বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক সফর; বিপুল সংবর্ধনার প্রস্তুতি
জান্নাতুল ফেরদাউস পুষ্পঃ বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে শীঘ্রই নিউইয়র্কে আসছেন।
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে আগামী ২৬শে সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালের দিকে তাঁর ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্ত এর আগে বলা হয়েছিলো যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের অধিবেশনে ২৭শে সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালের দিকে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।
এর মধ্যে বিভিন্ন সাইড মিটিং এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে কিছু বৈঠকেও তিনি অংশগ্রহণ করতে পারেন। তবে বহুল আলোচিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ড. মোহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হওয়ার মতো তেমন কোনো সম্ভাবনা আছে বলে এখনো মনে করা যাচ্ছে না।
অবশ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে হয়তো সাইড লাইনে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছেন।
তদুপরি, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন মোড় নিতে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হতে পারে ইউনূস-শেহবাজ আরেকটি বৈঠকও।
ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত আগস্ট মাসের শুরুতে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান। তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছেন। এমন অবস্থায় নতুন বাস্তবতায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কের দিগন্তে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। অন্যান্য কর্মকান্ডের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও নীরবে কাজ করে যাচ্ছে দুই দেশ। একই সঙ্গে গত দেড় দশকে স্তিমিত হয়ে পড়া যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের পুনরুজ্জীবনও চাইছে পাকিস্তান।
এদিকে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বৈঠক করতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। গত ১৬ই সেপ্টেম্বর (সোমবার) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
ট্রিবিউন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য নীরবে কাজ করছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে এই সম্পর্ক স্থবির হয়ে পড়েছিল।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা রোববার দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভের পর গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘটনাটি অবশ্যই ইসলামাবাদের জন্য ঢাকার সাথে সম্পর্ক উন্নত করার “দরজা” খুলে দিয়েছে।
পাকিস্তানি এই সংবাদমাধ্যম বলছে, শেখ হাসিনার আমলে কোনো সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করাটা ছিল পাকিস্তানি কূটনীতিকদের জন্য খুবই কঠিন কাজ। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত কয়েক সপ্তাহে পাকিস্তানি কূটনীতিক এবং বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টাসহ অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে।
এতে করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে টেলিফোনে যোগাযোগও হয়েছে। ব্যাপকভিত্তিক যোগাযোগের এই বিস্তৃতি দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে শীতল সম্পর্ক আরও ভালো হওয়ার আশা পুনরুজ্জীবিত করেছে।
ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মধ্যে সম্প্রতি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও প্রক্রিয়া পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়াও রয়েছে। যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য দুই দেশের মধ্যে শীর্ষ ফোরাম। তবে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এই কমিশন কার্যত অপ্রপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। উভয় দেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০০৭ সালে।
অবশ্য পাকিস্তান এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সেই যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের পুনরুজ্জীবন চাইছে। এ উদ্দেশ্যে সম্প্রতি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধও করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার।
বাংলাদেশি মিডিয়ার মতে, বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ গত ১০ই সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকের সময় পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশে আসতে ইচ্ছুক পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা সহজ করার দাবিও জানান। এছাড়া পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইটও চালু করতে চাইছেন।
এদিকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে পাকিস্তানের হাইকমিশনার বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া যেমন পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনা এবং যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
