রবিবার, ১৩ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ট্রাম্পের কঠোরতায় মোহভঙ্গ প্রবাসীদের সিটিজেন-গ্রিনকার্ডধারীরাও অস্বস্তিতে

ট্রাম্পের কঠোরতায় মোহভঙ্গ প্রবাসীদের সিটিজেন-গ্রিনকার্ডধারীরাও অস্বস্তিতে

৪৬ Views

শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া॥ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর থেকে এখনও অনেক মানুষজনের মধ্যে দারুণ অস্থিরতা বিরাজ করছে। ট্রাম্পের শাসনের দুই মাসেই মোহভঙ্গ হয়েছে অনেক বাংলাদেশি প্রবাসীরও। অথচ সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শাসনামলে আমেরিকার অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতেই সবাই আবার বেছে নিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। রেজিস্ট্রার্ড ডেমোক্রেট পার্টির হয়েও তাদের বেশিরভাগ মানুষজনরাই ভোট দিয়েছিলেন ট্রাম্পকেই। কিন্তু এত দ্রুত বদলে যাবেন তিনি, কেউ ভাবতেও পারছেন না। অভিবাসীর দেশ আমেরিকায় ট্রাম্পের সব কর্মকাণ্ডই যেন অভিবাসনবিরোধী। তার ইমিগ্রেশন ক্র্যাকডাউনে শুধু অবৈধরা নন; দেশটির সিটিজেন ও গ্রিনকার্ডধারীও তেমন স্বস্তিতে নেই।  সম্প্রতি সিবিএস নিউজে বলা হয়েছে যে, “Trump administration pauses some green card applications as part of aggressive vetting effort! Washington: The Trump administration has quietly paused the processing of green card applications filed by certain individuals, including approved refugees, as part of a broader effort to more aggressively vet immigrants, multiple sources familiar with the move told CBS News. U.S. Citizenship and Immigration Services, or USCIS, recently directed officials to suspend processing of requests for legal permanent residency submitted by immigrants granted refugee or asylum status.” অর্থাৎ ট্রাম্প প্রশাসন আগ্রাসী যাচাই-বাছাই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কিছু গ্রিন কার্ড আবেদনও স্থগিত করেছেন। ওয়াশিংটন: ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের আরও আগ্রাসীভাবে যাচাই করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অনুমোদিত শরণার্থী সহ নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির গ্রিন কার্ড আবেদন প্রক্রিয়াকরণের কাজটিও নীরবে স্থগিত করেছেন বলে এই পদক্ষেপের সাথে পরিচিত একাধিক সূত্র সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন। মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা, বা ইউএসসিআইএস, সম্প্রতি শরণার্থী বা আশ্রয় মর্যাদাপ্রাপ্ত অভিবাসীদের দ্বারা জমা দেওয়া বৈধ স্থায়ী বসবাসের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ স্থগিত করার জন্যও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন- Reference: cbsnews. উপরন্ত, এমনটা কেবল আমেরিকার অভ্যন্তরে নয়; ইমিগ্রান্টের বিষয়ে বিশ্বজুড়েই তোলপাড় শুরু করে দিয়েছেন তিনি।

একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করেই তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাইছেন। কিন্তু আমেরিকানদের আস্থার জায়গা বিচার বিভাগের কাছে ধরাশয়ী হচ্ছেন এই প্রেসিডেন্ট। তার অনেক আদেশই ইতোমধ্যে আদালতে বাধাপ্রাপ্তও হচ্ছে।  প্রথমবার তার মেয়াদে বিশ্বে কোনো যুদ্ধ হয়নি। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে তিনি যুদ্ধ বন্ধ করবেন, এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতার মসনদে বসার পর সারা বিশ্বের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন তিনি। আমেরিকাকে আবারো মহান করার ঘোষণা দিয়ে তিনি যেন বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনছেন। গ্রিনল্যান্ড-এর দখল নিতে চাওয়ায় উদ্বিগ্ন ইউরোপ। কানাডাকে ৫১তম স্টেট ঘোষণা করতে চাইছেন। আরোপ করছেন শুল্ক। সব মিলিয়ে শান্ত আমেরিকায় দেখা দিচ্ছে অশান্তির বারতা। এ কারণে বিশ্বজুড়েই গুরুত্ব কিছুটা কমছে আমেরিকার।  ওদিকে, বেশ কয়েকজন ইউরোপিয় নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্রে আটকের ঘটনায় দেশটিতে ভ্রমণ নির্দেশিকায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে ইউরোপের কয়েকটি দেশ। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ভ্রমণকারী জার্মান নাগরিকদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।

একজন মুখপাত্র বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের অনুমতি পেতে শুধু ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথোরাইজেশন (ইএসটিএ) অনুমোদন বা মার্কিন ভিসাই যথেষ্ট নয়। বরং এসব অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তিকে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি নাও দেওয়া হতে পারে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় তিনজন জার্মান নাগরিককে আটক করা হয়। অথচ তাদের মধ্যে একজন গ্রিন কার্ডধারীও ছিলেন। পরে তাদের দুইজনকে জার্মানিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনার পর যুক্তরাজ্যও তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ নির্দেশিকায় পরিবর্তন এনেছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হয় এবং যদি কেউ আইন ভঙ্গ করে, তাহলে তাকে আটক বা নির্বাসিত করা হতে পারে।  রয়টার্সের তথ্যানুযায়ী, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর চলতি মাসের শুরুতে নিশ্চিত করেছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে আটক এক ব্রিটিশ নাগরিককে সহায়তা করেছে।

এছাড়াও ফিনল্যান্ডও একই ধরনের ভ্রমণ নির্দেশিকায় পরিবর্তন এনে বলেছে, যথাযথ বৈধ ভ্রমণ নথি বর্তমান মার্কিন নীতির অধীনে প্রবেশের নিশ্চয়তা না-ও দিতে পারে! দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোর মধ্যে ভিসা বা ইটিএ আবেদনকারীকে তার লিঙ্গ ও জন্মের সময়ের লিঙ্গ বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করতে বলেছেন। এক্ষেত্রে কোনো অসংগতি পেলে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি বাতিল করা হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া, ফিনিশ কর্তৃপক্ষ ভ্রমণকারীদের সতর্ক করে বলেছে, তারা যেন যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে জনসমাগম এড়িয়ে চলে। কারণ, ওইসব স্থানে রাজনৈতিক বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঝুঁকি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন কর্তৃপক্ষ। ফিনল্যান্ডের সম্প্রচারমাধ্যম ইয়েলের মতে, এই কঠোর নীতিমালা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির ক্রমবর্ধমান রূপকে তুলে ধরে। এছাড়া, ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মানবজমিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নে ট্রাম্প প্রশাসন প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করছেন। এ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রচলিত আইনের অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়ে ইচ্ছেমতো আইনের ব্যাখ্যা করছেন, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ অমান্য করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী অভিবাসীদের পরিবার এবং তাদের মার্কিন আইনজীবীরা।

Share This