রবিবার, ১৩ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শাওয়ালের ছয় রোজার তাৎপর্য

শাওয়ালের ছয় রোজার তাৎপর্য

১১ Views

            ড. আবদুল আলীম তালুকদার\ চান্দ্রবর্যের দশম মাস শাওয়াল। মহিমান্বিত মাস রমজানের পরই ফজিলতপূর্ণ মাসগুলোর মধ্যে শাওয়াল অন্যতম। শাওয়াল মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে এ মাসে ছয়টি রোজা রাখা। রমজানের ফরজ রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা মুস্তাহাব। এই রোজার অনেক ফজিলত রয়েছে, যা রসুল (স.)-এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। মহানবি (স.) নিজে এ রোজা আদায় করতেন এবং সাহাবাদেরকেও রোজা রাখার জন্য নির্দেশ দিতেন।

            এ প্রসঙ্গে হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে এটি বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- একদিন রসুলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রসুলাল্লাহ, আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তখন রসুল (স.) বললেন, ‘তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে, কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের ফরজ রোজা রাখো এবং রমজানেরর পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোজা রাখো, তাহলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে (জামে তিরমিজি: ১ম খন্ড, পৃ-১৫৭)।            হজরত আবু আইয়ুুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের ফরজ রোজাগুলো রাখল, অতঃপর শাওয়াল মাসে আরো ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছর ধরেই রোজা রাখল (সহিহ মুসলিম: ১১৬৪)। ‘তাছাড়া হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (স.) বলেন, ‘রমজানের রোজা দশ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা।’ অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে, সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য (মুসনাদে আহমদ, ৫/২৮০; দারেমি: ১৭৫৫)।’

            বস্তুত উপরিউক্ত হাদিসের সঙ্গে পবিত্র কুরআনুল কারিমের একটি আয়াতের মিল রয়েছে; যেমন-মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘কেউ কোনো নেক আমল করলে, তাকে তার দশ গুণ সওয়াব প্রদান করা হবে (সূরা আনআম: ১৬০)।’ রমজানের এক মাসের দশ গুণ হলো ১০ মাস আর শাওয়াল মাসের ছয় দিনের দশ গুণ হলো ৬০ দিন, অর্থাৎ দুই মাস। সুতরাং ৩৬টি রোজায় সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়। তবে এরকম শর্ত থাকলেও শরিয়তসম্মত কারণে রমজানের পূর্ণমাস রোজা রাখেননি, এমন লোকদের শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখাতে বাধা নেই।

            বরং সেক্ষেত্রে নফল রোজার সীমাহীন সাওয়াব তিনি পাবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা মহানবি (স.) বেশিবেশি নফল রোজা নিজে তো রাখতেনই, তার সাহাবিদেরকেও উৎসাহিত করতেন। নফল রোজার মধ্যে আছে সাপ্তাহিক দুই রোজা (সোমবার ও বৃহস্পতিবার), মাসিক তিন রোজা (আইয়ামে বিয তথ্য চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা), পবিত্র আশুরার রোজা, শাবান মাসের রোজা, শাওয়ালের ছয় রোজা, জিলহজ মাসের প্রথম দশকের রোজা, বিশেষ করে ৯ তারিখের রোজার বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করেছেন প্রিয় নবি (স.)।

            মাহে রমজানের ফরজ রোজা রাখার পর পুনরায় রোজা রাখা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার একটি লক্ষণ। যেহেতু মহান আল্লাহ যখন কোনো বান্দার নেক আমল কবুল করেন, তখন তার পরই তাকে আরো নেক আমল করার তওফিক দান করে থাকেন। যেমন মুজতাহিদগণ আরো বলে থাকেন, ‘নেক কাজের সওয়াব হলো, তার পরে পুনঃ নেক কাজ করা (ইতহাফু আহলিল ইসলাম বি আহকামিস সিয়াম, পৃ. নং ৯২)।’ নফল ইবাদতের অধিক গুরুত্ব বর্ণনায় পবিত্র কুরআনে আল্লাহ-তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যখন তুমি (ফরজ) দায়িত্ব সম্পন্ন করবে, তখন উঠে দাঁড়াবে এবং তুমি (নফলের মাধ্যমে) তোমার রবের প্রতি অনুরাগী হবে (সুরা ইনশিরা: ৭-৮)। শাওয়ালের রোজা একত্রে ধারাবাহিক রাখা জরুরি নয়। একত্রে বা ভিন্ন-ভিন্ন উভয়ভাবে আদায় করা যায়। তবে যত দ্রæত আদায় করা যায়, তত কল্যান। তবে দ্রæত আদায় না করলেও কোনো সমস্যা নেই।

            ইমাম নববি (রহ.) বলেছেন, শাওয়ালের ছয় রোজা আদায় করা মুস্তাহাব এবং ধারাবাহিকভাবে একসঙ্গে মাসের শুরুতে আদায় করা মুস্তাহাব। যদি ভিন্ন-ভিন্নভাবে রাখা হয় অথবা শাওয়াল মাস চলে যাওয়ার পরও রাখা হয়, তবুও তা বৈধ হবে। যার ওপর রমজানের রোজা কাজা আছে, সে আগে কাজা সম্পন্ন করবে। তারপর শাওয়ালের রোজা আদায় করবে, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে রমজানের রোজা রাখবে’, অর্থাৎ পুরোপুরি সম্পন্ন করবে। আর যার ওপর কাজা রয়ে গেছে, সে তো রোজা পুরোপুরি সম্পন্ন করেছে বলে গণ্য হবে না, যতক্ষণ সেই কাজা আদায় না করে (ইবনে কুদামাহ, আল-মুগনি, ৪/৪৪০)।’

            তাছাড়া ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বেরও দাবিদার। অতএব, ঈদুল ফিতরের দিনটি বাদ দিয়ে মাসের যে কোনো ছয় দিন রোজা রাখলেই উল্লিখিত সওয়াব লাভ করা যাবে। আর যাদের কাজা রোজা রয়েছে, বিশেষ করে অসুস্থতা কিংবা নারীদের হায়েজ-নেফাসের কারণে রমজানের রোজা অপূর্ণ থাকতে পারে, তাদের জন্য করণীয় হলো শাওয়াল মাসে তাদের কাজা রোজাগুলো আগে পূর্ণ করে নিতে হবে। তারপর তারা শাওয়ালের ছয় রোজা পালন করবে।

            লেখকঃ সহযোগী অধ্যাপক (ইসলামিক স্টাডিজ), শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ, শেরপুর

Share This

COMMENTS