ব্রাহ্মণপাড়ায় ৭৫ হাজার মানুষ আর্সেনিকের ঝুঁকিতে
ইসমাইল নয়ন\ এমন খাবার পানি চাই যে পানিতে আর্সেনিক এবং রোগজীবাণু নেই নামে সরকার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের আর্সেনিকোসিস রোগ বিষয়ে একটি নীতিমালা সম্পর্কিত বই প্রকাশ করেন, যা জনগণের জন্য আশার আলো ছড়ায়। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত আর্সেনিক নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই।
৮টি ইউনিয়ন নিয়ে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া একটি ছোট উপজেলা, সেখানে ৭৫ হাজার লোক আর্সেনিকের ঝুঁকিতে রয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসেবে পুরো উপজেলায় ২ লাখ ৩২ হাজার ৬২৮ জন লোকবল রয়েছে। তার মধ্যে আর্সেনিক মুক্ত গভীর নলকূপ রয়েছে ৬ হাজার ৩৭১টি। ইউনিয়ন অনুযায়ী মাধবপুর ৭৫০টি, সিদলাই ৫৮৯টি, চান্দলা ৫৯৪টি, শশীদল ৮৪৮টি, দুলালপুর ৬৭০টি, ব্রাহ্মণপাড়া সদর ১৫০৪টি, সাহেবাবাদ ৭৮১টি ও মালাপাড়া ৬০৮টি গভীর নলকূপ রয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়াও উপজেলায় অর্ধ লক্ষাধিক অগভীর নলকূপের পানিতে মারাত্মক পর্যায়ে আর্সেনিক রয়েছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। উপজেলার এমন কিছু গ্রাম রয়েছে যেখানে মানুষ আর্সেনিক কি? এ রোগ হলে কি হবে। এ রোগের লক্ষণ কি কিছুই জানেনা। এছাড়া জনস্বাস্থ্য বিভাগের মতে এলাকায় অনেক গ্রামেই আর্সেনিকের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে এবং অনেক লোক অসুস্থ হয়েছে ও কিছু কিছু লক্ষণ ধরা পড়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ব্রাহ্মণপাড়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ সালে পুরো উপজেলায় ২০ হাজার টিউবয়েল আর্সেনিক পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৩ হাজার ৫ শত টিউবয়েলে আর্সেনিক মুক্ত বাকি ৬ হাজার ৫ শত টিউবয়েলে আর্সেনিক রয়েছে। এ অনুযায়ী ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ৩২ পার্সেন্ট লোক আর্সেনিকের যুক্ত পানি পান করছে। হিসেব অনুযায়ী ব্রাহ্মণপাড়ায় ৭৫ হাজার লোক আর্সেনিকের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া অগভীর নলকূপে প্রত্যেকটিতে মাত্রাতিরিক্ত বিপদজনক পর্যায়ে আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে। খাবার ও রান্নাসহ এ পানি ব্যবহার করছে। গভীর নলকূপের অভাবে বিষযুক্ত এই পানি পানও রান্নাবাড়া করছে উপজেলার লোকজন।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নে মধ্যে আর্সেনিকের বেশি ঝুঁকিতে ব্রাহ্মণপাড়া (সদর) ইউনিয়ন, মাধবপুর ইউনিয়ন, চান্দলা ইউনিয়ন ও সিদলাই।
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ব্রাহ্মণপাড়া উপ-সহকারী প্রকৌশল জাহিদ হাসান জানান, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় যে টিউবয়েলগুলোতে আর্সেনিক রয়েছে আমরা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে লাল কালি দিয়ে মার্ক করে দিয়েছি এসব টিউবলের পানি খাওয়া ও রান্না-বান্না করা যাবে না। আমরা আমাদের কার্যালয়ে বিনামূল্যে আর্সেনিক পরীক্ষা করে থাকি এবং সাধারণ মানুষদের মাঝে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আবু হাসনাত মোঃ মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, পানির মাধ্যমে মানুষের চামড়ায় এ রোগ পরিলক্ষিত হয়। আর্সেনিক একটি রাসায়নিক উপাদান। এ রোগের ওষুধ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত রোগীরা নিয়মিত ওষুধ ও নিরাপদ আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করবে এবং ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এ ছাড়াও এ রোগ হলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত হয়ে যায়। নিয়মিত ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেলে এ রোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার স.ম. আজাহারুল ইসলাম জানান, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আর্সেনিকের ভয়াবহতা থেকে আমরা নিরসনের চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে আমরা কিছু গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের সদর ইউনিয়নের নাইঘরে ৩৫০ পরিবারের জন্য সুপের পানি ব্যবস্থার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি ব্যবস্থার জন্য আরেকটি কার্যক্রম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।