষ রাস্তা দিয়েই হাঁটে। আর এতে করে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ কর থাকে।’

            তিনি আরো বলেন, ‘একবার যানজট লাগলে- তা ছুটানোর কেউ থাকে না। ট্রাফিক পুলিশ কই থাকে, জানি না। ওইদিকে রাজগঞ্জ মোড় থেকে মুরগিবাজার গেইট পর্যন্ত আর হাইস্কুলের সামনে থেকে মোগলটুলী-গাংচর রোডে একবার যানজট লাগলে- ভোগান্তির শেষ থাকে না।’

            এছাড়া, টমছব্রীজ এলাকার বাসিন্দা জুলকারনাইন জাকি বলেন, ‘টমছম ব্রীজ থেকে কোটবাড়ি সড়কে দুই পাশে সিএনজি আর বাজার রাস্তা দখল করা, কান্দির পাড়ের দিকে অটো-সিএনজি রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করা, ইবনে তাইমিয়া স্কুল সড়কের ভাঙ্গাচুরা আর সড়ক ভবনের সামনে যাত্রীবাহী বাস ইউটার্ন করে থাকা- ইত্যাদি সব মিলিয়ে এই জায়গার যানবাহনের বিশৃঙ্খল অবস্থা কি দাঁড়ায়- এপথে যারা আসা যাওয়া করে একমাত্র তারাই বলতে পারবে। কিন্তু এই জায়গায় যানজট নিরসন করবে টা কে?’

            তিনি আরো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সালাউদ্দিন মোড়েও যানজট থাকে, শিক্ষাবোর্ডের সামনেও থাকে। যানজট যখন দীর্ঘ হয়, তখন ট্রাফিক পুলিশ আসে যানজট ছুটাতে। এটা কোনো কথা হতে পারে না!’

            এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার বিশিষ্ট সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম শান্ত বলেন, “একটি নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা এভাবে চলতে পারে না। যানজটের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে। জ্যামে জ্যামে বসে বসে মানুষের কর্মঘন্টা নষ্ট হয়। এই নগরীর সড়কে যদি এখনি শৃঙ্খলা না ফেরানো যায়- দিন দিন এশহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এখনি যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রন যেমন দরকার, তেমনি রাস্তাঘাটও বাড়ানো প্রয়োজন। প্রতিটি রাস্তার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। হাঁটার জন্য ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত রাখতে হবে।”

            তিনি জেলা ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনের প্রতি আহŸান জানিয়ে বলেন, ‘যাদের আছে ক্ষমতা আছে- তারা চাইলেই মানুষের উপকার করতে পারেন। শুধু মাত্র কাগজ কলমের দায়িত্বের বাইরে এসে মানবিক দায়িত্ব থেকেও যদি উনারা দায়িত্ব পালন করেন- কুমিল্লার নাগরিকরা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। এখন কোনো প্রভাবশালী ক্ষমতার অপব্যবহার করার কথা নয়; তারপরও প্রয়োজনে, তারা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দেরও সহযোগিতা নিতে পারেন।’

            কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সারোয়ার মোঃ পারভেজ বলেন, যেখানে পুরো জেলায় অন্তত ২শ জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য হলে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব; সেখানে আমার মোট জনবল আছে মাত্র ৭৯ জন। নগরীতে আমাদের যে জনবল- তা খুবই অপর্যাপ্ত। এই কম সংখ্যক জনবল দিয়েই যানজট নিরসন করার চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।

            তিনি আরো বলেন, শহরের সড়কে সিএনজি, অটোরিকশা ইজিবাইক নিয়ন্ত্রন না করলে কুমিল্লা শহরের যানজট নিরসন করা কষ্টসাধ্য।

            কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন জানান, যানজট নিরসনে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের একটি কমিটি আছে- তারা কাজ করছেন। আমরা শুধু সাধারণ মানুষ হাঁটার জন্য ফুটপাত দখল মুক্ত করে দিতে অভিযান পরিচালনা করতে পারি এবং সেটি পরিচালনা করে হচ্ছে।

            তবে এসব অভিযানও কোনো ভালো ফল দিচ্ছে না- এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমরা উচ্ছেদের কাজ করছি। আমাদের অন্যান্য কাজও রয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই। জবভ: পড়সরষষধৎশধমড়ল

Share This

COMMENTS