গাজায় জীবন-মরণ ঝুঁকিতে ৫০ হাজার গর্ভবতী নারী
ষ্টাফ রিপোর্টার॥ ইসরাইলের আরোপিত অবরোধের পরিণতি হিসাবে এ অঞ্চলটিতে মৃত্যু হবে আরও অনেকের। ইতিমধ্যে ইসরাইলের হামলায় গাজা উপত্যকায় অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউ) কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি গত শনিবার এ সতর্কতা জারি করেছেন।
পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত ইউএনআরডব্লিউর সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে বসে কথা বলছি- আর একই সময়ে গাজায় অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন। ইসরাইলের অবরোধের পরিণতি হিসেবে আরও অনেক মানুষের মৃত্যু হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় মৌলিক পরিষেবাগুলো ভেঙে পড়ছে। ওষুধ ফুরিয়ে যাচ্ছে। নর্দমার পানি উপচে পড়ছে রাস্তায়। স্বাস্থ্য সমস্যার হুমকিতে আছেন বাসিন্দারা। বাড়ছে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি।’ জ্বালানি সরবরাহ না পেলে মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘অবরোধের অর্থ হলো খাদ্য, পানি, জ্বালানিসহ সব মৌলিক পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে সম্মিলিত শাস্তি দেয়া। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আরও বলেন, ‘জাতিসংঘ আর ইউএনআরডব্লিউর জন্য দুঃখজনক হয়ে উঠছে প্রতিটি দিন। আমাদের সহকর্মীদের নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। আজও অন্তত ৫৭ জন সহকর্মীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। গাজায় ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে বলে একই দিনে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. মাই আলকাইলা। তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের দখলদার বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করেছে, চিকিৎসাকেন্দ্র ও অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস করেছে, হাসপাতাল পরিচালনার প্রয়োজনীয় জ্বালানি বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসকদেরও প্রবেশে বাধা দিচ্ছে তারা।’ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের ঘোষিত ‘সম্প্রসারিত স্থল অভিযানে’ শিশুরা জীবনহানি, শারীরিক ক্ষতি, গুরুতর মানসিক যন্ত্রণা ও দীর্ঘস্থায়ী বাস্তুচ্যুতির উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জেসন লি এ কথা বলেছেন। একইভাবে ইসরাইলের বোমা হামলা আর পরপর আক্রমণে ঝুঁকিতে পড়েছে গর্ভবতী নারীদের জীবন। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল অনুমান অনুযায়ী, গাজায় বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার গর্ভবতী নারী রয়েছেন। যাদের মধ্যে ১০ শতাংশই নভেম্বর মাসে সন্তান প্রসব করতে পারেন। ভয়, আতঙ্ক আর প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অভাবে অনেকের গর্ভপাত, অকাল প্রসব অথবা জীবন হারানোর সম্ভাবনাও রয়েছে। শরণার্থী শিবিরগুলোতেও তাদের জন্য নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবা। আর এসব ঘটনায় জাতিসংঘ উদ্বেগ করে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, গাজায় আরও কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিক মারা যেতে পারে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রেড ক্রস গাজার সাধারণ মানুষের ‘অসহনীয়’ দুর্দশা কমাতে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ থাকে যে, গত ৭ই অক্টোবর হামাসের বন্দুকধারীরা ইসরাইলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি লোককে হত্যার পর গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরাইল। ইসরাইলি বিমান বাহিনীর বিরামহীন বোমা হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত আট হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে- যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য দিয়েছে। ২৪ লাখেরও বেশি লোক অধ্যুষিত জনবহুল গাজার কয়েক হাজার ভবন বিমান হামলায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া অর্ধেকেরও বেশি লোক হারিয়েছে তাদের বাড়িঘর। এদিকে, অবরুদ্ধ গাজায় দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক বলেছেন, অসহনীয় মানবিক দুর্দশা কমাতে সব পক্ষকে সংঘাতের পথ থেকে সরে আসতে হবে। এদিকে গত রোববার ইসরাইলি বিমান থেকে গাজা শহরে লিফলেট ছড়িয়ে দেয়া হয়। এতে ওই সব এলাকাকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে উল্লেখ করে জানানো হয়েছে- উত্তরাংশের এলাকা নিরাপদ নয় বিধায় জনসাধারণকে দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে হবে। -আল-জাজিরা , বিবিসি