শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মিলাদুন্নবী, মিলাদ কিয়াম সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও পর্যালোচনা

মিলাদুন্নবী, মিলাদ কিয়াম সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও পর্যালোচনা

অধ্যক্ষ ইয়াছিন মজুমদার \       নবী সঃ এর জীবন ও কর্ম আলোচনা, নবী সঃ সম্পর্কে জানা, ব্যক্তি  সমাজ রাষ্ট্র পরিচালনায় যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন সে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা প্রতিটি মোমিনের কর্তব্য। এক শ্রেণীর মানুষ নবী সঃ এর জন্মদিন পালন ও কিছু আচার অনুষ্ঠান করাকেই ইবাদত ও নবী প্রেম বলে মনে করায় এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন এবং তার পর্যালোচনা  নিম্নে দেয়া হলো-

প্রশ্নঃ রবিউল আউয়াল মাসে ঈদে মিলাদুন্নবীর নামে হোক আর সিরাতুন্নবী নামে হোক জন্ম ও জীবনী আলোচনা হয়ে থাকে। মতবিরোধকারীরাও সিরাতুন্নবী নামে অনুষ্ঠান করে তাহলে ঈদে মিলাদুন্নবী নাম নিয়ে এত বিরোধীতা কেন?

উত্তরঃ নবী সঃ এর জীবনী বছরের যে কোন সময় আলোচনা করা বৈধ, রবিউল আউয়াল মাসে বেশি করে করলেও সমস্যা আছে মনে করি না। কিন্তু মিলাদুন্নবী অর্থাৎ জন্মদিন উদযাপন ইসলামী নিয়ম নয়, এটি বিজাতীয় সংস্কৃতি, যেমন বৌদ্ধরা তাদের ধর্মগুরুর  জন্ম ও মৃত্যুদিবস উদযাপন হিসেবে বৌদ্ধপুর্ণিমা পালন করে, হিন্দুরা শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন হিসেবে জন্মাষ্টমি পালন করে, খৃষ্টানরা যিশু খৃষ্টের জন্মদিন হিসেবে ক্রিস্টমাস ডে পালন করে, কিন্তু নবী সঃ ও সাহাবায়ে কেরাম নবী সঃ বা আর কারো এ ধরণের জন্মদিন পালন করেননি, আমাদের দ্বীন পালনের ভিত্তি হলেন যারা তারা যা করেননি আমরা কেন নতুন আবিষ্কৃত ইবাদত করবো, ইবাদত হিসেবে কিছু করতে হলে অবশ্যই তাদের আমল অনুযায়ী দলিল প্রয়োজন। বরং হিজরি সন গণনা শুরুর নবী সঃ এর জন্ম বা ইন্তেকাল থেকে গণনার প্রস্তাব এবং আজান শুরুর পরামর্শে আগুন জ্বালানো বা শিঙ্গাফুকের প্রস্তাব বিজাতীয় সংস্কৃতির সাথে মিলে যায় বিধায় গ্রহণ করা হয়নি। ইহুদীদের কথা- ‘আমরা ঈদ হিসেবে গ্রহণ করতাম’ এবং আয়াতে বর্ণিত ‘নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ে খুশি হও’ এগুলো কি সাহাবায়ে কেরাম জানতেন না? তাহলে উনারা কেন এ রকম বিশেষ দিনকে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করলেন না? ইসলামে ঈদ নিচক আনন্দ খুশি হিসেবে নয় বরং নামাজসহ ইবাদতের সংমিশ্রণ। ঈদ মানলে ঈদের নামাজ কোথায় আদায় করেন? নবী সঃ এর মক্কি জীবন হিসাব না করলেও মদিনার জীবন দশ বছর। এ দশ বছরে প্রতি বছর জন্মদিনে বা জন্ম মাসে কোন সাহাবি এ দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করা বা অন্য কিছু সাহাবীকে নিয়ে কোন আমল, কোন অনুষ্ঠান, কোন সমাবেশ করেন নি। এ হলো মিলাদ বা জন্ম আলোচনা আর ঈদে মিলাদুন্নবীর মধ্যে পার্থক্য।

প্রশ্নঃ একব্যক্তি আবু লাহাবের মৃত্যুর পর তাকে স্বপ্নে দেখে অবস্থা জিজ্ঞেস করলে সে বলল খুব অসুবিধায় আছি, তবে মোহাম্মদের জন্ম খবর নিয়ে যে দাসি সংবাদ নিয়ে এসেছিল, খুশি হয়ে তাকে যে দুই আঙ্গুল দিয়ে তাকে আযাদ করেছি, সে দুই আঙ্গুল দিয়ে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য মিষ্টি পানীয় আসে, তা চুষে খেয়ে কিছু তৃপ্তি পাই। একজন কাফের যদি জন্মখুশিতে এ মর্যাদা পায়, আমরা ঈমানদারগণ আরো বেশি সুবিধা পাব না কেন?

