বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সোমবারে নিউইয়র্কে যাচ্ছেন
বাসস: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার (২৩শে সেপ্টেম্বর) বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাবেন অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরসঙ্গী, নিরাপত্তা বাহিনী ও গনমাধ্যম কর্মী মিলিয়ে মোট ৫৭ জনের একটি বহর নিয়ে তিনি এ সফরে যাবেন। তম্মধ্যে বড় একটি অংশ থাকবে নিরাপত্তা ও প্রেস সংক্রান্তে। অর্থ্যাৎ সেখানে যাদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তাঁরাই যাচ্ছেন। এ সময় শেখ হাসিনা সরকারের আমলে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়া বহরের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, স্বাভাবিক সময়ে সংখ্যা ছিল ৩৪৪, ৩৩৫; এটা ছিল ৭৩ ও ৭৪তম অধিবেশনে। কোভিডের কারণে ৭৫তম হয়েছে ভার্চুয়ালি। কোভিডের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ৭৬তম অধিবেশনে ১০৮, ৭৭তম অধিবেশনে ১৩৮ জন গিয়েছিলেন। কোভিড পরবর্তী সময় যখন ব্যয় সংকোচনের কথা বলা হচ্ছিল তখনও ১৪৬ জনের বহর নিয়ে নিউইয়র্কে যায় বাংলাদেশ।
শনিবার (২১শে সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা চার্টার্ড ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাবেন না; যাবেন বাণিজ্যিক ফ্লাইটে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, নেপাল, ইউরোপীয় কমিশন প্রধান, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন তাদের ভূমিকা শক্তভাবে পালন করে জাতিসংঘ অধিবেশনে সে আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ।’ সংস্কার ও মানবাধিকার ইস্যুত বাংলাদেশের অঙ্গীকার ঘোষণা করা হবে বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। সে টানাপোড়েন কাটিয়ে ওঠার জন্য আলোচনা হবে।
উল্লেখ থাকে যে, অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২৭শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে তিনি দেশে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা কাহিনী তুলে ধরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্র মেরামতের জন্য অন্তর্র্বতী সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করবেন।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি তা গ্রহণ করেন।
এর পর ৮ই আগস্ট তিনি দায়িত্ব নেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারপ্রধান হিসেবে এবারই প্রথমবারের মতো বিদেশ সফরে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, এবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দেবেন, সেখানে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার ৫ই আগস্টের অভ্যুত্থানের বীরত্বগাধা তুলে ধরা হবে। ছাত্ররা প্রাণের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে কিভাবে সফল অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে এবং মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্নের বীজ বপন করেছে, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে তার প্রতিফলন থাকবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিজয়ের নতুন যাত্রায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সুশাসন এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অন্তর্র্বতী সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যেসব সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ড. ইউনূসের বক্তব্যে সেসব তুলে ধরা হবে বলে জানান শফিকুল আলম।
দেশ ত্যাগ করা শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক শাসনের অবসানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের দর্শন বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করবেন অধ্যাপক ইউনূস। নিজেদের গর্বিত ও মর্যাদাশীল দেশের জনগণ হিসেবে বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশ কিভাবে নিজেদের তুলে ধরবে, সেটিই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানাবেন প্রধান উপদেষ্টা।
শফিকুল আলম জানান, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নিয়ে দেশের ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্খার কথা উল্লেখ করে তিনি ভূ-রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হতে উদাত্তভাবে আহ্বান জানাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বেশ কয়েকটি দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এ ছাড়া তিনি আরো কিছু সাইডইভেন্টেও অংশ নিতে পারেন বলে জানা গেছে।
প্রকাশ থাকে যে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের কার্যক্রম শেষ করে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকার পথে রওয়ানা হবেন আগামী ২৭শে সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) রাতে।