মাটি কেটে নেয়ার ফলে ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তা বিলুপ্তির পথে সবজির ভান্ডার কুমিল্লার গোমতীর চর
কাজী খোরশেদ আলম\ কুমিল্লার প্রধান নদী গোমতীর উভয় তীরের চরাঞ্চলকে এ জেলার সবজির ভান্ডার বলা হয়। প্রতি বছর উজান থেকে আসা পলিতে উর্বর হওয়া এই চরে নানা রকমের সবজি ফলায় কৃষকরা। সেই সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে সরবরাহ হয়।
কিন্তু সম্প্রতি চর থেকে মাটি কাটার ফলে সেই সবজি ভান্ডার এখন প্রায় বিলুপ্তি হওয়ার পথে। মাটি খেকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা বর্তমানে এতটাই বেপরোয়া যে, দিনরাত তারা চরের মাটি কেটে বিক্রি করছে। কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না তাদের মাটি কাটা মহোৎসব। এতে করে সবুজের সমারোহ সবজির ভান্ডার গোমতীর চর এখন ধু ধু বালুচর।
রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবাধে গোমতীর চরাঞ্চল থেকে মাটি কেটে বিক্রি করায় কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারছে না। মাটি কাটার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিরক্ষা বাঁধ। বায়ু ও শব্দ দূষণে নদীপাড়ের মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীটির দুই তীরে রয়েছে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। মাটি খেকোরা রাতের আঁধারে এস্কেভেটর দিয়ে অবাধে মাটি কেটে ডাম্প ট্রাকযোগে বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয় না। উল্টো তাদেরকে হামলা-মামলাসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। এ ছাড়া, মাটিবাহী ভারী ডাম্প ট্রাকগুলো চলাচলের কারণে গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষকদের স্বার্থ ও বাঁধ রক্ষায় কুমিল্লা জেলা ও উপজেলা প্রশাসন গোমতীর চরাঞ্চল থেকে মাটি কাটা ও নদী থেকে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। নিষেধাজ্ঞার পর মাটি খেকোরা দিনের বেলায় মাটি কাটা বন্ধ রাখলেও সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় তাদের মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ। এ কাজ চলে সকাল পর্যন্ত।
অভিযোগ রয়েছে, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর (উত্তর) ইউনিয়নের আমতলী এলাকায় আলমগীর, ইয়াকুব, মিজান, রিপন, মোস্তফা, মনির, বায়েজিদ, হালিম, মাসুদ, বুড়িচংয়ের ময়নামতি ইউনিয়নের বাগিলারা এলাকায় আমির হোসেন, তপনসহ চার-পাঁচ জনের একটি সিন্ডিকেট, ষোলনল ইউনিয়নের মিথিলাপুর এলাকায় সাবেক ইউপি সদস্য এরশাদ মেম্বার, একই উপজেলার কাহেতরা অংশে সুমনসহ আরো অনেকে সদর উপজেলার আলেখারচর, পালপাড়া, বুড়িচংয়ের মীরপুর, গোবিন্দপুর অংশে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
মাটি কাটার ফলে চরাঞ্চল এক দিকে কৃষিশূন্য হয়ে পড়ছে, অন্য দিকে প্রতিরক্ষা বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি শব্দ ও বায়ূদূষণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মানুষ। কৃষকরা জানান, প্রভাবশালী মাটি খেকোদের ভয়ে তারা প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেন, গোমতীর আমতলী অংশে কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে শর্তসাপেক্ষে মাটি কাটার অনুমতি দেয়া হয়েছে। শর্তের বরখেলাপ করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, বিগত সময়ে একাধিকবার মাটি কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। মাটি কাটার কাজ আবার শুরু হলে খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সৌজন্যেঃ নয়াদিগন্ত