উত্তরঃ আবু লাহাব খুশিতে দাসী আযাদে উপকৃত হওয়ার বিষয়টি একজন স্বপ্নে দেখেছেন। নবী ছাড়া আর কারো স্বপ্ন কি আমল করার জন্য দলিল হতে পারে? তা ছাড়া এ ঘটনা কি সাহাবায়ে কেরাম রাঃ জানতেন না? এ রকম হলে খুশিতে তারা সব উজাড় করে দিতেন এবং তা অসংখ্য সহীহ হাদীসে বর্ণিত হত, কিন্তু জন্মদিন পালনকারিরা অনেক জাল হাদিস বানিয়েছে, যেমন আবু বকর রাঃ বলেছেন-  যে নবী সঃ এর জন্মদিনে এক দেরহাম ব্যয় করবে ——- ইত্যাদি। এ বিষয়ে এত জাল হাদিস বানানোর প্রয়োজন হতো না।

প্রশ্নঃ সহীহ হাদীসের বর্ণনা নবী সঃ জন্মদিনে রোজা রাখতেন, তাহলে দেখা যায় তিনি জন্মদিন পালন করতেন, আমরা করলে সমস্যা কোথায়?

উত্তরঃ নবী সঃ সোমবার রোজা রাখতেন তার কারণ কি শুধু একটি ছিল? হাদিসে বর্ণিত এ বার আমার জন্ম, এ বার অহি নাযিল হয়েছে,এ বার আমল আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করা হয়, আমার আমল রোজা অবস্থায় উপস্থাপন হোক এটা আমি চাই। তাহলে শুধু একটা কারণ উল্লেখ করেন কেন? ধরে নিলাম জন্ম বার হিসেবে নবী সঃ রোজা রাখতেন, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম রাঃ নবী সঃ এর পুর্ণ অনুসরণ করা সত্তে¡ও এ বারে রোজা রাখতেন না, এতে এ কথা প্রমাণিত হয় যে জন্মবারে কেহ শুকরিয়া স্বরুপ রোজা বা এ জাতীয় কিছু করলে তা একান্তই ব্যক্তিগত, অন্যরা তা করার মধ্যে কোন ফায়দা নেই, সামান্য ফায়দা থাকলেও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ তা ছাড়তেন না। শরীয়তের বিধান হলো ঈদের দিন রোজা রাখা নিষেধ, এ দিন ঈদের মত হলে নবী সঃ কিভাবে রোজা রাখতেন?

প্রশ্নঃ এ দিন ঈদ হিসেবে পালন করা যাবে না এমন দলিল আছে কি?

উত্তনঃ নীতিমালা হলো কোন বিধান পালন করতে দলিল লাগবে, নিষেধ না থাকা আমলের দলিল হবে না। যেমন নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত, আমি যদি বলি ছয় ওয়াক্ত পড়া যাবে, কারণ ছয় ওয়াক্ত নিষেধ এমন দলিল নেই, তা কি গ্রহণযোগ্য হবে? ঈদের নামাজের আগে ঈদগাহে নফল পড়া জায়েজ নেই, কারণ নবী সাঃ বা সাহাবায়ে কেরাম রাঃ পড়েন নি, অথচ তারা পড়তে নিষেধ করেছেন এমন দলিল নেই, ঠিক তেমনি উনারা ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেন নি এটাই দলিল হিসেবে যথেষ্ট, নিষেধ করেছেন এমন দলিল প্রয়োজন নেই। ইবাদত হিসেবে কিছু করতে কিছু দিক খেয়াল রাখতে হবে। ১) ছবব বা কারণ, যেমন- নামাজ ৫০ ওয়াক্ত ফরয হয়েছিল, অনুরোধের কারণে ৫ ওয়াক্ত হয়েছে, এখন যাদের অবসর, ৫০ ওয়াক্ত পড়ার সময় আছে, আপনি কি তাদের ৫০ ওয়াক্ত পড়ার নিয়ম করতে পারবেন? ২) জিনছ, যেমন কোরবানি, আপনি কি বাহিমাতুল আনআম দলিল দিয়ে ঘোড়া, গাধা, বড় তার্কি মোরগ, হরিণ ইত্যাদি দিয়ে কোরবানি করতে পারবেন? ৩) আদদ বা সংখ্যা, যেমন- জোহরের উপর কেয়াস করে জুমআ চার রাকাত, জোহরের ফরয কিছু বেশি ইবাদত মনে করে ছয় রাকাত পড়তে পারবেন? ৪) কাইফিয়ত, যেমন- নামাজের বিধান সব পালন করলেন, কিন্তু আগে সেজদা পরে রুকু এ ভাবে নবী সঃ এর দেখানো পদ্ধতির ব্যতিক্রম কি করতে পারবেন? ৫) মাকান বা স্থান, যেমন- কাবায় এক ওয়াক্ত নামাজে এক লক্ষ রাকাতের সাওয়াব এর উপর কিয়াস করে হজ্বের সময় আরাফায় অবস্থান না করে কাবা চত্বরে অবস্থান করলে হজ্ব হবে কি? ৬) জামান বা সময়, যেমন- শীতকালে ফজর কষ্টকর, বিশেষ করে বৃদ্ধদের জন্য। আল্লাহ কারো উপর সাধ্যের বাইরে বোঝা চাপান না, এ দলিল দিয়ে বৃদ্ধদের জন্য সুর্যের তাপ বাড়লে ফযর পড়া চালু করা যাবে কি? নবী সঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর পদ্ধতির বাইরে গিয়ে কোন ইবাদাত করা সঠিক নয়, তাহলে তাদের পদ্ধতির বাইরে গিয়ে মিলাদুন্নবী পালন করা কতটুকু সঠিক হবে?