একইভাবে (বাংলাদেশের সঙ্গে) সম্পর্ক মেরামত ও উন্নত করার চলমান প্রচেষ্টায় গতি আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই মাসের শেষের দিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বৈঠক করতে পারেন বলে সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই বৈঠক হলে তা হবে বহু বছরের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে প্রথম উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক। কারণ শেখ হাসিনা কার্যত তার শাসনামলে পাকিস্তানের সঙ্গে এই ধরনের যোগাযোগ ছিন্ন করেছিলেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এই মুহূর্তে পাকিস্তান সম্পর্কে অসাধারণ মনোভাব ও শুভেচ্ছা রয়েছে।
সেই ইতিবাচক অনুভূতির দৃষ্টান্ত দেখা যায় যখন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। এছাড়াও সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ভারতীয় নীল-নকশার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে অধ্যাপক শহীদুজ্জামান পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব করেন। তিনি পাকিস্তানকে ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তার এই বক্তব্য সামনে উপস্থিত দর্শকরা ব্যাপক করতালির মাধ্যমে গ্রহণ করেন। আর এটি বাংলাদেশে পাকিস্তান সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণাকে আরও শক্তিশালী করেছে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে সতর্কতার কথা বলা হয়েছে। সরকারকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে পাকিস্তান সম্পর্কে অনেক ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও ১৯৭১ সংক্রান্ত বিষয়গুলো এখনও বাংলাদেশিদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
অবশ্য বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তান’ দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও গভীর সহযোগিতার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের দুর্বিষহ স্মৃতি কাটিয়ে উঠতেও পারেন।
মূলত: সব মিলিয়ে আমেরিকার নিঊইয়র্ক রাজ্যে ৫ দিনের এই সংক্ষিপ্ত সরকারী সফরে ড. ইউনূস অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাবেন। তাঁর এই সফর নিয়ে নানা কারণে হতাশাগ্রস্ত প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে একটা ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে নি:সন্দেহে। তবে, আমেরিকায় ড. মোহাম্মদ ইউনূসের আগমনকে ঘিরে নিউইয়র্ক সিটিতে সরকারী তত্ত¡াবধানেও নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ নাগরিক সমাবেশ আয়োজনে বাংলাদেশ মিশন এবং কনস্যুলেটকে সহায়তা দিচ্ছেন নিউইয়র্কে বসবাসরত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য গিয়াস আহমেদসহ অন্যান্য বিশিষ্টজনেরাও।
গত ৬ই সেপ্টেম্বর বিকালে কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদার সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকের পর গিয়াস আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, নাগরিক সমাবেশে কেবলমাত্র আমন্ত্রিতরাই প্রবেশাধিকার পাবেন। কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের নির্দেশনা অনুযায়ী নাগরিক সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রবাসীদের সহায়তা নিচ্ছি আমন্ত্রণপত্র বিতরণের জন্যও। এখানকার কমিউনিটি অনেক বড়। কিন্ত দাওয়াত দিতে পারবো মাত্র ৫০০ জনকে। তাই এই তালিকাটি খুবই সতর্কতার সঙ্গে করতে হচ্ছে।
এছাড়া, নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের টাইমস স্কয়ার সংলগ্ন ম্যারিয়ট মারকুইস হোটেলের বলরুমে অনুষ্ঠিতব্য সভায় ড. ইউনূস উপস্থিত থাকবেন। এখানে ৫০০ আসন ব্যবস্থা থাকলেও ৬০০ মানুষের জন্য বসার আয়োজন প্রস্তুতি চলছে বলেও জানা গেছে।
নিউইয়র্কের ডেপুটি কনসাল জেনারেল নাজমুল হাসান গত বৃহস্পতিবার আরো বলেছেন যে, আগামী ২৬শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় ড. মোহাম্মদ ইউনূস নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগই হচ্ছেন নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেইটের শিক্ষার্থীরা।
ওদিকে, নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের অন্যতম সংগঠন ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’ আলাদাভাবে ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে সংবর্ধনা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেছেন, ‘আমরা জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনে লিখিতভাবে আমাদের আবেদন জানিয়েছি। তারা আমাদের আবেদন ঢাকায় পাঠাবেন এবং পরে যোগাযোগ করবেন বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন। তবে সরকারীভাবে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে বলেও আমরা জানতে পেরেছি।’
