শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ব্যাহত হতে পারে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন  ক্ষতির মুখে কুমিল্লার সরিষা চাষীরা

ব্যাহত হতে পারে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ক্ষতির মুখে কুমিল্লার সরিষা চাষীরা

            ইসমাইল নয়ন\ ভালো ফলন পাওয়ার আশায় মৌসুমের শুরুতেই কুমিল্লায় যারা সরিষার আবাদ করেছিলেন, অকস্মাৎ ঘূনিঝড় মিধিলির আঘাতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন সেসব চাষীরা। তাদের স্বপ্নে হানা দিয়েছিলো ঘূর্ণিঝড় মিধিলি। এরপর দ্বিতীয় দফায় ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউমের’ প্রভাবে আবারাও বৃষ্টিপাত হয়েছে কুমিল্লায়। এতে করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন সরিষা চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করতে থাকা কৃষক। বিশেষ করে তুলনামূলক নিচু জমিতে যারা সরিষা আবাদ করেছেন কিংবা আবাদের জন্য জমি তৈরি করছিলেন তাদেরই বেশি ক্ষতি হয়েছে। ফলে এবার কুমিল্লায় সরিষা চাষ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত পারে বলে আশংকা করছে কৃষি বিভাগ।

            জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবছর  কুমিল্লাজুড়ে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার ৯ শত ৮ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ মেট্রিক টন। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। সম্পূর্ণরূপে আমন ধান কাটা হয়ে গেলে বাকি জমিতে সরিষা চাষ হবে। কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা আশানরূপ সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ।

            সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা সদর উপজেলা, দেবিদ্বার, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তুলনামূলক উঁচু জমিতে সরিষা চাষ করেছেন অনেক কৃষক। যেসব স্থানে পানি জমে থাকেনি এসব সরিষা জমিতে সবুজ আভা ছাড়িয়ে হলদে রঙ ফুটতে শুরু করেছে। হাসি ফুটছে কৃষকের মুখে। তবে আছে বিপরীত চিত্রও। বৃষ্টির কারণে পানি জমে থাকা নিচু জমিতে চাষ করা সরিষা নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক বীজতলার বীজ পচে গেছে।

            কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার গাজিপুর  গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি কৃষি অফিসের সরবরাহকৃত উন্নত জাতের সরিষা চাষ করেছি। তাই আবাদের শুরুতে যে বৃষ্টি হয়েছিল তাতে তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে যাঁরা দেশি জাতের সরিষা চাষ করেছে, তাঁরা আশানুরূপ ফলন পাবে না।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সিদলাই ইউনিয়নের পূর্ব পোমকাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, এ বছর মৌসুমের শুরুতে সরিষা করে এখন ক্ষতির মুখে পড়েছি। বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে থাকায় ছোট ছোট সরিষার চারাগুলো মরে গেছে।

            দেবিদ্বার উপজেলার মহেশপুর এলাকায় কৃষক আবুল হোসেন বলেন, এ বছর আমি জমি তৈরির প্রস্তুতি নেয়ার সময় টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারনে আমার জমিতে পানি জমে বীজ তলা নষ্ট হয়ে গেছে। মৌসুমে সময় যেহেতু আছে, জমির মাটি শুকালে আবারও চাষদিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। আমি তাই করবো।

            জেলার সদর উপজেলার আমড়াতলী এলাকার কৃষক আবদুল আউয়াল বলেন, আমাদের এখানকার জমি কিছুটা উঁচু। তাই বৃষ্টিতে কোনো ক্ষতি হয়নি। মৌসুমের শুরুতেই এবার সরিষা চাষ করেছি। গাছ বড় হচ্ছে। আশা করি ফলনও ভালো পাবো।

            এ বিষয়ে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, এ বছর সরিষার জমি কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে কৃষক তা পুষিয়ে নিতে পারবে। আমাদের লক্ষ্যমাত্র এখনো আশানুরূপ হয়নি, আমন ধান কাটার পর অনেক কৃষক সে জমিতে সরিষার আবাদ করবে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র অর্জিত না হলেও আমরা কাছাকাছি যেতে পারবো বলে আশাবাদী।

Share This