প্রশ্নঃ নবীজির আগমনে মদিনা বাসি খুশি হয়ে গিয়েছিল তালায়াল বাদরু আলাইনা—- আমরা খুশি প্রকাশ করলে অসুবিধা কি?

উত্তরঃ নবীজির আগমনে মদিনা বাসি খুশি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু প্রতিবছর কি তারা এ রকম গিয়েছিল? তারা প্রতিদিন নবীর আগমনের অপেক্ষায় মদিনার প্রান্তে গিয়ে অপেক্ষা করতো, রোদ্রের তাপ বেড়ে গেলে ফিরে আসতো, কখনো আনন্দ প্রকাশ করেনি, যখন নবীজিকে দেখা গেল তখন আনন্দ প্রকাশ করেছিল। প্রতি বছর এমন দিনে বা নবীজির ইন্তেকালের পর কি কোন বছর এরূপ খুশি প্রকাশ করেছিল? এখন আমাদের কাছে নতুন করে কি নবীর আগমন ঘটে যা দেখে আমরা খুশি প্রকাশ করবো? তারা নবীজিকে দেখে আনন্দ প্রকাশ করেছিল, আপনি কি নবী সঃ কে দেখে আনন্দ প্রকাশ করেন?

প্রশ্নঃ আল্লাহ কোরআনে নবীদের জন্ম আলোচনা করেছেন, সাহাবাদের কেহ কেহ নবী সঃ কখন জন্মগ্রহণ করেছিলেন এ ধরণের আলোচনা করেছেন। তাহলে আমরা জন্ম আলোচনা করলে দোষ কোথায়?

উত্তরঃ আমরা ও বন্ধু বান্ধব একত্র হলে কে কখন জন্ম গ্রহণ করেছে আলোচনা করি, জন্মনিবন্ধন করতে, আইডি কার্ড করতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন করতে জন্ম তারিখ নিয়ে আলোচনা করি, আপনারা বলুন এ আলোচনা আর জন্মদিন পালন করা কি এক? ইবাদত হিসেবে সওয়াবের নিয়তে জন্মদিনে কিছু পদ্ধতি আবিষ্কার করা এবং তাকে সাওয়াব বা ইবাদত মনে করা, আর জন্ম আলোচনা কি এক? ইবাদত বা সাওয়াব মনে করতে হলে নবী সঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এ আমল করতেন কিনা তা দেখতে হবে।

প্রশ্নঃ দিন তারিখ ঠিক করে মাহফিল করা, অনুষ্ঠান করা অবৈধ নয়,তা হলে মিলাদ দিন তারিখ ঠিক করে করলে সমস্যা কোথায়?

উত্তরঃ দিন তারিখ ঠিক করে কোন প্রোগ্রাম করায় অসুবিধা নেই, দিন তারিখ ঠিক না করলে মেহমান আসবে কোন দিন? অসুবিধা হলো কোন নির্দিষ্ট দিনে বা জন্মদিনে বা জন্ম মাসে কোন প্রোগ্রাম করাকে আবশ্যক ও সাওয়াবের কাজ বা ইবাদত মনে করা এবং এ জন্য কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা, যা নবী সঃ বা সাহাবায়ে কেরাম রাঃ করেননি এবং এ দিনে বা এ পদ্ধতিতে করায় কোন সাওয়াব আছে বলেন নি। উনারা সাহাবায়ে কেরাম রাঃ কে সত্যের মাপকাঠি বলেন আর আমলের জন্য মাপকাঠির বাইরে গিয়ে দলিল খোঁজেন এটা স্ব বিরোধী কথা।

প্রশ্নঃ নবী সঃ বলেছেন মান ছান্না ফিল ইসলামে সুন্নাতান হাছানাতান ফালাহু আজরুহা ওয়া আজরু মান আমেলা বিহা—–। অর্থাৎ যে ইসলামে সুন্দর নিয়ম শুরু করবে সে প্রতিদান পাবে এবং যে এর উপর আমল করবে সেও প্রতিদান পাবে। তাহলে মিলাদ কিয়াম একটি সুন্দর নিয়ম এটা করতে অসুবিধা কোথায়?

