শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বৃহত্তর লাকসাম কে জিলা ঘোষনার দাবীতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে শহীদুল্লাহ ভূঁইয়ার খোলা চিঠি

বৃহত্তর লাকসাম কে জিলা ঘোষনার দাবীতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে শহীদুল্লাহ ভূঁইয়ার খোলা চিঠি

সাপ্তাহিক লাকসামবার্তা ডেস্ক: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রথমে বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরভাস্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে মহান আল্লাহর দরবারে তাঁহার রূহের মাগফেরাত প্রার্থনা করিয়া সর্বোপরি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক অত্যন্ত বিনীতভাবে এবং সরল বিশ্বাসে এলাকাবাসীর দীর্ঘ ৪৭ বৎসরের প্রাণের দাবী “বৃহত্তর লাকসাম”কে একটি জিলা হিসাবে ঘোষনা এবং বাস্তবায়নের ব্যাপারে যৌক্তিকভাবে সুবিবেচনার নিমিত্তে বিশাল প্রত্যাশায় আপনার বরাবরে এই খোলা চিঠিখানার মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত কয়েকটা কথা লিখিতেছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক আগ থেকেই ‘লাকসাম’ একটি বিখ্যাত জনপদের নাম ছিল। ১৮৫৮ থেকে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বৃটিশ নিয়ন্ত্রনাধীন ভারতীয় উপমহাদেশের পাকিস্তান অধিরাজ্যে, ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলায় এবং ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের শাসন আমলেও নানা কারণে ‘লাকসাম’ অত্যন্ত সুপরিচিত ছিল। ছিল প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র এবং ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানায় সমৃদ্ধ। এই লাকসামের মাটিতে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, অনেক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। জন্মিয়াছিলেন বাংলার বিদূষী নারী বেগম ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীসহ আরও অনেক জ্ঞানী-গুণী এবং কৃতিত্ববান মনীষী। শিক্ষা, সাংস্কৃতিক এবং জনহিতৈষণার ক্ষেত্রে লাকসামে, দেশে-বিদেশে এবং গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ লাকসামের মহিয়সি নারী বেগম ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীকে বৃটেনের মহারানী ভিক্টোরিয়া ১৮৮৯ সালে ‘নবাব’ উপাধিতে ভূষিত করিয়াছিলেন। বৃটিশ শাসনামলে ১৮৮৩ সাল থেকে বিশাল সম্পত্তির উপর নির্মাণ শেষে ১৮৯৩ সালে চালু করা হইয়াছিল রাজ্যের একটি প্রসিদ্ধ ‘লাকসাম রেলওয়ে জংশন’। ইহাতে শত বৎসরের অন্ধকারাচ্ছন্ন লাকসাম কিছুটা আলোকিত হইয়া উঠিয়াছিল। তখন লাকসাম রেলওয়ে জংশনের বিশাল এলাকার বৈদ্যুতিক বাতির সমারোহ দেখিয়া তৎকালের রেলযাত্রী সোনাইমুড়ির বদুরীন্নেছার “কত লাকসাম কত বাত্তি”র কথা (শোনা কথা) আজও মানুষের মূখে মূখে।

