শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নাঙ্গলকোটে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি

নাঙ্গলকোটে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি

সাইফুল ইসলাম\ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ভয়াবহ বন্যায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভয়াবহ বন্যায় কৃষি খাতে রোপা আমনবীজ, রোপা আমন, শাকসবজি, রোপাআউশ, বোনা আমন ও আখের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য খাতে ফিনফিস, পোনা মাছ এবং পুকুর, খামার ও দীঘির অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাণিসম্পদ খাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি কমার সাথে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং পোল্টি ও গবাদিপশু খামারের ক্ষয়ক্ষতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে কৃষক ও খামারীরা ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে সহায়তার জন্য উপজেলা মৎস্য, কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন নিয়ে ছুটছেন।
সরকারিভাবে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ২০০ কোটি ৮২ লাখ ৬৯ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষক ও খামারি সূত্রে জানা যায়।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সর্বত্র মাঠের পর মাঠ আমন বীজতলা, রোপা আমন ও শাকসবজি ক্ষেত পানিতে পচে সম্পূর্ণ নষ্ট হতে দেখা যায়। মৎস্য খামার, পুকুর, দীঘিগুলো মাছ শূন্য এবং গবাদিপশু, পোল্টি খামারগুলো শূন্য পড়ে থাকতে দেখা যায়।
উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কৃষি খাতে রোপা আমন বীজতলা ৬৭০ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ ৪২৫ হেক্টর। রোপা আমন ২৪০ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ২২৮ হেক্টর। খরিপ-২ শাকসবজি আবাদকৃত ১০ হেক্টরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোপা আউশ ৯ হাজার ৬১০ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৬ হাজার ৮৭০ হেক্টর। বোনা আমন ৩৫০ হেক্টরের মধ্যে ৩৫০ হেক্টরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আখ ৬০ হেক্টরের মধ্যে ১ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ক্ষতির আর্থিক মূল্য দেখানো হয়েছে ১১৩ কোটি ২৪ লাখ ৬৯ হাজার ৪০০ টাকা।
উপজেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর/দীঘি ও মৎস্য খামার হচ্ছে, ৩ হাজার ১৬২টি। আর ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৪৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। মৎস্যচাষি ও পুকুর, দীঘি মালিক সূত্রে জানা যায়, বাস্তবে এ ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে।
প্রাণিসম্পদ খাতে বন্যাকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত গবাদিপশুর খামার হচ্ছে, এক হাজার ১২৩টি। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এক কোটি ২০ লাখ টাকা। হাঁস-মুরগির খামার ৬৪৭টি। আর্থিক ক্ষতি এক কোটি ১০ লাখ টাকা। মৃত পশুপাখির মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১১ কোটি ২২ লাখ টাকা। প্রাণিসম্পদ খাতে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ও পোল্টি খামারি আনোয়ার হোসেন মুকুল বলেন, মৎস্য ও পোল্টি খাতে আমার ৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। কাশিপুর গ্রামের হাজী জামাল উদ্দিন বলেন, আমার চার একর জমির কাঁচা-পাকা আউশ ধান সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। চার একর জমিতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফুজ্জামান ও মৎস্য কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া আবেদন এবং ক্ষয়ক্ষতির তালিকা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।

Share This

COMMENTS