উত্তরঃ প্রথমে এ হাদিসের শানে অরুদ অর্থাৎ এ হাদীস বলার প্রেক্ষাপট দেখুন। প্রেক্ষাপট হলো একবার মোদার গোত্রের কিছু লোক নবী সঃ এর নিকট এলো। তারা অভাব ও ক্ষুধার তাড়নায় কষ্ট পাচ্ছিল। নবী সঃ তখন সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর সামনে দানের ফজিলত বর্ণনা করে ভাষন দিলেন। ভাষন শুনে সর্ব প্রথম এক আনসারী সাহাবি থলে ভর্তি দেরহাম দান করেন, তার দেখাদেখি অন্যরাও দান করেন, তখন নবী সঃ উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। দান করা নতুন আবিষ্কৃত কোন ইবাদত নয়, দান পুর্ব থেকে বৈধ একটি আমল। এ আমলে প্রথম ব্যক্তি উৎসাহিত করেছেন। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসিন তাফসীরুল হাদীস বিল হাদীস একাধিক হাদীস দ্বারা করেছেন, যেমন কোন দায়ীর দাওয়াতে কেহ কোন আমল করলে ঐ দায়ীও সাওয়াব পাবে। কেহ মৃত সুন্নাতকে পুণরুজ্জীবিত করলে সে সাওয়াব পাবে, অন্য যারা আমল করবে তার সাওয়াব পরিমাণ সওয়াব পুনরুজ্জীবিতকারী পাবে ( মেশকাত ৩০ পৃঃ তিরমিজি, ইবনু মাজাহ বর্ণিত)। সুতরাং এখানে নতুন কোন ইবাদতের পদ্ধতি আবিষ্কারের কথা বলা হয়নি। আপনি আপনার বিবেককে প্রশ্ন করুন, যদি নতুন কোন সুন্দর পদ্ধতি আবিষ্কার করা বৈধ হয় তবে একজনের কাছে মনে হবে বাসর ঘরে দাম্পত্য জীবন শুরুর আগে লোকজনসহ কিছুক্ষণ জিকির করার নিয়ম সুন্দর, আরেকজনের কাছে মনে হবে নামাজ শুরুর আগে কয়েকজন মিলে মিলাদ কিয়াম করার নিয়ম সুন্দর, এভাবে একজনের কাছে একটা সুন্দর মনে হবে, তখন ইসলামী বিধি বিধান খেল তামাশা হয়ে দাঁড়াবে। তখন বিদআত বলতে আর কিছুই থাকবে না। তাহলে নবী সঃ বিদআতের ভয়াবহতায় যে সব হাদীস বলেছেন তা বেহুদা হয়ে যাবে।

প্রশ্নঃ মুলনীতি হলো ‘আছলু শ্শাইয়ে আল ইবাহাত’। অর্থাৎ কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকলে বস্তুর মুল হলো বৈধ হওয়া। তাহলে মিলাদ কিয়াম বিষয়ে যেহেতু নিষেধাজ্ঞা নেই তাই এ মুলনীতি হিসেবে এটা বৈধ হবে না কেন?

উত্তরঃ এ মুলনীতি দুনিয়াবি মোয়ামেলাত, খাদ্য পানীয় বিষয়ে। যেমন ভাত খাওয়ার সময় কেহ দলিল খুঁজে না, নবী সঃ বা সাহাবায়ে কেরাম রাঃ ভাত খেয়েছিলেন কি না ? খাদ্য পানীয়ের ক্ষেত্রে খোঁজা হয় এ খাদ্য নিষিদ্ধ বা হারাম কিনা, নিষিদ্ধ না হলেই তা বৈধ, এমনিভাবে নতুন আবিষ্কৃত জিনিষের ক্ষেত্রে, যানবাহনের ক্ষেত্রে, ভোগ বিলাসী দ্রব্যের ক্ষেত্রে নিষেধ না থাকলে তা বৈধ। ইবাদতের ক্ষেত্রে মুলনীতি হলো সুন্নাহ খোঁজা, দলিল খোঁজা, নবী সঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর সময় এ আমল করা হয়েছিল কিনা, এ আমল জায়েজ কিনা এটা না খুঁজে এ আমলের সুন্নাত পদ্ধতি কি তা খোঁজা আবশ্যক। এ জন্য নবী সঃ বলেছেন আমি দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি আল্লাহ’র কিতাব ও আমার সুন্নাত। নবী সঃ আরো বলেছেন, তোমাদের উপর আমার সুন্নাত ও খোলাফায়ে রাশেদীন এর সুন্নাত। এ জন্যই বায়াতে শাজারার নিচে নফল নামাজ পড়া শুরু করলে ওমর রাঃ গাছটি কেটে ফেলেন। তারপরও একান্ত দ্বীন রক্ষার প্রয়োজনে যদি ইবাদতের ক্ষেত্রেও নতুন কিছু না করলে দ্বীন রক্ষা হবে না এমন সম্ভাবনা দেখা দেয়, সে রকম কিছু করলে ওলামায়ে কেরাম তাকে মাজুরাত অর্থাৎ অপারগতার বিধানের মতো ধরে বিদআত লিদদ্বীন হিসেবে করার পক্ষে মত দিয়েছেন, যদিও এ রকম বিধান নেই বললেই চলে। ইবাদতের ক্ষেত্রে মুলনীতি হলো আসলুল ইবাদাতে আত তাওকীফ।

প্রশ্নঃ নবী সঃ এর মোহাব্বতকে সকল কিছুর উপরে স্থান দিতে হবে, নবীর মোহাব্বতে মিলাদ কিয়াম ইত্যাদি করা, সারা বিশ্বের অমুসলিমদের দেখিয়ে দেয়া যে মুসলমানরা তাদের নবীকে কত ভালোবাসে, তার জন্মদিন পালন করে। এতে ইসলামের গৌরব বাড়ে, সুতরাং এতে সমস্যা কি?

