
নাসার সঙ্গে আর্টেমিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’–এ স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নেতৃত্বে পরিচালিত এক বৈশ্বিক শান্তিপূর্ণ মহাকাশ অনুসন্ধান উদ্যোগে যুক্ত হলো। ২০২০ সালের অক্টোবরে গঠিত এই অ্যাকর্ডস হচ্ছে একাধিক দেশের মধ্যে অ-বন্ধনযোগ্য একটি চুক্তি, যার মূল উদ্দেশ্য হলো মহাকাশ অনুসন্ধানে স্বচ্ছতা, শান্তিপূর্ণতা এবং টেকসই সহযোগিতা নিশ্চিত করা।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের উপস্থিতিতে প্রতিরক্ষাসচিব মো. আশরাফ উদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ বৈশ্বিক মহাকাশ গবেষণা, মহাকাশ ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং মহাকাশ সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহারে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে যাচ্ছে। এটি দেশের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, “এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মহাকাশ গবেষণায় নতুন যুগের সূচনা হলো। এর ফলে বাংলাদেশ তার মহাকাশ কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিতে পারবে।”
প্রতিরক্ষাসচিব আশরাফ উদ্দিন জানান, আর্টেমিস অ্যাকর্ডস হচ্ছে ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’, ‘রেজিস্ট্রেশন কনভেনশন’ এবং ‘অ্যাস্ট্রোনট রেসকিউ এগ্রিমেন্ট’-এর নীতির ভিত্তিতে তৈরি এক নির্দেশিকা, যা মহাকাশ ব্যবহারে শান্তিপূর্ণতা, নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বকে উৎসাহিত করে। তিনি আরও বলেন, ১৯৮০ সালে গঠিত স্পারসো (বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থা) শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনে মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করে আসছে।
২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের ৫৩টি দেশ যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ৫৪তম দেশ হিসেবে এতে যোগ দিয়ে একটি সম্মানজনক আন্তর্জাতিক মহাকাশ জোটের অংশ হলো।
আশরাফ উদ্দিন বলেন, “এই চুক্তির ফলে প্রযুক্তি হস্তান্তর, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। নাসা ও স্পারসোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার পথ খুলবে, যা বাংলাদেশের মহাকাশ কার্যক্রমকে আরও জোরদার করবে।”
তিনি আরও জানান, এই সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নত স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রবেশাধিকার পাবে, যা দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট কর্মসূচি ও ভবিষ্যৎ মহাকাশ উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ ছাড়া স্পারসোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথিবী পর্যবেক্ষণ ও জলবায়ু মনিটরিংয়ের জন্য স্যাটেলাইট তৈরি ও ব্যবহারে প্রযুক্তিগত সহায়তা পাবে, যা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়—বিশেষ করে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায়—গুরুত্বপূর্ণ হবে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ গবেষণায় অংশ নিতে পারবেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা নাসার প্রশিক্ষণ, স্কলারশিপ ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ পাবেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা উইংয়ের মহাপরিচালক ও চিফ অব প্রটোকল এ এফ এম জাহিদ-উল-ইসলাম এবং স্পারসোর চেয়ারম্যান মো. রাশেদুল ইসলাম। বাসস