শনিবার, ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মুরাদনগরে ড্রেজারে গিলে খাচ্ছে বছরে ২ হাজার একর কৃষি জমি

মুরাদনগরে ড্রেজারে গিলে খাচ্ছে বছরে ২ হাজার একর কৃষি জমি
Views

            আজিজুর রহমান রনি\ কুমিল্লার মুরাদনগরে ফসলি জমি ধ্বংস করে অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলনে মেতে উঠেছে একাধিক সংঘবদ্ধ ড্রেজার চক্র। প্রশাসনের একাধিক অভিযান, শত শত ড্রেজার মেশিন জব্দ ও মোটা অংকের জরিমানা সত্তে¡ও বন্ধ হচ্ছে না এই ভয়াবহ ধ্বংশযজ্ঞ। স্থানীয়রা বলছেন, শুধু ড্রেজার ধ্বংস নয়; অপরাধীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ও কঠোর আইনি ব্যবস্থা না নিলে এ চক্রকে কিছুতেই থামানো যাবেনা।

            আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি সরকারি অনুমোদন বা পরিবেশ ছাড়পত্র ব্যতিরেকে কৃষিজমি বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এলাকায় বালু-মাটি উত্তোলন করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদন্ড এবং ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।

            উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাকিব হাছান খান জানান, গত কয়েক মাসে ৩০০টির বেশি ড্রেজার ধ্বংস, সাড়ে ৩ লাখ ফুট পাইপ বিনষ্ট এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবে অভিযানকালে অপরাধীদের উপস্থিত না পাওয়ায় ফৌজদারি মামলা করা যাচ্ছে না।              স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযানের আগে চক্রের সদস্যরা প্রশাসনের গতিবিধি জেনে যায়। ফলে তারা নিরাপদে পালিয়ে যায়, আবার রাতে ফেরত এসে মেশিন চালু করে দেয়।

            স্থানীয় ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, অবৈধ ড্রেজিংয়ের বিরুদ্ধে শুধুই মোবাইল কোর্ট বা জরিমানা যথেষ্ট নয়। অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে এই অপরাধ বন্ধ হবে না।

            কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মুরাদনগরে ২০১৮ সালে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ২৯৩ হেক্টর (৬০ হাজার ২৪ একর)। ২০২৫ সালে এসে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২৯৩ হেক্টরে (৪২ হাজার ৭২২ একর প্রায়)।

            অর্থাৎ গত ৭ বছরে ৭ হাজার হেক্টর (১৭.৩ হাজার একর প্রায়) আবাদি জমি কমেছে। গড় হিসাবে বছরে আবাদি জমি বিলীন হচ্ছে ২ হাজার ৪৭১ একর।

            অপরিকল্পিত বসতবাড়ি নির্মাণ, অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে কৃষিজমি খনন, ইটখোলাসহ নানা স্থাপনায় মাটি বিক্রির কারণে হারিয়ে গেছে এসব জমি।

            সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ২ শতাধিক গ্রামের ৮৬টি স্থানে অবৈধ ড্রেজার মেশিন চলছে। মাইলের পর মাইল পাইপ সংযোগ দিয়ে ড্রেজিংয়ের মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটখোলায়।

            কোথাও ফসলি জমি আবার কোথাও পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ইউসুফনগর, জুগেরখিল ও কামাল্লা গ্রামে ড্রেজার চলছে।

            অবৈধ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ৫০-৬০ ফুট গভীর থেকে মাটি ও বালু তোলা হচ্ছে। এতে আশপাশের ৩ ফসলি জমিগুলো পরিণত হচ্ছে কূপে।

            উপজেলার ছালিয়াকান্দি গ্রামের মোবারক হোসেন, বোরারচরের আলফু মিয়া, কৃষ্ণপুরের জমির উদ্দিন এবং কামাল্লা গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, ড্রেজার বসিয়ে গভীরভাবে মাটি কাটার কারণে তাদের কৃষিজমি ধসে পড়ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ড্রেজার মালিকদের কাছে কম মূল্যে জমি ছেড়ে দিতে হচ্ছে।

            ড্রেজার ব্যবসায়ী হারুন মুন্সী বলেন, ‘সবাই মনে করে, আমরা ড্রেজার চালাইয়া কত টাকা জানি কামাইতাছি! আসলে একসময় ঠিকই কামাইতে পারতাম। প্রতি প্রজেক্টে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা লাভ হতো। তখন কাউরে অত টাকা দিতে হতো না। এখন অনেককেই টাকা দিতে হয়। সব মিলিয়ে এখন তেমন একটা লাভ করতে পারি না।’

            ড্রেজার দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেন, ‘এর ফলে পার্শ্ববর্তী আবাদি জমিগুলোও কমে যাচ্ছে দিন দিন। আমরা মুরাদনগরে ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কাজ করছি।’

Share This

COMMENTS