উত্তরঃ নবীর মোহাব্বত কিসে প্রমাণ হবে তা নবী সঃ বলে গেছেন। তিনি বলেছেন- যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসে সে আমাকে ভালোবাসে। তাই নবী সঃকে সত্যিকার ভালোবাসলে তার সুন্নাতের উপর পরিপূর্ণ আমল করা উচিত, বেদআত ত্যাগ করা উচিত। আজ বহু সুন্নাত মৃত। শতকরা কতজন মুসলিম জানে ফরয নামাযের পর সুন্নাত দোয়াগুলো কি কি? কতজন মুসলিম দুই সেজদার মধ্যখানের সুন্নাত দোয় জানে? কতজন মুসলিম সুন্নাতে মোয়াক্কাদা দাঁড়ি রাখে? দ্বীন কায়েমের জন্য নবী সঃও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর দেশত্যাগ, কষ্ট, প্রচেষ্টার কতটুকু আমরা করছি? কতজন মুসলিম সঠিকভাবে নবী সঃ এর জীবনী, সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর জীবনী নিয়মিত পড়ে, নবী সঃ এর উপর অবতীর্ণ কোরআন অর্থসহ বুঝে বা একটি বাংলা তাফসিরকে কয়বার পড়ে খতম দিয়েছি? জাল হাদিস বর্ণনা করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, জাল হাদিস বর্ণনা বিষয়ে আমরা কতটুকু পড়াশোনা করছি? তাই নবীর মোহাব্বত থাকলে সুন্নাতের সর্ব প্রকার আমল করা উচিত। আমরা যে কাজকে নবীর মোহাব্বত বলছি এগুলো পালন যদি নবীর মোহাব্বত হতো, তবে সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এ কাজগুলো বেশি করতেন, কারণ তারা নবী সঃকে সবচেয়ে বেশি ভালো বাসতেন। আর জন্মদিন পালন উপলক্ষে কোন অনুষ্ঠান বিধর্মীদের প্রভাবিত করবে এটা ঠিক নয়। কারণ তাদের জন্মাষ্টমী উদযাপন, ক্রীস্টমাস ডে, বৌদ্ধ পুর্ণিমা কি আমাদের উপর কোন প্রভাব ফেলে? সুতরাং এ জাতীয় যুক্তি দিয়ে বেদআত করার কোন সুযোগ নেই। ইসলামে যুক্তি দিয়ে নয়, ইবাদত হিসেবে কিছু করতে হলে দলিল মোতাবেক বা সুন্নাত মোতাবেক করতে হবে।

প্রশ্নঃ প্রাচীন বিজ্ঞ আলেম, এখন যারা বিদআত বলছেন, তাদের পুর্বসুরি অনেক আলেম ফকীহ মুফতি মুফাস্সির মিলাদ কিয়াম করেছেন এবং মিলাদ কিয়ামকে মোস্তাহাব বলেছেন, তারা কি সকলে ভুল করেছেন?