ইহাতে লাকসাম আরও বেশী পরিচিত হইয়া উঠে।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ১৯৩৯ সালের দিকে যথোপযুক্ত স্থান হিসাবে ‘কুমিল্লা জিলা সদর দপ্তর’ এই লাকসামের বুকেই স্থানান্তর এবং পরিচালনা করা হইয়াছিল। মাননীয় বাংলাদেশ সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী মহোদয়,  ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিকনির্দেশনামূলক ভাষণের পরবর্তিতে অসহযোগ আন্দোলনের  ডাকে ১৭ই এপ্রিলে মুজিবনগর সরকার গঠন শেষে সারাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হইয়াছিল। তন্মধ্যে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় সেক্টরটি ছিল লাকসাম রেলওয়ে জংশন এলাকায়। বাংলার সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণের মাধ্যমে পাক শত্রুদের বিতাড়িত করিবার সংগ্রামে তখন লাকসাম সেক্টরের নের্তৃত্বের সঙ্গে সোনাইমুড়ি, নোয়াখালী, ফেনী ও চাঁদপুরবাসীরাও জানেপ্রানে ঝাঁপাইয়া পড়িয়া মহান মুক্তিযুদ্ধকে উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রগামী এবং সফল করিয়া তুলিয়াছিলেন। ইহাছাড়া, দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলির মধ্যে সর্ববৃহৎ বধ্যভূমি ছিল লাকসামের বেলতলিতে। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে কালের স্বাক্ষী হিসাবে এক বিরল দৃষ্টান্ত এই বধ্যভূমিতে পাকবাহিনীর বর্বরতার শিকার অসংখ্য নিরপরাধ বাঙালী এইখানে শায়িত আছেন। আধামরা মানুষকেও এইখানে মাটিচাপা দিয়া রাখা হইয়াছিল। স্বাধীনতাযুদ্ধে বৃহত্তর লাকসামের আরও অনেক নির্মম ও গৌরবময়-অবিস্মরণীয় ইতিহাসও রহিয়াছে। মাননীয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী,  আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি মরহুম জালাল আহমেদ, আব্দুল আউয়াল, খোরশেদ আলম সুরুজ, অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার, বাবু সুবল চন্দ্র সাহা, চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ও মান্দুয়ারার মাষ্টার আবুল খায়েরসহ বঙ্গবন্ধুর অনেক প্রিয় আরও কয়েকজন রাজনৈতিক সহচরও ছিলেন এই লাকসামেরই বাসিন্দা।  আজকের দিনেও অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দায়িত্বরত আপনার মন্ত্রনালয়ের দুইজন সুযোগ্য মন্ত্রী আ.হ.ম. মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) ও তাজুল ইসলাম বৃহত্তর লাকসামেরই কৃতি সন্তান। নাসা গ্রুপ, ফেবিয়ান গ্রুপসহ দেশের প্রসিদ্ধ বেশ কয়েকটি শিল্প-কারখানার মালিক এই লাকসাম জনপদেরই কৃতিত্ববান মানুষজন। অসংখ্য ওলি-আল্লাহ, পীর-আওলিয়া ও দরবেশ লাকসামের মাটিতে শায়িত আছেন।

 ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের আয়ুব বিরোধী  গণঅভ্যুত্থানসহ সর্বোপরি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ জাতীয় সকল ঐতিহাসিক আন্দোলন-সংগ্রামে এখানকার বীর সন্তানেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখিয়াছিলেন।  অথচ, আদিকাল থেকেই বৃহত্তর লাকসামের দণিাঞ্চলের বিশেষ করিয়া বর্তমানকার মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলার মানুষগুলি ৪০/৫০ কিলোমিটার দূরবর্তী কুমিল্লা জিলা সদরের কোর্ট-কাচারী এবং অন্যান্য জরুরী কাজে যাতায়াতে অনেক ভোগান্তি পোহাইয়া আসিতেছেন। এই সকল দুর্গতি থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়ার লক্ষ্যে চরম অবহেলিত, দুর্দশাগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ‘লাকসাম’কে জিলা করিবার দাবী উঠিয়াছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। কিন্ত এই দাবী পূর্ন করিতে সুনজর দেন নাই কেহই।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,  অনেক রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানের বিদায়কালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মূহুর্তে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাক সেনারা গ্রেফতার করিয়া করাচীতে নিয়া কারাগারবন্দী করিলেন। দীর্ঘ ৯ মাসাধিকাল পর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভূট্টো’র ঘোষণা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে বিনা শর্তে মুক্ত হইয়া ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করিয়া বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ১২ই জানুয়ারি তিনি সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন এবং দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ইহার দুই সপ্তাহ পরেই বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহামান্য শেখ  মুজিবুর রহমানের নিকট ‘লাকসাম’কে জিলা করিবার দাবী পেশ করা হইয়াছিল। প্রদান করা হইয়াছিল, দীর্ঘ ৪ যুগ পূর্বে ২৬/০১/১৯৭২ ইং তারিখে লাকসামবাসীর পক্ষে দুইজন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য জনাব জালাল আহমেদ ও জনাব আবদুল আউয়ালের নেতৃত্বে তৎকালীন দেশের প্রসিদ্ধ ‘লাকসাম থানা’কে জিলায় রূপান্তরিত করা হউক” শিরোনামে একটি স্মারকলিপি। ইহাই ছিল কোনও জনগনের পক্ষ থেকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের নিকট দেশের সর্ব প্রথম দাবী এবং স্মারকলিপি।