এ ব্যাপারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী বলেন, সবাই সহযোগিতা করলে সোসাইটি এককভাবেই বাংলাদেশের সরকার প্রধান ড. ইউনূসকে নাগরিক সংবার্ধনার আায়োজন করবে। এজন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে এবং এতে অর্থেরও কোন সমস্যা হবে না।
এক প্রশ্নের উত্তরে সভাপতি আব্দুর রব মিয়া বলেন, আমরা এককভাবেই ড. ইউনূসকে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে সংবর্ধিত করতে চাই। এজন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন ও বাংলাদেশ কনসুলেটের সার্বিক সহযোগিতাও কামনা করেন। প্রসঙ্গত তিনি আরো বলেন যে, সরকারের নির্দেশে যদি দূতাবাস-মিশন ও কনস্যুলেট ড. ইউনূসের সংর্বধনার আয়োজন করে সে ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সোসাইটির সম্মানজনক অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করতে চায়। এ প্রসঙ্গে আব্দুর রহীম হাওলাদার বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির প্রবাসী বাংলাদেশীদের অরাজনৈতিক সংগঠন। তাই নির্দলীয় সরকার প্রধান হিসেবে আমরা সোসাইটির পক্ষ থেকেই ড. ইউনূসের সংবর্ধনার আয়োজন চাই। তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে ‘নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক’ রুটে বিমান চালুর বিষয়টি শুধু আশ্বাসের মধ্যেই ছিলো। আমরা আশা করছি অন্তর্র্বতীকালীন সরকার বিমান চালুসহ প্রবাসীদের অন্যান্য সমস্যারও সমাধান করবেন।
প্রসঙ্গত: তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বাংলাদেশ সোসাইটি প্রাথমিকভাবে ৩০ লক্ষ টাকার একটি তহবিল প্রদান করেছে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে সেই স্মারকও প্রধান উপদেষ্টার হাতে হস্তান্তর করতে চাই। সংবাদ সম্মেলনে সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী বলেন, সবাই সহযোগিতা করলে সোসাইটি এককভাবেই বাংলাদেশের সরকার প্রধান ড. ইউনূসকে নাগরিক সংবার্ধনার আায়োজন সু-সম্পন্ন করবেন। খবর ইউএনএ’র
এছাড়া, বাংলাদেশ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন নিউইয়র্ক-এর নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে নিউইয়র্ক কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদার সঙ্গে এক মতবিনিময়ে অংশগ্রহণ করেছেন বলেও জানা গেছে। সংগঠনের চীফ এডভাইজার সৈয়দ এ আল আমিন, মোঃ ইসলাম, আবানি শরিফ, মোঃ নওমের হোসেন, ইউসুফ আলী মিয়া, সাবরিনা মাহমুদ, ফজলে রাব্বি নিলয়, এস এম ফয়সাল রাকিবুল হাসান, সৈয়দ আবতাহি এবং মোজাফফর আহমদ এই মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। ছাত্ররা ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালনের আগ্রহের কথা কনসাল জেনারেলকে জানিয়েছেন বলে সৈয়দ আল আমিন জানিয়েছেন।
এছাড়া, বাংলাদেশের বিগত আমলের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচিত সরকারগুলো ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালুসহ দীর্ঘদিন যাবত চলতে থাকা প্রবাসীদের কোনো দাবিই পূরণ করেন নি আজ পর্যন্তও। এ সব ন্যায্য দাবী-দাওয়ার বিষয়ে তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত মনের কথাগুলো সহজে বলতে চান বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে। এজন্য শীশ্রই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানকালীন সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে সার্বজনীন নাগরিক সংবর্ধনা দিতে চায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি।
এ ব্যাপারে গত ৭ই সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের এলমহার্স্টে বাংলাদেশ সোসাইটির নিজস্ব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ রব মিয়া এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রতি বছরই সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকার প্রধান যোগদান করে থাকেন। কিন্ত রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা সর্বদাই তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ননে ব্যস্ত থাকায় প্রবাসীরা তাদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি-দাওয়া কখনোই সরকার প্রধানের সামনে তুলে ধরতে পারেননি। ফলে সেগুলোর সমাধানও বছরের পর বছর হয়নি।
সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ রব মিয়া বলেন, অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবার আগামী ২২ থেকে ২৭শে সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। তাঁর এই সফর অন্যান্য সরকার প্রধানের চেয়ে এবার একেবারেই ভিন্ন রকমের হতে পারে। এতে আশা করা যায় যে, নির্দলীয় এই সরকারের প্রধানের কাছে এবার সকল প্রবাসী তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত মনের কথাগুলো সহজে বলার সুযোগ পেতে পারেন। আর তাই বাংলাদেশ সোসাইটিও সকল প্রবাসীর পক্ষ থেকে সেই সুযোগটি গ্রহণ করতে চায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের জন্য সার্বজনীন নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করতে আগ্রহী বাংলাদেশ সোসাইটি। এর মাধ্যমে প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া এবং রাষ্ট্র সংস্কারে বিভিন্ন বিষয় সরাসরি