শুক্রবার, ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চান্দিনায় কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় কয়েক হাজার হেক্টর জমির পাকা আউশ ধান কাটা নিয়ে কৃষকরা চরম বিপাকে

চান্দিনায় কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় কয়েক হাজার হেক্টর জমির  পাকা আউশ ধান কাটা নিয়ে কৃষকরা চরম বিপাকে
Views

            নিজস্ব প্রতিনিধি\ কুমিল্লার চান্দিনায় জলাবদ্ধতার কারনে অধিকাংশ ফসলি মাঠের পাকা আউশ ধান ঘরে তুলতে না পারায় কৃষকের স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারো এক বুক আশা নিয়ে কৃষক জমিতে আউশের আবাদ করেছিল। কিন্তু টানা বর্ষণে অধিকাংশ ফসলি মাঠ পানিতে ডুবে যাওয়ায় কয়েক হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা ।

            সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চান্দিনা উপজেলার নীচু জমিগুলোতে কোথাও হাটু পানি, আবার কোথাও কোমরসমেত পানি।

উঁচু জমিগুলোতেও কমবেশি পানি রয়েছে। নীচু এলাকায় বন্যার পানি না থাকলেও বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ নির্মাণসহ মৎস্য প্রজেক্টের কারণে পানিবন্দী রয়েছে অনেক ফসলি জমি। মাছ শিকারিরা খালগুলোতে অবাধে বাঁশ ও জালের বেড়া ও চাঁই পেতে পানি প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করায় খাল ও জমি পানিতে একাকার। যে কারণে কৃষকরা তাদের স্বপ্নে বোনা আউশ ধান কেটে ঘরে তুলতে প্রতিনিয়ত পানির সঙ্গে যুদ্ধ করছে।

নীচু এলাকায় ধান কেটে একেকটি আঁটির সঙ্গে বেঁধে পানিতে ভাসিয়ে শুকনা জায়গায় উঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বেশি পানিতে কৃষক সাঁতার কেটে আউশের আঁটি ডাঙায় তুলতেও দেখা গেছে। এতে চলতি আউশ মৌসুমের উফশী জাতের ধানের বীজ সংরক্ষণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

            জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলায় ৮০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হওয়ার পর অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধানের চারা। এছাড়া জেলার মনোহরগঞ্জ, মেঘনা, হোমনা ও তিতাস উপজেলায় আউশের আবাদ একেবারেই কম।

            ওই ৭৫ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটাও প্রায় শেষ। তবে নীচু জমির ধান কাটা নিয়ে এখনও বেশ বেকায়দায় কৃষক।

            সূত্র আরও জানায়, ৭৫ হাজার হেক্টর আউশ আবাদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির ধান চাষ হয়েছে নীচু জমিতে। তারমধ্যে ১৫-২০ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছিল কৃষক। ধান কাটা ও পানিতে ভাসিয়ে ডাঙায় তোলা একদিকে যেমন কষ্টকর, অপরদিকে ধানের অপচয় ও মান নষ্ট হচ্ছে।

            কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কেরণখাল ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, জমিতে হাঁটু পানি। ধান কেটে ধানের বোঝা মাথায় নিয়ে পায়ে হেঁটে আসার মতো কোনো সুযোগ নেই। আগে নৌকায় করে আমরা ধান আনতাম। এখন নৌকাও নেই। যে কারণে ধানের আঁটি বেঁধে লম্বা লাইন করে রশি দিয়ে টেনে কেউ রাস্তায় উঠায় আবার বাড়ি নিয়ে যায়। এতে করে অনেক ধান নষ্ট হয়ে যায়।

            একই উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের কৃষক আবুল হাসেম জানান, অনেক জমিতে ধানের ছড়া পর্যন্ত পানি। ওইসব জমির ধান কেটে অনেক দূর পর্যন্ত পানিতে ভাসিয়ে রাস্তায় তোলা অনেক কষ্টের। এই মৌসুমেই নীচু জমির ধান টাকা বেশি কষ্ট হয় আমাদের।

            চান্দিনা উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ মোরশেদ আলম বলেন, এ উপজেলায় মাঝারি-নীচু ও সম্পূর্ণ নীচু জমি প্রায় ৮ হাজার হেক্টর। এ বছর প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে এ উপজেলায় ৫শ’ হেক্টর নীচু জমির ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়ে কৃষক। ভিজে যাওয়া ধান থেকে বীজ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না কৃষকের। ভিজে যাওয়া ধানগুলোতে যথা সময়ে রোদে শুকাতে না পারলে ধানের মান কমে যায় এবং  প্রচুর নষ্ট হয়। আগামীতে ধানের বীজ সংকটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে কৃষকের।

            কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, পানিতে ভাসিয়ে ধান সংরক্ষণ করা কৃষকের জন্য একটু কষ্টকর হলেও পরিবহন ও শ্রমিক খরচ অনেক কমে যায়। তবে যথা সময়ে ধান শুকাতে না পারলে ধানের মান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। জেলার কয়েকটি উপজেলায় এ সংকট বেশি।

Share This

COMMENTS