এই দাবী পূরন করা হইবে বলিয়া মরহুম জালাল সাহেবকে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরনীয় নেতা বঙ্গবন্ধু আশ্বাসও দিয়াছিলেন। লাকসামের সাবেক সংসদ সদস্য উক্ত জালাল আহমেদ সাহেব ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী ৭ই মার্চের ভাষন অনুষ্ঠান শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করিয়াছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে  জালাল সাহেবের লাকসামের বাড়ীঘর পান্জাবীরা ডিনামাইট দিয়া ধ্বংস করিয়া ফেলিয়াছিল।  কিন্ত আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এমন একটা সময়ের মধ্যেই এতসব রক্তক্ষয়ী সংগ্রামকালে পাকিস্তানি হানাদাররা হত্যা করিতে সাহস না দেখাইলেও দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাহীন কতেক মির্জাফর বিপথগামী দেশদ্রোহী সেনাবাহীনিরা হাজার বৎসরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের ৭ কোটি মানুষের পরম বন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করিয়াছিল। ফলে, তৎকালে ‘লাকসাম’ আর জিলায় রূপান্তরিত হইলনা।  আসিলেন নতুন সরকার। দাবী অব্যাহত থাকে হতাশাগ্রস্ত বৃহত্তর লাকসামবাসীর। গাজীমুড়ার চাইলতাতলি খাল খনন উদ্বোধনকালে নওয়াব ফয়জুন্নেছা কলেজ মাঠে আয়োজিত জনসভায় এলাকার নের্তৃবৃন্দগণ তখন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নিকট ‘লাকসাম’কে জিলা ঘোষনার জোর দাবী তুলিয়া ধরিলেন এবং প্রদান করিলেন স্মারকলিপি।  ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন সাবেক সেনা প্রধান এইচ এম এরশাদ। এই সময়ে দেশের অনেক প্রশাসনিক পূনর্বিন্যাস ও বিকেন্দ্রীকরণ সম্পন্ন করা হইয়াছে। তাঁহার ৯ বৎসরের শাসনকালে গোটা দেশে উপজিলা পদ্ধতি চালু করনসহ অনেকগুলি নতূন জিলা-উপজিলাও গঠন করা হইয়াছে। কিন্ত বারংবার শত দাবী-দাওয়া স্বত্তেও তিনি ‘লাকসাম’টাকে জিলা বাস্তবায়নের ব্যাপারে কোনও গুরুত্ব দেন নাই। অথচ, তখন কয়েকটি নতুন জিলা বাস্তবায়ন করা হইয়াছিল; যেইগুলি লাকসাম থেকে কোনও অংশেই বেশী ঐতিহ্যবাহী ছিলনা।  ১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদকালে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

তিনিও লাকসামবাসীকে আশ্বাস দিয়াছিলেন; কিন্ত আদিকাল থেকেই এই স্বনামধন্য ও খ্যাতিসম্পন্ন ‘লাকসাম’-এর লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের দাবী অকার্যকরই থাকিয়া গেল। লাকসাম জিলা হইলনা।মাননীয় সরকার মহোদয়,  ১৯৯১ সালের নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে আপনি নিজেও লাকসামে আসিয়াছিলেন। লাকসাম পাইলট হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত জনসভায় লাখো জনতার সামনে লাকসামবাসীর জোর দাবীর প্রেক্ষিতে  সেইদিনকার ভাষনে নির্বাচনে জয়লাভ করিলে আপনি ‘লাকসাম’কে জিলা হিসাবে বাস্তবায়ন করিবার আশ্বাস দিয়াছিলেন। অতঃপর, ১৯৯৬ সালের ২৩শে জুন আপনি  প্রথম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পরবর্তিকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি থাকাকালীন আমাদের এমপি জনাব মোঃ তাজুল ইসলাম লাকসামকে জিলা বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা তুলিয়া ধরিয়া মহান জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করিয়া জোরালো বক্তব্য রাখিয়াছিলেন। কিন্ত ইহাতেও সরকার মহোদয়ের কোনও সুদৃষ্টি পড়ে নাই।  লাকসাম পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মোস্তফা কামাল খানের নের্তৃত্বে তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জিল্লুর রহমানকে লাকসাম পাবলিক হলের জনসভায় স্মারকলিপি দিয়াছিলেন লাকসামকে জিলা বাস্তবায়নের দাবী জানাইয়া।  ‘লাকসাম’কে জিলা হিসাবে ঘোষণার দাবীতে মানববন্ধন, সাংবাদিক সম্মেলন ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মসূচি পালনসহ মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এবং বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করিয়াছেন, ‘লাকসাম জিলা বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবন্ধুর প্রিয় রাজনীতিবিদ মরহুম জালাল আহমেদের পুত্র সাহিত্যিক ও সাংবাদিক শিব্বীর আহমেদ।  একই দাবীতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করিয়াছেন, লাকসাম জিলা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি, বর্তমান প্রজন্ম ফোরাম ও বৃহত্তর লাকসাম ফাউন্ডেশন।

