বৃহস্পতিবার, ৩রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বন্যা পরবর্তী নেই কোনো সংস্কার কুমিল্লার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া দু’উপজেলার ২২০ কিলোমিটার সড়কে জনভোগান্তি চরমে

<span class="entry-title-primary">বন্যা পরবর্তী নেই কোনো সংস্কার</span> <span class="entry-subtitle">কুমিল্লার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া দু’উপজেলার  ২২০ কিলোমিটার সড়কে জনভোগান্তি চরমে</span>
Views

            নিজস্ব প্রতিনিধি\ ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে দু’উপজেলার মোট ৮ ইউনিয়নের ৮২টি গ্রাম প্লাবিত হয়। স্মরণকালের আকস্মিক এই বন্যায় ২ উপজেলায় ফসল ও অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি ২২০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরমধ্যে বুড়িচং উপজেলায় ৭০ কিলোমিটার ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ১৫০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কুমিল্লা-মিরপুর সড়কের বিভিন্ন অংশ।

            ভয়াবহ বন্যার ১১ মাস অতিবাহিত হলেও কুমিল্লা-বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও মীরপুর সড়কে বন্যার ক্ষতচিহ্ন এখনো স্পষ্ট হয়ে আছে। ভাঙাচোরা সড়কের সংস্কার না হওয়ায় দু’উপজেলার মানুষের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সড়কের বিভিন্ন অংশ ভাঙাচোরা হওয়ার কারণে যাত্রীদের সময়ের অপচয়সহ বিভিন্ন সময়ে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এই মৌসুমে (বর্ষায়) বৃষ্টি হওয়ায় সমস্ত সড়কে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে যাত্রীবাহী যানবাহনগুলো হেলে দুলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পুরো সড়কে। আর বৃষ্টি হলেই সড়কের গর্ত সমূহ পানি জমে পুকুর, খাল-বিলের সৃষ্টি হয়। আর এসময় অতি ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলতে হয়। এছাড়া প্রতিনিয়তই অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনগুলো গর্তে উল্টে পড়ে গিয়ে যাত্রীদের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

            স্থানীয় লোকজন ও সিএনজি অটোরিকশা চালকেরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বহু যাত্রী, চালক পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এছাড়া হার্টের রোগী, গর্ভবতী নারীসহ বিভিন্ন রোগীদের এ সড়কে চলাচল খুবই ঝুঁকিপুর্ন। এসড়ক দিয়ে গর্ভবতী নারীদের হাসপাতালে নেয়ার আগে গাড়ি কিংবা অ্যাম্বুলেন্সে ডেলিভারি হয়ে যায়।

            জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি পার্শ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় প্রতিদিন স্থানীয়রাসহ দূরদূরান্তের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ নানা প্রয়োজনে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। বন্যা শেষে ১১ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো এই জনবহুল সড়কে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। কেন এখনো সড়কটি সংস্কার হচ্ছে না জানেন না দু’উপজেলার মানুষসহ এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা।

            এদিকে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছেন, তারা বারবার চেষ্টা করেও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেননি। তবে অচিরেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সড়কটির সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।

            সরেজমিনে সড়কের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, কুমিল্লা-মিরপুর সড়কটি কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা থেকে শুরু হয়ে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা হয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে সংযুক্ত কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের গিয়ে মিশেছে। যার ফলে মানুষের যাতায়াতের জন্য এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যার আগেও সড়কটির অবস্থা ততটা ভালো ছিল না। ভয়াবহ বন্যার কারণে সড়কটির অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। সড়কের বিভিন্ন অংশের পিচ ঢালাই উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। আর সড়কের এই বেহাল দশার কারণে এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে দ্বিগুণ সময় ব্যয় করতে হচ্ছে।

            এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন অংশে খানাখন্দের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। সড়কটির বেশিরভাগ অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সড়কের যাত্রী, রোগী, শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কের গর্তে পানি জমে সড়কটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

            কুমিল্লা-মিরপুর সড়কের নিয়মিত সিএনজি চালক মিজান মিয়া বলেন, গত প্রায় ১৫ বছর ধরে এ সড়কে গাড়ি চালাই। বন্যার আগে থেকেই সড়কটি সংস্কারের কথা শুনছিলাম। তবে বন্যার পরে সড়কটির অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এ সড়কে এখন গাড়ি চালাতে ভয় লাগে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে পারি। সড়কটির বিভিন্ন অংশ ভাঙাচোরা হওয়ার কারণে সড়কে খুব ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে হয়। শীঘ্রই সড়কটি সংস্কার না হলে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠবে।

            মশিউর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, কবে থেকেই শুনছি সড়কের কাজ ধরবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এর কোনো লক্ষণ চোখে পড়ছে না। এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়, সময়ও বেশি লাগে। একবার কুমিল্লা গেলে আসলে গাড়ির ঝাঁকুনির কারণে ব্যথার ওষুধ খেতে হয়। গাড়িতে উঠে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত দুর্ঘটনার ভয়ে থাকি। সড়কটির সংস্কার করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

            কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, কুমিল্লা-মিরপুর পুরো সড়কটি টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা বুড়িচং পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার রাস্তার টেন্ডার সম্পন্ন করেছি এবং আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আশা করি কাজ শুরু হবে।

Share This

COMMENTS