শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সাধারণের জীবনে নাভিশ্বাস

বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্য উচ্চমূল্যে স্থির। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শ্রমজীবীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। চাল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, তেলসহ প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম এখন আকাশছোঁয়া। সব মিলিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এ বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে চলে যায় আয়ের বেশির ভাগ টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে জীবিকার তাগিদে শহরাঞ্চলে বসবাস করা সীমিত আয়ের মানুষের বাসা ভাড়া পরিশোধ, যাতায়াত ব্যয় সঙ্কুলান এবং খাদ্যপণ্য জোগানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বাস্তবে শহরাঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকায় বসবাসরত স্বল্প আয়ের মানুষ আয়-ব্যয়ে সমন্বয় করতে পারছেন না। ফলে ঢাকা ছাড়ছেন হাজারো মানুষ যদিও রাজধানীতে চোখধাঁধানো উন্নয়ন হচ্ছে যেমন- ফাইওভার-মেট্রোরেল। এসবের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র। এক কথায় বলা যায়, বর্তমানে ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে বসবাস করা নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অবস্থা শোচনীয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক সমীক্ষায় দেখা যায়, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাসা ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪শ’ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২শ’ শতাংশ। অন্য এক জরিপ বলছে, রাজধানীর ২৭ ভাগ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ ভাগ ভাড়াটিয়া প্রায় ৫০ শতাংশ, ১২ ভাগ আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাসা ভাড়া মানে আবাসন খাতে। মহানগরের বাসা ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিটি পণ্যের মূল্য এখন লাগামহীন। প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেশি। অথচ বেশির ভাগ কর্মজীবী মানুষের আয় কমে গেছে।
কিন্তু সরকারের বয়ান, গত দেড় দশকে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। অথচ এ মুহূর্তে সাধারণ মানুষের ত্রাহি অবস্থা। নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান দামে শহরাঞ্চলে বসবাসরত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবন চলছে নিদারুণ কষ্টে। নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে সংসারের খাবার জোগাতে সাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে। তাদের ব্যয় বাড়লেও, বাড়ছে না আয়। আর উপার্জনহীনের জীবনে নেমে এসেছে মহাদুর্যোগ। ফলে বাসা ভাড়া ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, পানিসঙ্কট, যাতায়াত ও ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ কুলিয়ে উঠতে না পেরে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের অনেকে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। করোনাকালের মতো যে অনেক মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন তার নমুনা হলো- ঢাকার প্রায় সব এলাকার বাসায় বাসায় ঝুলছে ‘টু-লেট’।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, দেশে গরিবের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। রাজধানীতে বসবাসকারী মধ্যবিত্তদের বড় অংশ ক্রমান্বয়ে নিম্নবিত্তের কাতারে নেমে যাচ্ছে।
জীবন ধারণের জন্য খাদ্য অত্যাবশ্যক, আবার সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চাই নিরাপদ পুষ্টিমানসম্পন্ন ও সুষম খাবার। করোনার সময় অনেকে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। করোনা-পরবর্তী সময় থেকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সঙ্গত কারণে বলা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে একসময় দরিদ্র জনগোষ্ঠী যথাযথ খাবার কিনতে পারবেন না। অবশ্য, এখনই অনেকে তা পারছেন না। অনেকে সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন।
এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, উন্নয়নের জোয়ার বইছে চারদিকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এমন উন্নয়ন দিয়ে কী হবে, যদি সাধারণ মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো খেতে না পান। এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের উচিত বাজার তদারকি বাড়ানো। পাশাপাশি মানুষের আয়-রোজগার যাতে বাড়ে; সে ধরনের অর্থনৈতিক কর্মসূচি হাতে নেয়া যাতে বাড়তি আয় নিশ্চিত করা যায়।

Share This

COMMENTS