  বিশাল মানববন্ধন করিয়াছেন লাকসামকে জেলা বাস্তবায়নের দাবীতে বিগত ০২/০৫/২০১৫ তারিখে মুদাফ্ফরগঞ্জ বাজার হাইওয়ে রোডে সর্বস্তরের এলাকাবাসীগণ।  শুধু বৃহত্তর লাকসাম এলাকা থেকে নয়; অনতিবিলম্বে লাকসামকে জেলা ঘোষনার দাবী উত্থাপিত হইয়াছে, বিদেশে অবস্থানরত অসংখ্য প্রবাসীর পক্ষ থেকেও। লাকসামকে জেলা ঘোষনার দাবীতে ২০১৫ সালের ৭ই এপ্রিল ওয়াশিংটনে সংগ্রাম কমিটির নেতা জনাব শিব্বীর আহমেদ কর্তৃক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় বরাবরে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসাইন  আমুর মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করিয়াছেন। নিঊইয়র্কে এক মত বিনিময় সভায় একই দাবী পেশ করিয়াছিলেন মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী আ.হ.ম. মোস্তফা কামাল সাহেবের নিকট বৃহত্তর লাকসাম ফাউন্ডেশন ইনক্-এর সভাপতি আব্দুল জলিল তিতুমীরের নের্তৃত্বে বিগত ২০শে জুলাই ২০১৭ তারিখে। স্বারকলিপি প্রদান করিয়াছেন লাকসাম জেলা বাস্তবায়ন পরিষদ যুক্তরাষ্ট্র শাখা। স্মারকলিপি গ্রহন করিয়া পরিকল্পনা মন্ত্রী বলিয়াছিলেন, লাকসামকে জেলা ঘোষনার দাবী দীর্ঘদিনের। এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবগত রহিয়াছেন।  ইহাছাড়া, ২০১৯ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর লাকসাম জিলা বাস্তবায়ন পরিষদ নেতা শিব্বীরের নের্তৃত্বে পূণরায় বাংলাদেশ সরকার মহোদয়কে স্মারকলিপি দিয়াছিলেন নিউইয়র্কের গ্রান্ড হায়াত হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী সরকারী দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি সাহেবের হস্তে।  বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে লাকসামকে জিলা হিসাবে বাস্তবায়নের অনবরত দাবী সংক্রান্তে হাজারও খবরা-খবর অনেক পত্র-পত্রিকায়ও প্রকাশিত হইয়াছে। প্রস্তাব রাখা হইয়াছে যে, ডাকাতিয়া নদী বিধৌত বৃটিশ আমল হইতেই সুপরিচিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর থানা এই ঐতিহ্যবাহী লাকসামকে দেশ স্বাধীনের পর থেকে কাটিয়া-ছিড়িয়া বিভক্ত করিয়া এই পর্যন্ত নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা সদর দক্ষিন, মনোহরগঞ্জ, লালমাই ও লাকসামসহ ৫টি উপজিলায় রূপান্তরিত ১৬ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এলাকার সহিত আরও ১১ লক্ষ জন বসতির পার্শ্ববর্তী চৌদ্দগ্রাম, বরুড়া ও শাহারাস্তিসহ ৩টি উপজিলা নিয়া মোট ৮টি উপজিলার সমন্বয়ে “লাকসাম”কে পূর্ণাঙ্গরূপে জিলা গঠন করা অনায়াসেই সম্ভবপর।

