৫ বছরেও শেষ হয়নি চৌদ্দগ্রামে ডাকাতিয়া নদীর ওপর আকদিয়া ব্রীজের নির্মাণ কাজ


মোঃ এমদাদ উল্যাহ\ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ডাকাতিয়া নদীর উপর ৮১ মিটার দীর্ঘ আকদিয়া ব্রীজের নির্মাণ কাজ দীর্ঘ ৫ বছরেও শেষ না হওয়ায় জনগনের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। সম্ভাবনার আশা দেখিয়ে পুরাতন ব্রীজ ভেঙ্গে নতুন ব্রীজ নির্মাণের প্রকল্প পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করেছে দু’পাড়ের কয়েক হাজার বাসিন্দাদের। উপজেলার গুনবতী ইউনিয়নের চাপালিয়াপাড়া অংশে ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মানাধীন ব্রীজটির ঠিকাদার পরিবর্তন করা হলেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি জনগনের। বছরের পর বছর ভেলা নৌকা ভাড়া দিয়ে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় কমেছে আগ্রহ। বন্ধ হয়েছে অনেকের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া।
জানা গেছে, গুনবতী ইউনিয়নের ডাকাতিয়া নদীর দক্ষিণ পাড়ের আকদিয়া, বান্দেরজলা, আবুপুর, উত্তর পাড়ের চাপালিয়াপাড়া ও বুধড়ার মানুষের ডাকাতিয়া নদীর উপর দিয়ে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম আকদিয়া ব্রীজ। ২০০০ সালের মার্চে ৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় চুক্তিতে ব্রীজটির নির্মাণ কাজ পায় সাবেক রেলমন্ত্রীর ভাতিজা তোফায়েল আহমেদ এর প্রতিষ্ঠান মেসার্স পলি এন্টারপ্রাইজ। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে মাত্র ২০ শতাংশ কাজ করে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রাখলে তার পরের মাসে এলজিইডি চুক্তিটি বাতিল করে। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা নতুন দরপত্র চুক্তিতে কাজ পায় মেসার্স আমিন ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু নতুন ঠিকাদারও গত ৯ মাসে করতে পারেননি উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নদীর পাড়ে অপেক্ষামান নৌকা ও যাত্রী। ওই এলাকার মানুষের এখন যাতায়াতের বাহন নৌকা। ভাড়ায় যাতায়াত করেন স্কুল শিক্ষার্থীসহ সবাই। আছে জরুরী রিজার্ভ যাওয়ার সুযোগ।
স্থানীয় বুধড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ শরীফ জানায়, গত দুই বছর বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার সময় দৈনিক ২০ টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করছি।
গুনবতী আল-ফারাবী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী রোকসানা বলেন, অনেক দূর হেঁটে আসি, কিন্তু নদী পারাপারে গুনতে হয় ভাড়া। টাকা থাকলে বিদ্যালয়ে যাই, না থাকলে যাইনা। এভাবেই গত ৪ বছর পড়াশোনা চলছে।
বছরের পর বছরের ভোগান্তির কথা জানাতে গিয়ে আকদিয়া গ্রামের গৃহবধূ সালমা বলেন, রাতের বেলায় বিপদে পড়লে মাঝিদেরকে বাড়িতে গিয়ে বাড়তি টাকা চুক্তিতে পা ধরে আনতে হয়।
ঘাঁটের মাঝি সোলেমান বলেন, রাত ৯টা পর্যন্ত ঘাঁটে থাকি। অনেক সময় গভীর রাতে রোগী নিয়ে আসা স্বজনরা বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন ইন্টারন্যাশনাল এর মালিক মোঃ আমিন বলেন, ‘আমি কাজ পাওয়ার পর অনেক কাজ করেছি। বর্ষায় পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে। পানি কমে গেলে কাজ শুরু হবে।’
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, ‘সময়মত কাজ না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পলি এন্টারপ্রাইজকে ৬৮ লাখ টাকা জরিমানা করে কাজ বাতিল করা হয়। এরপর নতুন দরপত্রে আমিন ইন্টারন্যাশনাল কাজ পায়। ইতোমধ্যে তারা কাজ শুরু করেছে। পানি কমে গেলে ঠিকাদার কাজটি করে দিবেন’। -কুমিল্লার কাগজ