উত্তরঃ প্রাচীন আলেমরা অনেক বিজ্ঞ ছিল, আমাদের সামান্য যে টুকু এলেম তা উনাদের লেখা কিতাব পত্র পড়ে। তবে নবী রাসুল ছাড়া কেহ ভুলের উর্ধ্বে নয়। উনারা যে ভালো কাজ করেছেন তার বিনিময়ে আল্লাহ উনাদের অনিচ্ছাকৃত ভুল মা করে উনাদের জান্নাতের মেহমান করবেন এটা আমরা আশা করি। এবার উদাহরণ দিতে একটি বিষয় উল্লেখ করছি-  সকল আলেম একমত কাউকে সুরা ফাতিহা, সুরা নাস, ফালাক তিলাওয়াত করে বা নবী সঃ যে সকল দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন সেভাবে তদবীর করা বৈধ। নবী সঃ বলেছেন- যে তাবিজ ঝুলালো সে শিরক করলো। এ জাতীয় হাদিসের আলোকে সামান্য কিছু আলেমের মতে সকল ধরণের তাবিজ ঝুলানো শিরক। কিন্তু অধিকাংশ আলেমের মতে স্পষ্টভাবে লিখিত কোরআনের আয়াত, দোয়া ইত্যাদি দ্বারা লিখিত তাবিজ বৈধ, তবে তাবিজ আমাকে ভালো করবে, করেছে এ জাতীয় বিশ্বাস না করে ভালো করার মালিক আল্লাহ এটা মনে রাখতে হবে। প্রায় সকলের মতে আঁকি বুকি, দুর্বোধ্য কথা বা নকশা, কুফুরি কোন বাক্য দ্বারা তাবিজ হারাম। আপনি একটা লাইব্রেরীতে ঢুকে শর্ষিনার তাবিজের কিতাব, চরমোনাই এর তাবিজের কিতাব, আশরাফ আলী থানবী রঃ (যাকে হাকিমুল উম্মাত বলা হয়) এর বেহেশতি জেওর কিতাবসহ বড় আলেমদের লেখা তাবিজের কিতাবগুলো দেখবেন। দুর্বোধ্য নকশা, ফেরাউন কারুণ, শয়তানের নাম লিখে তাবিজ ঝুলানোর কথা, পুরুষাঙ্গে আরবিতে লিখে মর্দামি শক্তি বৃদ্ধির তাবিজ এর কথা, সহবাসরত দু’টি কুকুর আটক অবস্থায় যখন থাকে সে কুকুরের লেজ কেটে সহবাসের সময় কোমরে বেঁধে বিলম্বিত বীর্যপাতের তাবিজের কথা, সিংহের চামড়া ও পশম দিয়ে তাবিজ, বাঘের রক্ত দিয়ে তাবিজ, শিয়ালের কলিজা পুড়িয়ে ধোঁয়া নেয়ার তদবির ইত্যাদি আছে। আমি যে সকল মুরুব্বিদের কথা বললাম তারা সকলেই বড় আলেম, বড় হক দরবারের ব্যক্তি। এখন প্রাচীন আলেম বলে কি আপনি এগুলো মেনে নিবেন।  মুলকথা যত বড় আলেম, যত বড় গবেষক হোক, উনাদের কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে মানা যাবে না। এ জন্য ইমাম আবু হানিফা রঃ এর ভুল মাসআলা ইমাম আবু ইউসুফ ইমাম মোহাম্মদ সংশোধন করে দিয়েছেন, সংশোধিত মাসআলার উপরই ফতোয়া। তাফসিরে জালালাইনের সুরা ছোয়াদের ২১ থেকে ২৫ নং আয়াতের তাফসিরে লিখেছেন দাউদ আঃ এর ৯৯ জন স্ত্রী ছিল তিনি এক সৈনিকের সুন্দরী স্ত্রীকে ছাদে চুল শুকাতে দেখে তার প্রতি আসক্ত হন——। আপনি কি একজন বড় মুফাস্সির বলে একজন নবীর শানের খেলাফ এ তাফসির যা সম্পুর্ন ইসরাইলি রেওয়াতে, তা মানবেন? তাফসিরে মারে ফুল কোরআন বাংলা অনুবাদ পৃষ্ঠা ৭৩০ সুরা হিজর আয়াত ৪০ লিখেছেন ‘আদম ও হাওয়ার উপর শয়তানের চক্রান্ত সফল হয়েছে” সাহাবায়ে কেরামের উপরও শয়তানের ধোঁকা এ ক্ষেত্রে কার্যকর হয়েছে’ সুরা নজম আয়াত ৩-৪ পৃষ্ঠা ১৩০৩, ( সুরা ইউসুফ আয়াত ৮৩ পৃষ্ঠা ৬৮৫  ‘অহি সামগ্রিক নীতির হলে নবী সঃ তা থেকে ইজতেহাদ করে বিধানাবলী বের করেন এ ইজতেহাদে ভুল হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে’ সুরা ইউসুফ আয়াত ৮৩ পৃষ্ঠা ৬৮৫ ‘পয়গম্বর ও যদি ইজতেহাদ করে কোন কথা বলে প্রথম পর্যায়ে তা সঠিক নাও হতে পারে’ সুরা গাফের আয়াত ৫৫ আপনি গুণাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন’ পৃষ্ঠা ৬১৮ সুরা ইউনুস আয়াত ৯৮, পৃষ্ঠা ৬৩৩ সুরা হুদ আয়াত ৪৬ এ নবীদের ভুল করা বিষয়ে বলা হয়েছে, পৃষ্ঠা ৫১১ সুরা আরাফ আয়াত ১৯৯/২০০ তে নবী সঃ এর মনে শয়তানের ওয়াস ওয়াসা আসলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে, এভাবে বড় মুফাস্সিরদের তাফসিরে ও কিতাবে আছে, সেখানে ভুল দেখা গেলে ভুল বলবেন, নাকি বড় মুফাস্সিরের ভুল নেই বলবেন?

প্রশ্নঃ মাদ্রাসার ছাত্ররা তাদের শিক্ষককে দেখে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়। সেটা যদি বৈধ হয়, নবী সঃ কে দাঁড়িয়ে সালাম দিলে অবৈধ হবে কেন?

উত্তরঃ ছাত্ররা দাঁড়িয়ে সালাম দেয়াকে কোন ইবাদত বা এ দাঁড়ানোতে কোন সাওয়াব আছে মনে করে দাঁড়ায়না। শিক্ষক প্রবেশ করতে হাটা অবস্থায় বা দাঁড়ানো অবস্থায় থাকে, শিক্ষকের অনুসরণে তারা দাঁড়ায়। তা ছাড়া তারা শিক্ষককে দেখে দাড়ায়, আমরা কি সালাম দেয়ার সময় নবী সঃ কে দেখি? হযরত ফাতেমা রাঃ নবী সঃ কে দেখে দাঁড়িয়ে হাতে চুম্বন করেছেন, এটাকে ওলামায়ে কেরাম কেয়াম লিততাজিম বলেছেন, কিন্তু নবী সঃ এর ইন্তেকালের পর ফাতেমা রাঃ আর কখনো নবী সঃ এর স্মরণে এভাবে দাঁড়ায়নি। আমরাতো নবী সঃ কে দেখিনা, না দেখে কিয়ামে তাজিমের কোন বিধান নেই। আমি দেখেছি মিলাদ কিয়ামের পরে একজন বড় আলেম যিনি ইয়া নাবী সালাম আলাইকা বলে সালাম দিতে কেয়াম করার পর বক্তব্য দিচ্ছেন- যারা নবী সঃ কে সালাম দিতে দাঁড়ায়না তারা বেআদব। এ কথা বলার পর তিনি সকলকে নিয়ে বসে বসে পড়ছেন সালাতুন ইয়া রাসুলুল্লাহ আলাইকুম সালামুন ইয়া হাবিবুল্লাহ আলাইকুম। আরো কিছুক্ষণ পর বসে বসে পড়লেন শামসুদ্দোহা আচ্ছালাম বদরুদ্দোজা আসসালাম। এগুলো ও যে নবী সঃ কে সালাম দেয়া, মনে হয় তা বুঝতে ও পারেন না, তাই বসে বসে নিজেই সালাম দিচ্ছেন।

