যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সদর দপ্তরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উচ্চ-স্তরের অধিবেশন শুরু


৪৭ Views
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া: নিউইয়র্কের সদর দপ্তরে গত সোমবার থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উচ্চ-স্তরের অধিবেশন শুরু হয়েছে- যেখানে সকল নেতারা বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য একত্রিত হয়ে থাকেন। এটি ৮০তম বার্ষিকী। মূলত: জাতিসংঘ সংগঠনের জন্য এটি একটি কঠিন সময়ে আসে।
বিশ্বব্যাপী চলছে যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাজেটেও রয়েছে সংকট। এটি একটি বড় মঞ্চ হিসেবে রয়ে গেছে, যেখানে ১৪০ জনেরও বেশি বিশ্ব নেতা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং প্রতিনিধিদল নিউ ইয়র্কে একত্রিত হয়ে থাকছেন। অধিবেশনে গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া সাধারণ বিতর্কটিই মূল অনুষ্ঠান, যেখানে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রেখে থাকবেন। এতে মূল বিতর্কের বাইরেও বিশ্বের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও হয়তো আলোচনায় স্থান পেতে পারে।
বিশেষ করে এবারকার কর্মসূচির মধ্যে থাকতে পারে: ২২শে সেপ্টেম্বর (সোমবার), ফ্রান্স এবং সৌদি আরব আয়োজিত একটি সম্মেলনে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের মর্যাদা কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান পেতে পারে। তদপুরি, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা এবং পর্তুগাল ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন যে, তারা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ফ্রান্সও তা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও, এস্তোনিয়ান আকাশসীমায় রাশিয়ান যুদ্ধবিমানের সাম্প্রতিক অনুপ্রবেশের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদ একটি জরুরি বৈঠক করবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। *২৩শে সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার), নিরাপত্তা পরিষদ গাজা যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে একটি বৈঠক করবেন বলেও আশা করা হচ্ছে দুপুর ১টার দিকে এবং ইউক্রেন নিয়ে আরেকটি বৈঠকও বিকেল ৪টায় সময় হতে পারে। *২৪শে সেপ্টেম্বর (বুধবার) জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং সমাধান নিয়ে আলোচনা করার জন্য জাতিসংঘের নেতাগণ একটি জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে জড়ো হবেন বলেও আশা করা যাচ্ছে।
তদপুরি, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির তার দেশে রাশিয়ার আক্রমণ সম্পর্কে প্রায় নিশ্চিতভাবেই বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। আগস্টে মিঃ ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের পর জেলেনস্কি সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন, তবে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির ভি. পুতিনের সাথে সাক্ষাতের সম্ভাবনা এখনও অধরাই রয়ে গেছে এবং মস্কো তার ড্রোন হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে। *২৫শে সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার), নেতারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আলোচনা করবেন বলেও সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে। তাছাড়া, উচ্চ-স্তরের এই সমাবেশ বিশ্ব নেতাদের সাথে একান্ত বৈঠকের আয়োজনও করা হয়ে থাকে সুযোগও পাওয়া গেলে। ওদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সরাসরি দেখা করার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন। গত মাসে মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ইউক্রেনের যুদ্ধ ধীর করার জন্য খুব একটা কার্যকর না হওয়ার কারণে এই সুযোগে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার মার্কিন প্রতিপক্ষের সাথেও দেখা করতে পারেন। তদুপরি,, ২৫শে সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং তার প্রতিনিধিদলকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, কিন্তু সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ার পক্ষে ভোট দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে জনাব আব্বাসের পূর্ব-রেকর্ড করা একটি বিবৃতিও রয়েছে। গাজা সিটিতে ইসরায়েলের স্থল অভিযান ছিটমহলে মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে, যেখানে ক্ষুধা তীব্র। সুদানের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কামিল ইদ্রিসও বৃহস্পতিবার বক্তব্য রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কারণ দুই বছর ধরে তার দেশে গৃহযুদ্ধ চলছে। এছাড়া, এখানে উল্লেখযোগ্য আরো কিছু নেতৃবৃন্দের প্রতিদিনের প্রোগ্রামর সংক্ষিপ্তসার হলো: মঙ্গলবার, ২৩শে সেপ্টেম্বর: এক দশক ধরে চলা ঐতিহ্য অনুসরণ করে, ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা সদস্য দেশগুলির মন্তব্য প্রকাশ করতে চলেছেন। এই মাসে, দেশটির প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারোকে ২০২২ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের তত্ত্বাবধানের জন্য ২৭ বছরেরও বেশি কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। মিঃ ট্রাম্প ব্রাজিলকে অভিযোগ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং মিঃ লুলা মার্কিন চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আয়োজক দেশকে দ্বিতীয়বার বক্তব্য রাখার জন্য সম্মেলনের পর, মিঃ ট্রাম্প পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন।
