মঙ্গলবার, ৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গুলি ব্যবহারে কঠোরতা, বলপ্রয়োগে পুলিশের জন্য ৫ সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

গুলি ব্যবহারে কঠোরতা, বলপ্রয়োগে পুলিশের জন্য ৫ সুপারিশ সংস্কার কমিশনের
১৯৮ Views

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নির্বিচার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের পর বিক্ষোভ দমনে গুলি চালানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের কাছ থেকে প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রত্যাহারের দাবিও সামনে এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে, উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ব্যবহারে কঠোর নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে, জনতা ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগে পাঁচটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর নীতিমালা ও ১৯৪৩ সালের পুলিশ প্রবিধান অনুযায়ী এই ধাপগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পুলিশ সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। সুপারিশে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত একটি পুলিশ কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। তবে কমিশনের কাঠামো সম্পর্কে কোনো সুপারিশ করা হয়নি, যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে ১১ সদস্যের কমিশনের একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

কমিশন নিয়ে পুলিশের প্রস্তাব:

  • অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা সাবেক আইজিপির নেতৃত্বে ১১ সদস্যের কমিশন
  • ৪ সংসদ সদস্য, ১ নারীসহ আরও ৪ জন অরাজনৈতিক ব্যক্তি
  • আইজিপির সর্বোচ্চ মেয়াদ ৩ বছর

গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পতন (৫ আগস্ট) পর্যন্ত আন্দোলন দমনে ব্যাপক প্রাণহানি ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, আহতের সংখ্যা ১১,৫৫১ জন, আর নিহত হয়েছেন ৮২৬ জন। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, নিহতদের ৭০ শতাংশই গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপেও বলপ্রয়োগের বিষয়টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে পুলিশ পাঁচ ধাপের ‘ইউজ অব ফোর্স’ নির্ধারণ করেছে, যা কমিশন তাদের সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ধাপগুলো হলো:

  1. শারীরিক সংস্পর্শ ছাড়া অবৈধ জনতাকে বাধা প্রদান
  2. নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা
  3. কৌশল প্রয়োগ করে জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা
  4. স্বল্প বা ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার
  5. দলগত অস্ত্রের ব্যবহার

বলপ্রয়োগের নিয়ম:

কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, যদি জনতা শান্তিপূর্ণ মিছিল বা সমাবেশ করে, তবে পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। পুলিশ যদি কোনো সমাবেশকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং জনতা ছত্রভঙ্গ না হয়ে শক্তি সঞ্চয় করে, তবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যদি জনতা সহিংস আচরণ করে, ভাঙচুর চালায় এবং পুলিশ বা সাধারণ জনগণকে আঘাত করে, তবে ধাপে ধাপে বলপ্রয়োগ করা যাবে। এতে গ্যাস স্প্রে, সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান, স্মোক ক্যানিস্টার, পেপার স্প্রে, শটগান, ইলেকট্রিক পিস্তল ইত্যাদি ব্যবহারের অনুমতি থাকবে। তবে শুধুমাত্র আত্মরক্ষা বা সম্পত্তি রক্ষার প্রয়োজনেই গুলিবর্ষণ করা যাবে এবং তা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকতে হবে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য ও জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বলপ্রয়োগের ঘটনায় এবার অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাই এ বিষয়টিকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি একটি নিরপেক্ষ পুলিশ কমিশন গঠনের সুপারিশও করা হয়েছে।”

প্রথম ধাপে বলপ্রয়োগ:

সুপারিশ অনুযায়ী, মিছিল বা সমাবেশে অংশ নেওয়া জনতাকে অবৈধ ঘোষণা করলে এবং ছত্রভঙ্গ হওয়ার আহ্বান জানালে পুলিশ এমনভাবে মোতায়েন থাকবে, যাতে বিক্ষোভকারীরা সহজেই স্থান ত্যাগ করতে পারে। এই পর্যায়ে পুলিশ কোনো শারীরিক সংস্পর্শ না রেখে জনতার ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগ করবে। যদি জনতা আরও সংঘবদ্ধ হয়, তাহলে পুলিশের সদস্যরা স্টিল হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, লেগ গার্ড, গ্যাস মাস্ক পরে জনতার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবেন।

এভাবে পুলিশের বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে কমিশন

Share This