সরকার প্রধানের সামনে তুলে ধরতে চায় সংগঠনটি। তদুপরি, রাষ্ট্র সংস্কারের যে উদ্যোগ অন্তর্র্বতীকালীন সরকার নিয়েছেন- তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে প্রবাসীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু প্রস্তাবনাসহ একটি স্মারকলিপিও প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করতে চান প্রবাসীরা। অপরদিকে, সভায় আলোচনা হয়, সরকার প্রধান ড. ইউনূস ৫ দিনের সফরে আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর রোববার নিউইয়র্কে আসছেন। তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দেবেন। সাবেক সরকারের সমর্থকেরা যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে নজর রাখার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন আলোচকরা।
সবংর্ধনা অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা প্রফেসর ড. শওকত আলী বলেন, এ ব্যাপারে তিনি সিনিয়র সাংবাদিক সাঈদ তারেক ও টাইম টিভির আবু সিইও আবু তাহের প্রাথমিকভাবে আলোচনা করে সংবর্ধনার চিন্তা করেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বড় পরিসরে আলোচনার তাগিদ থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সহায়ক শক্তিগুলোর সাথে বসা হচ্ছে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেট থেকে কোন সবুজ সংকেত পাননি উদ্যোক্তারা।
সভায় বক্তারা আরো বলেন, দূতাবাস, মিশন ও কনস্যুলেটে সাবেক হাসিনা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট অফিসাররা এখনও অবস্থান করছে। তারা সংবর্ধনার আয়োজন করলে আমরা সেখানে যেতে পারি না। তারা পুরো অনুষ্ঠানকে স্যাবোটাজ করতে পারে। এ সময় শওকত আলী বলেন, সরকার যদি তাদের ওপর আস্থা রেখে অনুষ্ঠান করতে চায় সেেেত্র আমাদের কি করার আছে? তবে আমরা উদ্বেগের কথা যথাযথ জায়গায় জানাতে পারি। কিন্ত কোনভাবেই যেন ড. ইউনূসের সন্মান হানি না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০ জন প্রবাসী তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। তাদের অধিকাংশই প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক সমাজের ব্যানারে সবংর্ধনা আয়োজনের পক্ষে কথা বলেন। এ জন্য একটি সমন্বয়ক কমিটি গঠনেরও দাবি জানান। সমাপনী বক্তব্যে ড. শওকত আলী বলেন, আমি, আবু তাহের ও সাইয়িদ তারেক বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু এখনই চূড়ান্ত ঘোষণার পরিস্থিতি তৈরি হয় নি। তবে আমরা এ ব্যাপারে গুরুত্বের সাথে নজর রাখছি। যাতে কোথাও কোনভাবেই ড. ইউনূসকে অসন্মান করা না হয়। মিশন ও কনস্যুলেটও আমাদের কংক্রিট কিছু বলে নি। তাই আজ কোন কমিটি নয়। আরও দু একদিন যাক। সবকিছু দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজনে আমরা আবার বসবো।
উক্ত মতবিনিময় সভা সঞ্চালক ছিলেন, আহমেদ সোহেল। আলোচনায় অংশ নেন রীতা রহমান, সাঈদ তারেক, মোশাররফ হোসেন সবুজ, আব্দুস সবুর, অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন জনি, পারভেজ সাজ্জাদ, রাসিক মালিক, মোম্মদ সেলিম, কামরুল হাসান, শাহ আলম, মির্জা আলী আজম, এম রহমান মাসুম, মাজহারুল ইসলাম মিরন,মোহাম্মদ জসিম, মোহাম্মদ মজুমদার, গিয়াস উদ্দীন, ড. শফি চৌধুরী, ইমরান রন শাহ, মোহাম্মদ রানা, শামসুল ইসলাম মজনু, হানিফ চৌধুরী, আমলাক হোসেন ফয়সল, ডা. মোহাম্মদ কাশেম, মোহাম্মদ আলী, হেলাল উদ্দীন, জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ এ কাশেম, বদিউল আলম, আশরাফ হোসেন, ফেরদৌস আলম, ডা. আতাউল হক ওসমানী, কাজী জহিরুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান মিজান প্রমুখ।
ওদিকে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিউইয়র্ক সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রচার সম্পাদক আব্দুল হামিদ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, গত ৫ই আগস্ট ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে দেশবিরোধী চক্র জোরপূর্বক জনগণের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করে অসাংবিধানিকভাবে অনির্বাচিত অন্তর্র্বতীকালিন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশগ্রহণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সেই কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার আগমনের দিন ২২শে সেপ্টেম্বর রোববার সকাল ৮টা থেকে জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানন্দরের টার্মিনাল-৪ এর সামনে এবং ২৬শে সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার অথবা ২৭শে সেপ্টেম্বর শুক্রবার বেলা ১১টায় সাধারণ পরিষদে ভাষণের সময় সংবর্ধনার জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সকল সংগঠনকে এসব কর্মসূচিতে নিজ নিজ ব্যানারসহ অংশগ্রহণের জন্য আহ্বানও করা হয়েছে।
এখানে উল্লেখ থাকে যে, জাতিসংঘ সদর দপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত একটি বিশাল কমপ্লেক্স। ১৯৫২ সালে নির্মাণের পর থেকে এটি জাতিসংঘের দাপ্তরিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটন বু-রোর টার্টল বে এলাকায় ইষ্ট রিভারের পাশে এটির অবস্থান।