তবে তিনি বক্তব্যে কিসের উপর জোর দিতে পারেন বা বলবেন- সে ব্যাপারে কোনো আইডিয়া পাওয়া যায়নি। তবে তিনি গাজা এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ সংক্রান্ত দুটি সংঘাতের অবসান ঘটানোর ব্যাপারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন- যা এখনও পর্যন্ত সফল হয়নি। তাছাড়া, গোটা যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপী ক্রমবর্ধমান অভিবাসন দমন এবং আমেরিকান শিল্পগুলোকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে শুল্কের ঢেউ যা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য অংশীদারদেরকে আতঙ্কিত করে তুলেছেন- সেগুলোর ব্যাপার নিয়ে হয়তো কথা বলতে পারেন। ওদিকে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ছাড়াও জর্ডান, কাতার এবং মিশরের নেতারাও বক্তব্য রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ ইসরায়েল এই মাসে কাতারে হামাসের কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে, যা কিছু আরব নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছেন।
অধিবেশনে চেম্বারে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বক্তব্যও শোনার কথা রয়েছে, যিনি ইসরায়েলের সাথে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান রক্ষার প্রচেষ্টায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি ক্যারল নওরোকি, যার দেশ রাশিয়ান ড্রোনের সাম্প্রতিক আক্রমণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে- সে বক্তব্য দেয়া হতে পারে।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস গত সোমবার বিকেল আড়াইটায় (স্থানীয় সময়) জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে অবতরণ করেছেন। ওয়াশিংটন ডিসির রাষ্ট্রদূত তারেক মো: আরিফুল ইসলাম এবং বাংলাদেশের জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টাসহ তার সফরসঙ্গীদেরকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানিয়েছেন। ওদিকে, এবারই প্রথমবারের মতো প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে পাঁচ জন রাজনৈতিক নেত- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা জাতিসংঘের প্রোগ্রামে এসেছেন। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার এই আগমন উপলক্ষে বিএনপি এবং জামায়াত বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে জড়ো হয়। আবার আওয়ামীলীগের কিছু লোকজনও বিমানবন্দেরর ৮নং গেইটে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন।
তবে এসময় মারাত্মক বড় ধরণের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য গোলাম ফারুক শাহীন বলেছেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানিয়েছি। পরে আমরা তার নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের আশ্বস্ত করেছি যে, যুক্তরাষ্ট্রে যে কোন ষড়যন্ত্র বিএনপি নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে মোকাবেলা করবে। তবে ড. ইউনূসের আগমনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত এবং আওয়ামীলীগের মধ্যে উত্তেজনা এখনো শেষ হয়নি। ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে দেশের শত্রু আখ্যায়িত করে তাকে নিউইয়র্কে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ। গত কয়েকদিন ধরে তারা নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে মিছিল মিটিং করেছে। সর্বশেষ আজ রাত আটটায় জ্যাকসন হাইটসে বিএনপির সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। জানা গেছে, আওয়ামীলীগ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, মিশিগান, শিকাগো, বস্টন, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, নিউজার্সি, কানেকটিকাট থেকেও নেতাকর্মীদের নিউইয়র্কে আসতে আগ থেকেই নির্দেশনা দিয়েছেন।
তদানুযায়ী ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী নিউইয়র্কে এসে অবস্থান করছেন। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতির ড. সিদ্দিকুর রহমান, সেক্রেটারি সামাদ আজাদ, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ফজলুর রহমান ও সেক্রেটারি ডা. মোহাম্মদ আলী মানিক এবং নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ইমদাদ চৌধুরী কতেক গণমাধ্যমকে এ সব কর্মসূচির কথা নিশ্চিত করেছেন। ওদিকে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস যে হোটেলে অবস্থান করবেন, তার সামনেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রতিদিন অবস্থান কর্মসূচি ও কালো পতাকা প্রদর্শন করার কথাও শোনা গেছে। আবার আগামী শুক্রবার জাতিসংঘে মুহম্মদ ইউনূসের ভাষণের সময়েও সদরদফতরের বাইরে তারা কালো পতাকা প্রদর্শন ও বিক্ষোভ-সমাবেশ করার জন্যও ডাক দিয়েছেন। আবার পরের দিন নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কয়ার সংলগ্ন ম্যারিয়ট মারক্যুস হোটেলে মুহম্মদ ইউনূসের মতবিনিময় অনুষ্ঠানের বাইরেও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামীলীগ দলের নেতাকর্মীরা বলেছেন। তদপুরি, আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বর তারিখ পর্যন্ত আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নিউইয়র্কে অবস্থান করারও নির্দেশনা দেয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ স্থানীয় সময় সোমবার দিবাগত রাতে জেএফকে (নিউইয়র্ক) এয়ারপোর্টে ড. ইউনুসের সফরসঙ্গী এনসিপির সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেনকে ডিম নিক্ষেপকারী আওয়ামী লীগ কর্মী মিজানকে জ্যাকসন হাইটস থেকে নিউইয়র্ক সময় রাত সাড়ে ৯টার হাতে হেন্ডকাপ পরিয়ে গ্রেফতার করে তুলে নিয়ে গেছেন নিউইয়র্ক পুলিশ। Ref: nytimes/ dailyjanakantha/ fb