প্রশ্নঃ ঈদে মিলাদুন্নবী বিষয়ে অনেক দলিল দেয়া হয় তার উত্তর কি?

উত্তরঃ শুধু একটি হাদিস প্রমাণ হিসেবে দেখাতে পারলে আমার ভুল স্বীকার করে নিবো। রবিউল আউয়াল মাস বা বার ই রবিউল আউয়াল প্রতি বছর আসে। মক্কার জীবনে নবী সঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ অনেক কষ্টে ছিলেন, তাই মক্কি জীবন হিসাব না করলেও মদিনার জীবন দশ বছর, খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রায় ত্রিশ বছর, এরপর ও যতদিন সাহাবায়ে কেরাম রাঃ জীবিত ছিলেন, প্রতি বছর ১২ই রবিউল আউয়ালে বা রবিউল আউয়াল মাসে, নবী সঃ এর জন্ম দিন উপলক্ষে প্রতিবছর, সবাই না হলেও কয়েক জন সাহাবি মিলে জন্মদিন পালন, জন্ম খুশিতে ঈদ পালন, বা প্রতি বছর নবী সঃ এর জন্মদিনে কোন আমল করেছেন, কোন অনুষ্ঠান করেছেন। শুধু এমন একটি সহীহ হাদীস দ্বারা দলিল দিয়ে রেফারেন্স উল্লেখ করে আমার ভুল শোধরিয়ে দিন। সাহাবাদের এক একটি আমল একাধিক সনদে বর্ণিত হয়ে অনেক হাদিসে আসে। সেখানে প্রতি বছর জন্মদিন পালন করলে অগণিত সনদে অগণিত হাদিসে আসবে। আমার এতো হাদিসের প্রয়োজন নেই শুধু একটি সহীহ হাদীস দেখালেই চলবে, আমি আমার ভুল স্বীকার করে নিবো। বিচ্ছিন্ন বা ব্যতিক্রমি কোন আমলও অনেক সময় দলিল হয় না যেমন- ফজর নামাজে তিওয়াল আল মোফাস্সাল বা এ ধরণের বড় সুরা বা দীর্ঘ কিরআত পড়া, আবার মাগরিব নামাজে কিছার আল মোফাস্সাল বা ছোট সুরা দ্বারা নামাজ পড়া সুন্নাত। আপনি মুসলিম শরীফের হাদীসে দেখুন নবী সঃ মাগরিব নামাজে সুরা মুরসালাত ও সুরা জারিয়াতের মতো বড় সুরা এবং ফজর নামাজে সুরা ফালাক ও সুরা নাস অর্থাৎ ছোট সুরা দ্বারা নামাজ আদায় করেছেন। আপনি বলতে পারেন ফজরে ছোট সুরা দ্বারা, মাগরিবে বড় সুরা দ্বারা নামাজ আদায় সুন্নাহ না হলেও বৈধ, আমিও বলবো বৈধ। তবে কেহ যদি বিচ্ছিন্ন বা ব্যতিক্রমি এ হাদীসকে দলিল হিসেবে পেশ করে মাগরিবে বড় সুরা এবং এশায় ছোট সুরা দিয়ে নামাজ আদায় করার নিয়ম শুরু করে তবে তা হবে বিদআত, কারণ নবী সাঃ বা সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এ রকম পড়তেন না। ঠিক তেমনি নবী সঃ এর মিলাদ বা জন্ম আলোচনা, জীবনী আলোচনা করা, দরূদ সালাম দাঁড়িয়ে বসে শুয়ে প্রদান করা বৈধ। তবে কেউ যদি সালাম দিতে কোন পদ্ধতি আবিষ্কার করে, দাঁড়িয়ে সালাম দেয়ায় কোন আলাদা ফজিলত আছে মনে করে, জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন ইবাদত ও ঈদ আবিষ্কার করে, তিন দিনা চল্লিশা করা, এ দিনেই মেহমান খাওয়াতে হবে মনে করে, এ জাতীয় নতুন কিছুই বিদআত, যা সুযোগ থাকা সত্তে¡ও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ করেননি। অপরদিকে আরো একটি মুলনীতি হলো- ইজা খিফাল মানদুুুব আই ইয়ার পাড়া আন রাতবাতিহি পা মাকরুহুন অর্থাৎ মোস্তাহাব মোস্তাহছান আমলকে যদি তার স্তরের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় তা করা নিষিদ্ধ।

প্রশ্নঃ যারা ঈদে মিলাদুন্নবীর আমল করে না তাদের আকিদা খারাপ, তারা দুশমনে রাসুল এ রকম কথা বলা হয় এর উত্তর কি?

