শরিক দলগুলোর সব প্রার্থীকে মাঠে থাকার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আহ্বান
ষ্টাফ রিপোর্টার\ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আসন নিয়ে শরিক দলগুলোর সব প্রার্থীকে মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গত ৪ঠা ডিসেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় তিনি ভোট উৎসবমুখর ও প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ করতে শরিক দলের প্রার্থীদের মাঠপর্যায়ে তৎপরতা বাড়ানোর কথাও বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই আপনাদের দলের যারাই প্রার্থী হয়েছেন, সবাই ভোটের মাঠে থাকেন। এতে করে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে। ভোটও উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হবে। তখন পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরাও সহজ হবে। এ জন্য আমি চাই সবাই ভোটের মাঠে থাকুক।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি আমার দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও বসতে বলছি না। তাই আপনারা সবাই অংশ নেন।’
এ সময় জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার জানতে চান, তাহলে আমরা কী বার্তা নিয়ে যাব? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই নির্বাচনে অংশ নেন, আমি তো কাউকে বসতে বলছি না। যে পারবে জিতে আসবে, আপনারা সবাই তো আমার।’
আসন সমন্বয় করে জোটগতভাবে নির্বাচন করার কথা পুনর্ব্যক্ত করে জোটের নেত্রী আরও বলেন, ‘আমরা জোটকে কখনো অস্বীকার করি না। এ জন্য আমি চাই কোন কোন আসন সমন্বয় করতে হবে, তা জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়কের সঙ্গে বসে ঠিক করে নেবেন।’
এছাড়া, বৈঠক সূত্র আরো জানায়, আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আসন সমন্বয়ের দায়িত্ব জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুকে দেয়া হয়েছে। প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে এ বৈঠক চলে। আবার মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, বৈঠকের শুরুতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচন নিয়ে আন্দোলনের নামে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আপনারা জানেন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা নির্বাচন ঠেকাতে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, একটি গোষ্ঠীর মিথ্যা প্রচারণার কারণে বিদেশি শক্তি এখন আমাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিচ্ছে। তারা আরও স্যাংশন দেয়ার ভয় দেখাচ্ছে। সবাইকে এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার হতে হবে।
নির্বাচন বর্জন করায় বামদের সমালোচনা:
বিএনপি-জামায়াতের পথ অনুসরণ করে নির্বাচন বর্জনের পথে হাঁটা বাম দলগুলোর কঠোর সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা এখন স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে এক হয়েছে। ডান-বাম এক হয়েছে। তারা কি একবারও চিন্তা করে না, দেশে নির্বাচন না হলে কী হবে? কারা ক্ষমতায় আসবে? তাদের অবস্থা কী হবে? এসব বিষয় তাদের ভাবা উচিত।’
শক্তি বৃদ্ধি নিয়ে শরিকদের সমালোচনা:
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে দলীয় শক্তি বৃদ্ধি করতে না পারায় শরিক দলগুলোর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় চেয়েছি আপনারা স্বাবলম্বী হোন। নিজেদের দলের শক্তি বৃদ্ধি করেন। আপনারা শক্তিশালী হলে নিজেদের শক্তিতে ভোটের মাঠে জিতে এলে সকলেরই লাভ হতো।’ এ সময় তিনি শরিক দলগুলোকে নিজেদের শক্তি ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন।
আসন নিয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণার দাবি মেনন-ইনুর:
উক্ত বৈঠক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের পর শরিক দলের নেতারা বক্তব্য রাখা শুরু করেন। এ সময় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘শরিক দলের নেতাদের মধ্যে কোথায় কাকে কী দেয়া হবে, তা এখনই ঘোষণা করা ভালো হবে। আর ঝুলিয়ে রাখা ঠিক হবে না। তাই প্রার্থীরা যে যার মতো করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করতে পারবে।’
একই দাবি তোলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তবে কমিটি করে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে আসন সমন্বয়ের প্রস্তাব দেন তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়ে অসন্তোষ:
আসন ভাগাভাগির বিষয়ে ১৪ দলীয় জোট নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নজিবুল বশর। তিনি বলেন, ‘জোট নিয়ে কাদের সাহেবের বক্তব্যে আমরা মর্মাহত হয়েছি, কষ্ট পেয়েছি। তিনি যেভাবে বলেছেন তা না বললেও পারতেন। জোটের নেতারা সব সময় আওয়ামী লীগের পাশে ছিল। আমরা আওয়ামী লীগকে ছেড়ে যাইনি।’
ছাড় পেতে পারেন বর্তমান এমপিদের অনেকে:
জোটের শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের আসনগুলো সমন্বয় করে ছাড় দেয়া হবে বলে দাবি করেছেন জোটের একাধিক নেতা।
জোটের একাধিক সূত্র দাবি করেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি সব প্রার্থীকে মাঠে থাকার আহ্বান জানালেও জোটের শীর্ষ নেতাদের আসনগুলোতে ছাড় দেবেন বলেই আমুকে আসন সমন্বয় করার দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে যারা এমপি আছেন, তাদের সম্ভাবনা বেশি থাকলেও কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন, এমন আভাসও পাওয়া গেছে।
বৈঠকে ১৪ দলের নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, গণতন্ত্রী পার্টির নেতা ডা. শাহদাত হোসেন, ডা. শহিদুল্লাহ শিকদার, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের নেতা রেজাউর রশিদ খান, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. অসীত বরণ রায়সহ আরো অনেকেই।