সম্পাদকীয় বেসরকারি চিকিৎসা সেবায় নৈরাজ্য


সরকারি হাসপাতালের দুর্ভোগ এড়াতে এবং দ্রæত চিকিৎসা পাওয়ার আশায় বেসরকারি হাসপাতালে ভিড় করে সব শ্রেণির মানুষ। উদ্বেগজনক হলো, বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের নাভিশ্বাস উঠেছে; অনেকে জমিজমা বিক্রি করে চিকিৎসা-ব্যয় মেটাচ্ছেন। বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফিসহ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা-ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে ওষুধের কাঁচামাল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে দু’বছর ধরে বিভিন্ন সেবার দাম দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে। চিকিৎসাসেবার মূল্য নির্ধারণে জাতীয় মানদন্ড বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন না থাকায় এবং নজরদারির অভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিতে যাওয়া রোগীদের অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে। এদিকে চিকৎসাসেবা নিতে সেবাকেন্দ্রে আসা-যাওয়ায় পরিবহণ ভাড়াবাবদ রোগী ও তাদের স্বজনদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। সেবার ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে অনেকে পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগে মাঝপথে চিকিৎসা নেয়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে।
জানা গেছে, চিকিৎসাপ্রার্থীদের ৬০ শতাংশেরও বেশি অর্থ ব্যয় হয় ওষুধের পেছনে। বাকি অর্থ রোগ নির্ণয় বা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসক দেখানো, হাসপাতালে ভর্তি এবং অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সেবা নেয়ার পেছনে ব্যয় হচ্ছে। এদিকে ডলার সংকটে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে গত দু’বছরে অত্যাবশ্যকীয় ৯০ শতাংশের বেশি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে প্রথম প্রজ্ঞাপন দিয়ে ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়। এর পাঁচ মাসের মধ্যে ডিসেম্বরে দ্বিতীয়বার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২৪টি ওষুধের দাম বাড়ায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে একদিকে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে, অন্যদিকে জীবন রক্ষায় প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম শুধু বেড়েই চলেছে। জানা যায়, নতুন করে দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে ওষুধ শিল্প সমিতি, যা মোটেই কাম্য নয়।
মানুষ যাতে সহজে সরকারি হাসপাতালের সেবা পেতে পারে, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। বস্তুত চিকিৎসা খাতে মানুষের ব্যয় না কমলে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হুমকির মুখে পড়বে, যা দেশের টেকসই উন্নয়নেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।