শুক্রবার, ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ গ্রামের মানুষের যাতায়াতে একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো

৬ গ্রামের মানুষের যাতায়াতে একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো

Views

            নিজস্ব প্রতিনিধি\ কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলার রঘুনাথপুর থেকে কালিপুর যাওয়ার পথে খালের ওপর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ৬ গ্রামের মানুষকে সারাবছর বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। নিজেদের উদ্যোগে সাঁকো নির্মাণ হলেও পাকা সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। চার বছর আগে একটি সেতু বরাদ্দ হলেও ঠিকাদারের অনীহায় তা অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এ এলাকার মানুষ।

            সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়নের রঘুনাথপুর আনন্দ বাজার থেকে দানু মুন্সীর বাড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তা রয়েছে। এরপর গ্রামসংলগ্ন খাল। খালের ওপর বাঁশের সাঁকো। সাঁকোটি সারাবছর ব্যবহৃত হয় বিধায় বাঁশ বিছিয়ে বাঁধানো হয়েছে। এটি দিয়েই মূলত কালিপুর, দড়িকান্দি, মানিককান্দি ও হাইধরকান্দি গ্রামের শতশত লোক প্রতিদিন আনন্দ বাজারে আসে। এ পথেই তাদের আসতে হয় আসমানিয়া বাজারে। বিশেষ করে খলিলাবাদ, রঘুনাথপুর, রঘুনাথপুর নয়ানী ও রঘুনাথপুর সাতানী গ্রামের লোকজন যাতায়াতসহ মাঠ থেকে ফসল আনার ক্ষেত্রে সাঁকোটি ব্যবহার করে থাকেন। কালিপুর ও রঘুনাথপুর গ্রামবাসীর যৌথ উদ্যোগে প্রতি বছর সাঁকোটি মেরামত করা হয়। এ কাজে ব্যয় হয় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।

            উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গ্রামীণ রাস্তায় কম-বেশি ১৫ মি. দৈর্ঘ্যের সেতু/কালর্ভাট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় রঘুনাথপুর আনন্দ বাজার রাস্তার দানু মুন্সির বাড়ির উত্তর পাশে খালের ওপর ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ অনুমোদন পায়। ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০ লাখ ৭০ হাজার ৯৪৮ টাকা। তাৎকালীন সেখানে পানি থাকায় ঠিকাদার সেতুটি নির্মাণে অনীহা প্রকাশ করেন। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সভার মাধ্যমে সেতুটির নির্মাণ স্থান পরিবর্তন হয়। পরে সেতুটি একই ইউনিয়নের মানিককান্দি মোল্লা বাড়ি এতিমখানা সংলগ্ন ভরা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়।

            কালিপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আজগর আলী বলেন, কালিপুর গ্রামে কোনো হাইস্কুল নেই। শিক্ষাগ্রহণের জন্য ছেলে-মেয়েদের যেতে হয় ছালিয়াকান্দি বাজার অথবা আসমানিয়া বাজারে। এই দু’টি বাজারে যেতে হলে আমাদের সাঁকোটি ছাড়া কোনো উপায় নেই।

            স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সালাহউদ্দিন বলেন, চার বছর আগে এখানে সেতু বরাদ্দ হয়েছিল। পরে সেতুটি অন্য স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। কালিপুর ও তার আশপাশের লোকজনের যাতায়াতের কষ্ট আর লাঘব হলো না। সেতু নির্মাণের কোনো অগ্রগতি নেই।

            রঘুনাথপুর গ্রামের আম্বিয়া বেগম বলেন, রঘুনাথপুর ও কালিপুর গ্রামের মধ্যে আমাদের অনেক আত্মীয় রয়েছে। একে-অপরের প্রয়োজনে এ গ্রাম থেকে ওই গ্রামে যেতে হয়। অনেক জায়গায় ব্রিজ হয়েছে। এখানে হয় না। আমাদের কষ্ট করে সাঁকো পার হয়ে যেতে হয়।

            কালিপুর গ্রামের ডা. রমিজ উদ্দিন বলেন, মানিককান্দি, দড়িকান্দি ও হাইধরকান্দি লোকজন যদি রঘুনাথপুর বা খলিলাবাদ আসতে চায় তাহলে তারা এ সাঁকোটি ব্যবহার করে। সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে বৃদ্ধ ও মহিলাদের যাতায়াত করতে হয়।

            উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, এটি মূলত গ্রামীণ রাস্তা। তবে এলজিইডির আওতাভুক্ত নয়।

            উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। সরেজমিন কালিপুর গ্রামে গিয়ে বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

            উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমাইয়া মমিন বলেন, সরেজমিন স্থানটি পরিদর্শন করে এলাকার সুশীল প্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Share This

COMMENTS