উত্তরঃ এ কথার উত্তর প্রশ্নের মধ্যে আছে। কারণ আকিদা ও আমল এক কথা নয়। আকিদা সাব্যস্থের জন্য সুস্পষ্ট কোরআনের আয়াত বা মোতাওয়াতের পর্যায়ের হাদীস লাগবে। খবরে ওয়াহেদ দ্বারা ও আকিদা সাব্যস্থ করা যায় না, এটাই মুলনীতি। প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে ঈদে মিলাদুন্নবীর আমল পালন না করার কথা, সুতরাং এটা আকিদা নয় আমল। আমল করার জন্য নবী সঃ বা সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এ আমল করেছেন কিনা তা দেখতে হবে, অর্থাৎ সুন্নাত পদ্ধতি কি তা দেখতে হবে। যারা সুন্নাত অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করে, বিদআত থেকে দূরে সরে থাকতে চায় তারা হলো দুশমনে রাসুল, তাদের আকিদা খারাপ, আর যারা বিদআত আমল করে তারা আশেকে রাসুল, এটা কি যৌক্তিক মনে হয়? অথচ বেদআতের ভয়াবহতা বর্ণনায় বেদআত থেকে বেঁচে থাকার জন্য নবী সঃ এর অনেক হাদিসের বর্ণনা রয়েছে। আমি যতটুকু বুঝেছি কিছু লোক নবী সঃ এর আশেক সেজে কিছু বিদআত আমল প্রসার ঘটিয়ে দল ভারী করার জন্য, অন্যদেরকে আকিদা খারাপ ও নবীর দুশমন বানানোর চেষ্টা করে। দল ভারী হলে তিনি মাহফিলে দাওয়াত পাবেন, মোটা অংকের টাকা ওয়াজের হাদিয়া নিয়ে পকেট ভারী করতে পারবেন। তাই তারা আমল ও আকিদার পার্থক্য ও মুলনীতি না বুঝিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করে। আমল যেমন নামাজ, কেহ নামাজ না পড়লে তার কবিরা গুনাহ হবে, তাকে পরকালে কঠিন শাস্তি দেয়ার ঘোষণা আছে, তারপরও তাকে কাফের বলা যাবে না, দুশমনে রাসুল বলা যায় না, তার ঈমান আছে, তাওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। পরকালে দীর্ঘ ভয়াবহ শাস্তি শেষে হলেও তার জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ আছে। অথচ তারা যেটাকে মোস্তাহাব মোস্তাহছান আমল বলেছে, বিদআতের আশংকায় কেহ তা না করলে আকিদা খারাপ ও দুশমনে রাসুল হয়ে যাবে, আপনার বিবেক কি বলে?

প্রশ্নঃ বর্তমান মুসলিম বিশ্বের বহু রাষ্ট্রে মুসলমানরা ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করে, মিলাদ কিয়াম করে। এটা বিদআত হলে কি ভাবে করে?

উত্তরঃ এটা একটা উদাহরণ, শরীয়তের দলীল নয়। আমল করতে উদাহরণ নয় দলিল প্রয়োজন। বিশ্বের কয়টি রাষ্ট্রে ইসলামী আইন চালু আছে? এ উদাহরণ কি ইসলামি আইন, কোরআনের আইন প্রয়োজন নেই এ কথার দলিল হবে? দাড়ি রাখা সুন্নাতে মোয়াক্কাদা, বর্তমানে কয়জন মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানের দাড়ি আছে? এটা কি দাড়ি না রাখার পক্ষে দলিল হবে? মোহররম বা আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া সাজানো, মাতম করা বৈধ নয়। কিন্তু প্রায় মুসলিম রাষ্ট্রে শীয়ারা তা করে, বাংলাদেশেও করে। এটা কি তাজিয়া ও মাতম করা বৈধ হওয়ার দলিল হবে? বিশ্বের যে যে দেশে মিলাদ কিয়াম করা হয়, কারা করে এবং শতকরা কতজন করে তা দেখলে এ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

            শেষ কথা- যখন মদ হারাম ঘোষণা করে আয়াত নাজিল হলো, সাহাবায়ে কেরাম রাঃ ঘর থেকে সকল মদ ফেলে দিলেন। নবী সঃ, মদ তৈরি বা রাখা হতো এমন কিছু পাত্র, যাদেরকে দুর্বা, হানতাম, নাকির, মুজাফ্ফাত বলা হতো এ গুলোর ব্যবহার ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। দেখুন মদ হারাম, কিন্তু পাত্র কেন নিষিদ্ধ হবে? কারণ এগুলো মদের কথা মনে করিয়ে দিবে, এবং মদের দিকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। এ নীতিমালার আলোকে কোন আমলে যদি বিদআতের দিকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে তা থেকে দূরে থাকতে হবে।

লেখকঃ অধ্যক্ষ, ফুলগাঁও ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, লাকসাম, কুমিল্লা

Share This

COMMENTS