ডাকাতিয়া নদীতে নিষিদ্ধ বেসাঁল জালে অবাধে পোনা মাছ শিকার


ষ্টাফ রিপোর্টার\ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ছোট ডাকাতিয়া ও কাঁকড়ি নদীর তীরবর্তী এলাকায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। তাদের জীবন জীবিকার অন্যতম অবলম্বন কৃষি এবং মাছ শিকার। বর্ষা মৌসুমে এই নদীগুলোর মাছ উপজেলার বিভিন্ন চর, ছোট বড় খাল, বিল ও জলাশয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। এসময় মা মাছরা প্রচুর পরিমান বংশবিস্তার করে। কিন্তু বিপুল সম্ভাবনাময় নদীর মাছের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে অবৈধ বেঁসাল ও চুঙ্গিজালে।
উপজেলার বিভিন্ন নদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে কিছু প্রভাবশালীর রাহুগ্রাসে ধ্বংশের ধারপ্রান্তে নদীগুলোর ডিমওয়ালা মাছ। নদীর প্রতি কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৫-৬টি বেঁসাল বসানো হয়েছে। যার ফলে অতিরিক্ত পানিপ্রবাহের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে লক্ষাধিক কৃষক পরিবার। অব্যবস্থাপনা এবং স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি নদীর মাঝখানে বেরিবাঁধ তৈরী করার ফলে এক অংশ থেকে আরেক অংশে কোন মাছও দৌড়াতে পারে না। একইভাবে উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ছাতিয়ানী, বৈলপুর, কনকাপৈতের মরকটা, পন্নারা, ডোল সমুদ্র, তারাশাইল, জাকঝুর, গুনবতীর পরিকোটসহ বিভিন্ন অংশে এভাবে শতাধিক বেঁসাল বসানো হয়েছে। এছাড়াও নদীর বেশ কিছু অংশে কাঠের জালি, বাঁশের জালি দিয়ে বাঁধের মতো তৈরি করা হয়েছে। এতে করে মাছের বংশবিস্তার বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পানি স্বাভাবিক ¯্রােতও বিঘিœত হচ্ছে। পানির স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হওয়ার ফলে চলমান আমন মৌসুম এবং আসন্ন রবি মৌসুমে নদী সংলগ্ন অনেক জমিনে চাষাবাদের সাহস পায় না কৃষকরা। যার কারনে এসব জালে ডিমওয়ালা মাছ, ছোট ছোট পোনাও আটকা পড়ায় মাছের বংশবিস্তরও বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে এই উপজেলায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার অংশ জুড়েই ডাকাতিয়া- কাঁকড়ি নদীর অবস্থান। তীরবর্তী লক্ষাধিক মানুষের আমিষ চাহিদাও পুরণ হয় এই নদীর মাছে। চুনা খইলশা, গুতুম, ছোট পেয়ালী, কাছকি, গুরা টেংঙ্গরা, ঘনিয়া, চিতল, জেব্রা আঙ্গুজ, বেদা, তল্লা আইড়, পাতি ডারকিনা, সরপুটি, তিতপুটি, শৈল, টাকি, কৈ, শিং, মাগুর, পুঁটি, বোয়াল, কার্পু, বাইলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছের সংখ্যাই বেশী থাকে নদীগুলোতে। উপজেলার ডাকাতিয়া ও কাঁকড়ি নদীর প্রাকৃতিকভাবে মাছ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৩৫-৪০% ক্ষতিগ্রস্থ হয় শুধুমাত্র বেঁসাল ও চুঙ্গিজালে। বর্তমানে এ নদীগুলোতে প্রচুর পরিমান ভেঁসাল বসানো হয়েছে।
মৎস্য সংরক্ষন আইনে বেঁসাল, চুঙ্গিজালসহ স্থায়ী মাছ ধরার স্থাপনা বসানো নিষিদ্ধ। কিন্তু এ নিষেধজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে প্রতি বছরই ডাকাতিয়া ও কাঁকড়ির বুকে এভাবেই প্রভাবশালীরা বেঁসাল, কারেন্ট জাল ব্যবহারের মাধ্যমে মাছের প্রজনন-সক্ষমতাকে বাঁধাগ্রস্থ করছে। ডাকাতিয়ার বুকে স্থাপিত বেঁসালগুলো মুলত প্রভাবশালীদের মালিকানাধীন হওয়ায় অনেক সময় এগুলো অপসারন করতে গেলে বাঁধার সম্মুখিন হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে ইতোপূর্বে।
নদী সংলগ্ন বসবাসকারী ভুক্তভোগী এবং সচেতন মহলের দাবী প্রশাসন অতি দ্রæত এসব ভেঁসাল এবং চুঙ্গিজালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে মাছের প্রজনন এবং বংশবিস্তার আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে করে এই উপজেলার মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শেফাউল আলম বলেন, ডাকাতিয়া-কাঁকড়ি নদী চৌদ্দগ্রাম অংশের প্রাকৃতিক জলাশয়। এই জলাশয়ে নিবন্ধিত জেলে ব্যতিত অন্যদের মাছ স্বীকার করা নিষিদ্ধ। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় ডাকাতিয়া ও কাঁকড়ি নদীতে বেঁসাল উচ্ছেদকরণ, কারেন্টজাল জব্দে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তানভীর হোসেন বলেন, পানির প্রবাহ আটকিয়ে ভেঁসাল জাল দিয়ে মাছ স্বীকার করার কোন বিধান নেই। যারা এই কাজের সাথে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য অভিযান পরিচালিত করব। অতি শীঘ্রই বাঁধগুলো অপসারন করে পানির প্রবাহ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।