কিন্ত লাকসামবাসীর বদনসীববশতঃ ৪০/৫০ বৎসরেও কোনও সদাশয় সরকার মহোদয়গণের এইসব দাবী ও যুক্তির প্রতি কার্যকর কোনও সুনজর পড়ে নাই। ফলে, হতাশাগ্রস্ত লাকসামবাসীর একই দাবী অব্যাহত রহিয়াছে অদ্যাবধিও। মাননীয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মহোদয়,  বাংলাদেশকে হতদরিদ্র অবস্থান থেকে উন্নয়নশীল দেশের দিকে নিয়া যাইতে আপনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন এবং দেশবাসীর মধ্যে সেই স্বপ্ন জাগরিত করিতেছেন। বিশাল পদ্মা সেতুসহ অকল্পনীয় অনেক প্রকল্পে হাত দিয়াছেন। ফলে বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক বিশ্বের চোখে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বিশ্ব উন্নয়নের নেত্রী হিসাবে সর্বত্রই সমাদৃত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও পাকিস্তানের শৃঙ্খল ভাঙ্গিতে বাঙালি জাতিকে স্বপ্ন দেখাইয়াছিলেন স্বাধীনতার এবং তিনি সেই স্বপ্ন বাস্তবেই রূপ দিয়াছিলেন। তাঁহার সুযৌগ্য উত্তরসূরি হিসাবে আপনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাঙ্গালীদের স্বপ্ন দেখাইতেছেন একটি  উন্নত ও আদর্শ রাষ্ট্র বিনির্মাণের। সেই লক্ষে আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আগাইয়াও চলিতেছে।

এমতাবস্থায় লাকসাম’কে জিলা ঘোষনার ব্যাপারে বৃহত্তর লাকসামবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন’টাও আপনি বাস্তবায়ন করিবেন বলিয়া আমরা একান্তই আশাবাদী। আর আমাদের এই দাবী পূরণ করা হইলে ১৯৭২ সালে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর আশ্বাসটা বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতেই কার্যকর হইবে এবং ইহা লাকসামবাসী কেয়ামত পর্যন্ত স্মরণ রাখিবেন। বিগত ২০১৭ সালের জুলাই মাসের ২০ তারিখে নিঊইয়র্ক সিটির স্টার পার্টি হলে বৃহত্তর লাকসাম ফাউন্ডেশন ইউএসএ, ইনক্ কর্তৃক আয়োজিত প্রবাসীদের এক মতবিনিময় সভায় জোর দাবী-দাওয়ার প্রেক্ষিতে আমাদের এলাকার সুযোগ্য সন্তান পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব আ.হ.ম. মোস্তফা কামাল বলিয়াছিলেন, ‘লাকসামকে জিলা ঘোষণার এই দাবী সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবগত আছেন’। ইহাতে অর্ধশতাব্দিকাল যাবৎ হতাশাগ্রস্ত লাখও লাকসামবাসীর মনে দারুণ আশা-ভরসার সঞ্চার হইয়াছে। তাই উপরোল্লিখিত বৃহত্তর লাকসামের ৫টি উপজিলা এবং পার্শ্ববর্তী ৩টি উপজিলাসহ মোট ৮টি উপজিলার প্রায় ২৭ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এলাকার সমন্বয়ে লাকসামকে জিলা ঘোষণা এবং বাস্তবায়নের বিষয়ে আপনি মহামান্য সরকার প্রধানের নিকট এই খোলা চিঠির মাধ্যমে আকুল আবেদন জানাইতেছি। পাশাপাশি এই ব্যাপারে সর্বাঙ্গীন সহযোগীতা প্রদানের ব্যাপারে আমাদের বৃহত্তর লাকসামের ২ জন কৃতি সন্তান বিশ্বসেরা মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম. মোস্তফা কামাল এবং মাননীয় এলজিআরডি মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম মহোদয়ের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ করিতেছি।

বিনীত নিবেদকঃ শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া, লাকসাম, কুমিল্লা।

সূত্র: ইউএসএনিউজঅনলাইন

Share This