মঙ্গলবার, ১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ক্ষতির পরিমাণ ৩শ’ কোটিঃ চলাচলে চরম ভোগান্তি ভয়াবহ বন্যায় নাঙ্গলকোটের ১০২টি সড়ক বিধ্বস্ত

ক্ষতির পরিমাণ ৩শ’ কোটিঃ চলাচলে চরম ভোগান্তি  ভয়াবহ বন্যায় নাঙ্গলকোটের ১০২টি সড়ক বিধ্বস্ত
৩৩৯ Views

            আবুল কাশেম গাফুরী\ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ভয়াবহ বন্যায় সড়ক ব্যাবস্থার বেহাল দশা বিরাজ করছে। উপজেলার সর্বত্র সড়ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ভয়াবহ বন্যায় বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘদিন পানিতে নিমজ্জিত হয়ে সড়কের কার্পেটিং ওঠে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে এলাকাবাসীর যোগাযোগে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বন্যার পানির তোড়ে বিভিন্নস্থানে সড়ক ভেঙে বড় ধরনের গর্তের সৃষ্টি হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ রয়েছে। উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক এখনো পানিতে নিমজ্জিত।

            উপজেলা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগ বন্যায় ৯০টি সড়কের ১৫০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানালেও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিমাণ আরো অনেক বেশি। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা। উপজেলা প্রকৌশলী অহিদুল ইসলাম সিকদার নতুনভাবে জয়েন্ট করেছেন। তিনি উপজেলার অনেক রাস্তাঘাট চিনেন না। এখনো সাতবাড়িয়া, বক্সগঞ্জ, রায়কোট উত্তর-দক্ষিণসহ অনেক ইউনিয়নে যেতে পারেননি।

            ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর মধ্যেÑ নাঙ্গলকোট-মাহিনী সড়ক, সিজিয়ারা-উরকুটি সড়ক, মান্নারা-চৌকুড়ি সড়ক, বক্সগঞ্জ এক্সিম ব্যাংক থেকে কোকালি-বড়কালি-গান্ডাপুর সড়ক, বাঙ্গড্ডা চারিজানিয়া উত্তর মাহিনী সড়ক, আজিয়ারা রাস্তার মাথা থেকে আলিয়ারা কবির হালি সড়ক, মিয়ার বাজার-বটতলী সড়ক, বটতলী-রাজারবাগ-মান্দ্রা বাজার সড়ক, বাইয়ারা-মান্দ্রাবাজার সড়ক, আলেয়া মার্কেট থেকে বেরি সড়ক, দৌলখাঁড়-মান্দ্রা বাজার সড়ক, দুবাই বাজার-কান্দাল সেতু সড়ক, বটতলী-বাতাবাড়িয়া-মাসারপাড় সড়ক, দৌলখাঁড়-সোন্দাইল সড়ক, পাইকোট-কান্দাল-বামবাতাবাড়িয়া সড়ক, ভোলাইন বাজার-আদ্রা-মেরকোট সড়ক, পেড়িয়া-শ্রীফলিয়া সড়ক, পরিকোট-রায়কোট সড়ক, হেসাখাল-টুয়াবাজার সড়ক, বাঙ্গড্ডা বাজার-আঙ্গলখোঁড় সড়ক, ছুপুয়া-শান্তিরবাজার সড়ক, শান্তিরবাজার-পিপড্ডা সড়ক, ঝাটিয়াপাড়া-বেল্টা সড়ক, হাসানপুর-পৈছইর সড়ক, পরকরা-মোড়েশ্বর সড়ক, মৌকরা-নারানদিয়া সড়ক, গোমকোট বাজার-ডিপজল সড়ক, তেলপাই-বাসরলংকা সড়ক, নাঙ্গলকোট খিলা সড়ক, ফতেহপুর-তিলীপ সড়ক, চডিয়া বাজার-চাটিতলা-বিনয়ঘর সড়কসসহ গ্রামীণ ছোট-বড় প্রায় ১০২টি পাকাসড়কের বেহাল দশা বিরাজ করছে।

            গত প্রায় ৫ বছর থেকে উপজেলার প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। যার ফলে এলাকাবাসীকে বিধ্বস্ত সড়কগুলো দিয়ে চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বর্তমানে বন্যার পানিতে ডুবে ওই সড়কগুলো আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

            উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের সিজিয়ার-উরকুটি সড়কের চান্দলা এলাকায় ভয়াবহ বন্যার পানির তোড়ে সড়কটির দু’টি স্থানে বড় ধরণের ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত রিকশা, মোটরসাইকেলসহ পথচারীদের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

            চান্দলা গ্রামের ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চালক বাহাদুর বলেন, সড়কটিতে বড় ধরণের দু’টি গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় অটোরিকশা চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে অটোরিকশা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশের চরজামুরাইল গ্রামের মাস্টার আবদুর রহিম জানান, সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় পায়ে হেঁটে চালাচলেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

            মিয়ারবাজার-বটতলী সড়কটিরও বেহাল দশা বিরাজ করছে। বন্যায় পানির তোড়ে সড়কটির বটতলী বাজারের পাশে সড়কটি ভেঙে গিয়ে ছোট-বড় যানবাহন চলাচলে এলাকাবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কাশিপুর গ্রামের হাজী জামাল উদ্দিন বলেন, সড়কটি গত ১০ বছর থেকে চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী অবস্থায় রয়েছে। বন্যায় সড়কটির বিভিন্নস্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়ে সড়কটি দিয়ে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

            বক্সগঞ্জ ইউনিয়নের আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহীদ উল্ল্যাহ জানান, বক্সগঞ্জ এক্সিম ব্যাংক থেকে কোকালি-বড়কালি-গান্ডাপুর হয়ে আজিয়ারা রাস্তার মাথা থেকে আলিয়ারা কবির হালি সড়কটির বেহালদশা বিরাজ করছে। সড়কটির ছোট-বড় খানাখন্দ দিয়ে এলাকাবাসীর চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

            উপজেলা প্রকৌশলী অহিদুল ইসলাম শিকদার বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেক এলাকায় আমরা এখনো যেতে পারিনি। প্রাথমিকভাবে উপজেলার ৮০টি সড়কের ১৫০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেবলে তিনি জানান। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা তৈরি করতে আমাদের আরো কিছু সময় লাগবে কারণ আমরা সাতবাড়িয়াসহ আরো অনেক জায়গায় যেতে পারিনি। প্রাথমিকভাবে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা তৈরি করে সড়কগুলোর বর্তমান অবস্থান এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে এলজিইডির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এগুলোর জন্য খরচ হবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

Share This

COMMENTS