বৃহস্পতিবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

লাকসাম থেকে নোয়াখালী ৬০ কিঃ মিঃ দীর্ঘ শতবর্ষী ‘বেরুলা খাল’ অরাজকতার কবলে

লাকসাম থেকে নোয়াখালী ৬০ কিঃ মিঃ দীর্ঘ  শতবর্ষী ‘বেরুলা খাল’ অরাজকতার কবলে
৩৩ Views

            আমানত উল্লাহ লিংকন\ দখল ও দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে শত বছরের পুরানো বেরুলা খাল। প্রাচীন এই খালটি ভরাট করে অবৈধভাবে দোকান, বাড়ি-ঘর নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। খালটির কতেক অংশে অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খালটি পুরোপুরি ভরাট হয়ে গেলে হাজার হাজার একর কৃষিজমি ও কৃষকের সর্বনাশ ডেকে আনবে। এই খালটি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও সচেতন মহল।

            স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এ খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ কিলোমিটার। ডাকাতিয়া নদীর একটি শাখা বেরুলা খাল লাকসামের দৌলতগঞ্জ বাজারের দক্ষিণাংশের ফতেহপুর থেকে শুরু হয়ে কুমিল্ল­া-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের পূর্বপাশ দিয়ে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে গিয়ে মিশেছে। গত কয়েক বছরে সড়কের পাশ্ববর্তী লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলার উত্তরদা বাজার, তুগুরিয়া, খিলাবাজার, নাথেরপেটুয়া, বিপুলাসারসহ বিভিন্ন অংশে খালটি দখল করে দোকান ও বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ অবৈধ দখল, দূষন এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারনে খালটির অস্তিত্ব এখন চরম সংকটাপন্ন।

            এছাড়া, বিগত সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে কুমিল্ল­া-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক ফোর লেনে উন্নীতকরন কাজের জন্য খালটির অধিকাংশ ভরাট করা হয়। বাকি অংশ নিকটতম জমির মালিক ও কিছু অসাধু চক্র ভরাট করে দখলে নিয়েছে। এতে এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। সেচ সংকটে পড়েছে কৃষি জমি। বিনষ্ট হয়েছে প্রাকৃতিক মাছের উৎস।

            সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শত বছরের পুরানো এ খালটি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় কেউ নির্মাণ করেছেন টিনের ঘর, কেউ আরসিসি পিলার ঢালাই করে পাকা দোকান। খাল জুড়ে যেন চলছে দখলের প্রতিযোগিতা। একের পর এক দখলে খালটি সংকুচিত হয়ে কোথাও সরু ড্রেনে, আবার কোথাও সেটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

            নাথের পেটুয়া বাজার কমিটির সেক্রেটারি জাফর ইকবাল বাচ্চু বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই খালটি ভরাট করে আসছে প্রভাবশালীরা। গত কয়েক বছরে খালের ওপর দোকান তুলে কেউ নিজেরা ব্যবসা করছেন। আবার কেউ ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে টাকা তুলছেন। প্রশাসনের উচিত খালটি দখল মুক্ত করা।

            বিপুলাসার এলাকার কৃষক আবু জাহের সবুজ বলেন, এক যুগ আগেও আমরা এই খালের পানি দিয়ে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করেছি। এখন আর সেটি সম্ভব হয় না। প্রবীণ কৃষক কাজী আবু তাহের বলেন, এক সময় এই খালটির ওপর নির্ভরশীল ছিলো কুমিল্ল­ার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট এবং নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী ও বেগমগঞ্জ উপজেলার ৩ সহস্রাধিক একর কৃষি জমির আবাদ। বর্তমানে খালের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে গেছে।

            পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি খাল দখল করা দন্ডণীয় অপরাধ। আমরা অতি দ্রæত খালটি দখলুক্ত করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

            মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন রুহি বলেন, কৃষিকে বাঁচাতে হলে প্রবহমান খালের কোনো বিকল্প নেই। আমরা খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখব। খাল রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে।

Share This